বাঙ্গালী
Saturday 20th of April 2024
0
نفر 0

সুখ এবং দুঃখ এ দুটোই আল্লাহর পরীক্ষা

সুখ এবং দুঃখ এ দুটোই আল্লাহর পরীক্ষা

পবিত্র কোরআনের সূরা হুদের ৯ ও ১০ নং আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্ববুল আলামিন বলেছেন,

وَلَئِنْ أَذَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنَّا رَحْمَةً ثُمَّ نَزَعْنَاهَا مِنْهُ إِنَّهُ لَيَئُوسٌ كَفُورٌ (9) وَلَئِنْ أَذَقْنَاهُ نَعْمَاءَ بَعْدَ ضَرَّاءَ مَسَّتْهُ لَيَقُولَنَّ ذَهَبَ السَّيِّئَاتُ عَنِّي إِنَّهُ لَفَرِحٌ فَخُورٌ

‍‍‍‍"যদি আমি মানুষকে আমার নিকট হতে অনুগ্রহের আস্বাদ করাই এবং পরে তা হতে তাকে বঞ্চিত করি তখন সে হতাশ ও অকৃতজ্ঞ হয়। দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করার পর যদি আমি তাকে অনুগ্রহের আস্বাদ করাই তখন সে বলে থাকে আমার বিপদ কেটে গেছে, আর সে উৎফুল্ল ও অহংকারী হয়ে উঠে।"

এই আয়াতে মানুষের মন-মানসিকতার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। মানুষ সাধারণত সুখ ও স্বাচ্ছন্দের মধ্যে অনেকটা উদ্ধত ও বেপরোয়া হয়ে উঠে। তখন মানুষ ভুলে যায় এই সুখ-শান্তি স্থায়ী নাও হতে পারে এবং যে কোন সময়, যে কোন উপায়ে এর উল্টো পরিণতি জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলতে পারে। অপরদিকে দুঃখ ও দুর্দশায় নিপতিত হলে মানুষ অধৈর্য ও হতাশ হয়ে পড়ে। এ দুটোই আল্লাহর পরীক্ষা।

এই দুই পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করে থাকেন। তাই সুখ-শান্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি আর দুঃখ-দুর্দশা আল্লাহর রোষ ও অসন্তুষ্টির ফল সব ক্ষেত্রে এমন মনে করা ঠিক নয়। এছাড়া এই আয়াতে পার্থিব জগতের একটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ সুখ-শান্তি এবং দুঃখ-দুর্দশা কোনটিই স্থায়ী নয়। আজকের সুখ ক্ষনিকের মধ্যে দুঃখে পরিণত হতে পারে, আবার কোন দুঃখী মানুষের জীবন সুখে ভরপুর হয়ে উঠতে পারে। কাজেই জীবনের চিত্র সব সময় দুই ধরনের। কখনো প্রকৃতির পক্ষে, কখনো বিপক্ষে অবতীর্ণ হয়। তাই ইসলামের উপদেশ হচ্ছে সুখ ও সমৃদ্ধি যেন কাউকে উদ্ধত অহংকারী না বানিয়ে ফেলে সে দিকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। আবার বিপদ আপদের সময় ধৈর্য ধারণ করতে হবে। কারণ মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ দু’ভাবেই মানুষকে পরীক্ষা করে থাকেন।

ধৈর্য সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনের একই সূরার অন্য এক আয়াতে বলেছেন,

إِلَّا الَّذِينَ صَبَرُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَئِكَ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ

"কিন্তু যারা ধৈর্যশীল ও সৎকর্মপরায়ন তাদেরই জন্য আছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।" (সূরা হুদ,আয়াত নং- ১১)

 

প্রকৃতপক্ষে যারা ধৈর্যশীল তারাই সৌভাগ্য লাভ করতে সক্ষম হয়, যারা গর্ব-অহংকারে উন্মত্ত কিংবা যারা হতাশায় নিমজ্জিত তাদের অর্জন অত্যন্ত নগণ্য। তবে এই ধৈর্য ও সংযম হতে হবে ঈমানী শিক্ষার আলোকে। আল্লাহর প্রতি অগাধ ও অকৃত্রিম বিশ্বাসের মাধ্যমে যে ঈমান অর্জিত হয় তাই ফল বয়ে আনে। তা না হলে অনর্থক ধৈর্য বয়ে আনতে পারে দুর্ভোগ ও দুর্বিসহ এক জীবন। পবিত্র কুরআনের সব জায়গায় ঈমান ও সৎকর্ম পাশাপাশি এসেছে। সব জায়গায় দেখা যাবে ঈমান গ্রহণের পর আমালে সালিহাত বা সৎকর্মের কথা বলা হয়েছে। শুধু এই একটি স্থানেই সাবর ও আমালে সালিহাতকে অর্থাৎ ধৈর্য্যের পাশাপাশি সৎকর্মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, ঈমানী শক্তি ছাড়া ধৈর্যশীলদের স্তরে উপনীত হওয়া যায় না। ঈমান নির্ভর ধৈর্য অত্যন্ত মনোরম ও আনন্দদায়ক। কারণ এর পেছনে রয়েছে ঐশী পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি। একজন ঈমানদার মুসলমানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তিনি যে কোন পরিস্থিতিতে ধৈর্যশীল হবেন এবং সৎকাজে নিজেকে নিয়োজিত করবেন।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মানুষের দূরদর্শীতা ও ধারণ ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। ফলে সামান্য আঘাতেই মানুষ আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামতের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে পড়ে। এটা মনে রাখতে হবে যে, সুখ-সমৃদ্ধি এবং নেয়ামত হচ্ছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কৃপার ফল। এটা মানুষের অধিকার নয়। মহান আল্লাহ বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের মানুষকে এই অনুগ্রহ দান করে থাকেন। কাজেই আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করার পর এ জন্য বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা উচিত।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

শিয়া মুসলমানরা কত ওয়াক্ত নামাজ ...
অষ্ট্রেলিয়ান নও-মুসলিম সুসান ...
শিয়া-সূন্নীর মধ্যে পার্থক্য কি?
সূরা আত তাওবা;(৬ষ্ঠ পর্ব)
আহলে সুন্নতের দৃষ্টিতে ...
সূরা রা’দ; (১ম পর্ব)
ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রমের মর্যাদা ...
মিথ্যা কথা বলা
আল্লাহ্‌ কেন শয়তানকে সৃষ্টি ...
মুসলমানদের প্রথম কিবলা ...

 
user comment