বাঙ্গালী
Friday 19th of April 2024
0
نفر 0

নৈতিকতা,ধর্ম ও জীবন: ২য় পর্ব

নৈতিকতা,ধর্ম ও জীবন: ২য় পর্ব

বর্তমানে বৈষয়িক স্বার্থের কাছে নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দেয়ার ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটছে। হিউম্যানিজম বা মানবতাবাদের মোড়কে ধর্ম ও নীতি-নৈতিকতাকে ধ্বংসের প্রক্রিয়া চলছে দীর্ঘ দিন ধরেই। যেমন ধরুণ- ‘ধর্মহীনতা’ শব্দটার প্রতি সাধারণ মানুষের একধরণের বক্রদৃষ্টি আছে। তাই ধর্মবিরোধীরা এখন আর এ ধরনের শব্দগুলো খুব বেশি ব্যবহার করেন না। তারা ধর্মের বিরোধিতা করার ক্ষেত্রেও কৌশল অবলম্বন করে। এ ধরনেরই একটি কৌশলী শব্দ হলো-‘হিউম্যানিজম’ বা ‘মানবতাবাদ’। আধ্যাত্মিকতা ও নীতি-নৈতিকতাকে সমূলে ধ্বংস করতেই হিউম্যানিজমের মতো নানা লোভনীয় মোড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে।
 
 
বর্তমানে আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি যখন নৈতিক অবক্ষয় ও মূল্যবোধের পতন কেবল পাশ্চাত্যের দেশগুলোতেই ঘটছে না বরং মুসলিম দেশগুলোতেও এ ধরনের প্রবণতা বাড়ছে। পাশ্চাত্যের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সংকট এখন এমন অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, পরিবার ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তোলা হচ্ছে এবং মায়া-মমতা, ভালোবাসা ও সহানুভূতির মতো গুণাবলী চরমভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে। সমাজে মানুষের মাঝে উদাসিনতা বাড়ছে এবং মানবীয় মুল্যবোধগুলো ভুলতে বসেছে। আধ্যাত্মিক মূল্যবোধগুলো ভোগবাদের স্রোতে ভেসে যেতে বসেছে। ভোগবাদের ভয়াল এ স্রোত যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে মানব জাতির জন্য আরো অনেক বড় সমস্যার সৃষ্টি হবে। এ অবস্থায় মানুষের মুক্তির উপায় হলো, ধর্ম ও নীতি-নৈতিকতার দিকে প্রত্যাবর্তন। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যেমনটি বলেছেন, উন্নত নৈতিক গুণাবলীকে পূর্ণতা দেয়াই তার আগমনের উদ্দেশ্য। তিনি নিজের কথা ও কাজের মাধ্যমে মানুষের জন্য মুক্তির পথ দেখিয়ে দিয়েছেন।
 
 
পাশ্চাত্যে নৈতিক অবক্ষয়ের নানা কারণ রয়েছে। এর একটা প্রধান কারণ হলো- রেনেসাঁর পর হিউম্যানিজমের বিস্তার। হিউম্যানিজমে মানুষই হলো সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু বা মানদণ্ড। মানুষই বিশ্বের সব ক্ষমতার অধিকারী। হিউম্যানিজমে ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি কোনো রকম গুরুত্ব দেয়া হয় না। ব্যক্তিগত অধিকারই সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়। এই মতবাদে আল্লাহর সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের বিষয়টিকে গুরুত্বই দেয়া হয় না। মানুষের ব্যক্তিগত অধিকারকে সব কিছুর ওপর এমনকি সামাজিক অধিকারের ওপরও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। হিউম্যানিজম বা কথিত মানবতাবাদ পাশ্চাত্যের ভোগবাদকেই উস্কে দিচ্ছে। ফরাসি চিন্তাবিদ ও গবেষক র্যা নে গ্যানোন তার ‘নয়া বিশ্বের সংকট’ নামক বইয়ে হিউম্যানিজম সম্পর্কে লিখেছেন, রেনেসাঁর যুগে একটি শব্দ খুব গুরুত্ব পেয়েছে। আর সেটি হলো, হিউম্যানিজম। যে মতবাদে মানুষকেই সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু বলে মনে করা হয়। রেনেসাঁর সময় প্রচলিত এ শব্দটি আসলে অনেক কিছুর অপমৃত্যু ঘটিয়েছে।
 
 
ইরানের চিন্তাবিদ মাহমুদ হাকিমি ‘অসুস্থ্য পাশ্চাত্য’ শীর্ষক প্রবন্ধে হিউম্যানিজম সম্পর্কে লিখেছেন, আধ্যাত্মিকতাকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রযুক্তি ও শিল্প ক্ষেত্রে যে উন্নয়ন করা হয়েছে, তা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যকে দুর্দশার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। আমরা এমন এক শতাব্দীতে বাস করছি, যখন যন্ত্রের মোকাবেলায় মানুষকে অত্যন্ত গুরুত্বহীন হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। বিশাল এই উৎপাদন কাঠামোয় মানুষ যেন সামান্য নাট-বল্টুর মতো। নিঃসন্দেহে মানুষ সম্পর্কে এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা এবং মানবিক ও নৈতিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে উপেক্ষা করার প্রবণতা মানব জাতির জন্য বড় আঘাত। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে নিশ্চিতভাবেই মানবতা চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।
 
 
ইরানি চিন্তাবিদ মাহমুদ হাকিমি আরো লিখেছেন, পাশ্চাত্যের একটি সাময়িকী আমেরিকায় পতিতাবৃত্তি বেড়ে যাবার কারণ উল্লেখ করেছে। শয়তানি তৎপরতা আমাদের গোটা বিশ্বকেই গ্রাস করেছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর সমাজে অশ্লীল সাহিত্য ও সিনেমা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সিনেমাগুলো যৌন উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। নারীদের পোশাক-পরিচ্ছদেও নৈতিক অবক্ষয়ের বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠছে।
 
 
বাস্তবতা হলো, পাশ্চাত্য বৈষয়িক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধন করার পর গুরুত্বপূর্ণ এক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ও শিল্প ক্ষেত্রে উন্নয়নের গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এসবই এক ধরনের যন্ত্র। এসবই ব্যবহৃত হতে হবে মানুষের খেদমতে। মানুষ যদি যন্ত্রের সেবা করতে শুরু করে, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। মানুষের কল্যাণে ও মানুষের নীতি-নৈতিকতা পূর্ণ করতে এসবকে কাজে লাগাতে হবে। মানুষকে আজ যন্ত্রে পরিণত করা হচ্ছে।  মুনাফা লাভ ও ভোগবাদের দাসে পরিণত করা হয়েছে। এ সম্পর্কে পাশ্চাত্যের চিন্তাবিদ রবার্ট হেতশেন্স বলেছেন, যদিও প্রযুক্তিসহ বৈষয়িক জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে এবং মানুষ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে অনেক সাফল্য পেয়েছে, কিন্তু দুঃখজনক ভাবে  আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে চরম অবনতি ঘটছে।
 
 
জার্মানির মনোবিজ্ঞানী এরিক ফ্রোম এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমরা পাশ্চাত্যে বিশেষকরে আমেরিকায় পরিচয় সংকটের সম্মুখীন হয়েছি। কারণ বাস্তবতা হলো, শিল্পোন্নত সমাজে মানুষ এখন জড় বস্তুতে পরিণত হয়েছে এবং জড় বস্তুর কোনো আত্মপরিচয় নেই। পাশ্চাত্য সভ্যতা এখন এমন এক পথে এগোচ্ছে যে, বস্তুবাদ তথা জড় বস্তুর প্রতি আকর্ষণ দিন দিন বাড়ছে। এর ফলে সুস্থ জীবন-যাপনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।(রেডিও তেহরান)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনা : একটি ...
Protest einer Antikriegsgruppe gegen Luftangriff Amerikas auf ein Krankenhaus
খলিফা নির্বাচনের পদ্ধতি
‘বাতিলের মুকাবিলায় ঐক্যই ...
অর্থসহ মাহে রমজানের ৩০ রোজার দোয়া
কোরআন ও চিকিৎসা বিজ্ঞান
শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস (পর্ব-১)
সূরা ইউনুস;(১৭তম পর্ব)
মহানবী (স.) হতে বর্ণিত ৪০টি হাদীস (২)
পরকালের জন্য প্রস্তুতি এবং ...

 
user comment