বাঙ্গালী
Thursday 25th of April 2024
0
نفر 0

কারবালা যুদ্ধের নায়কদের করুণ পরিণতি

কারবালা যুদ্ধের নায়কদের করুণ পরিণতি

কারবালার যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে করুণ ও হূদয়বিদারক ঘটনা । ৬১ হিজরী মোতাবেক ১০ই মহররম কারবালার ময়দানে ইমাম হোসাইন (রা.) ও ইয়াজিদ বাহিনীর মধ্যে এ অসম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই ঘটনার নেপথ্যে যারা কাজ করছে তারা ইতিহাসের পাতায় ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে পরিচিত হয়ে আছে।
 
ইমাম হোসেন (রা.) ও তাঁর পরিবারবর্গ শাহাদাতের পরপরই ঐসব নেপথ্য নায়কদের করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে।

ইয়াজিদ
ইমাম হোসাইনের শাহাদাতের ঘটনার মূল নায়ক ইয়াজিদ। ইয়াজিদের নির্দেশেই কারবালা প্রান্তরে ইমাম হোসেনকে শহীদ করা হয়। কারবালার যুদ্ধের পর মুসলিম দুনিয়ায় বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠলো। বিশেষ করে মক্কা-মদীনার অধিবাসীগণ ইয়াজিদের এহেন কুকর্মের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে লাগল। ইতোমধ্যে ইয়াজিদ বাহিনী মক্কা-মদীনা আক্রমণ করে বহুসংখ্যক লোককে শহীদ করল। ইয়াজিদ এক অজ্ঞাত রোগে মারা যায়। তার অনুসারীরা রাতের আঁধারে অজ্ঞাত স্থানে কবর দিয়াছিল। আজ পর্যন্ত কেউ ইয়াজিদের কবরের সন্ধান পায়নি। ইয়াজিদের মৃত্যুর পর তার ছেলের হাতে লোকেরা বাইয়াত গ্রহণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করল। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি। এরপর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ৪০ দিন পর মারা যায়।

মুখতার সাকাফীর যথার্থ প্রতিশোধ গ্রহণঃ
ইয়াজিদের মৃত্যুর পর মারওয়ান ক্ষমতা দখল করল। এর পরপরই মক্কা-মদীনা ও কুফাসহ সমগ্র আরব বিশ্বে বিদ্রোহ চরম আকারে দেখা দিল। কুফাবাসীরা বেশি অনুতপ্ত ছিল। কেননা তাদের বিশ্বাস-ঘাতকতার ফলে এহেন হূদয়বিদারক ঘটনা ঘটল। তারা ভাবল, কিভাবে এর প্রায়শ্চিত্ত করা যায়। কুফার গভর্ণর ইবনে যিয়াদ পালিয়ে দামেস্কে চলে যায়। মুখতার সাকাফী কুফার গভর্ণরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুখতার সাকাফী ইমাম হোসাইনের শাহাদাতের বদলা নেয়ার জন্য ডাক দিলো। সাথে সাথে সমগ্র কুফাবাসী তার আহবানে সাড়া দিল। শুরু হলো প্রতিশোধ নেয়ার পালা।

১. আমর বিন সাদ ও তার ছেলেঃ সর্ব প্রথম সেই নরাধম, পাপিষ্ঠ আমর বিন সাদকে তলব করা হলো, যে ইয়াজিদের বর্বর বাহিনীর সেনাপতি ছিল এবং তারই পরিচালনায় কারবালায় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তার ছেলে এসে বলল, আমার পিতা এখন সবকিছু ত্যাগ করে নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করছে। তিনি ঘর থেকে বের হন না। সাকাফী কোন অজুহাত গ্রহণ করলেন না। তারপর তাকে ধরে এনে পিতা-পুত্রের মাথা কেটে মদীনা শরীফে মুহাম্মদ বিন হানফিয়ার কাছে পাঠিয়েছিল।
২. হাওলা বিন ইয়াজিদঃ হাওলা বিন ইয়াজিদ ইমাম হাসানের মস্তক দেহ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে তার নিজের ঘরে নিয়ে গিয়েছিল। তাকে ধরে এনে হাত-পা কেটে শূলে চড়ানো হলো। তার লাশ জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল।
৩. শিমারঃ এই শিমার ইমাম হোসেনের গলায় ছুরি চালিয়েছিল। মুখতার সাকাফী যখন ইমাম হোসেন (রা.)-এর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারী এক একজনকে হত্যা করছিল তখন পাপিষ্ঠ শিমার কুফা থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল। এ পাপিষ্ঠের শেষ রক্ষা হয়নি। সে মুখতার সাকাফীর বাহিনীর হাতে ধরা পড়ল। তাকে দু’ টুকরা করে মুখতার সাকাফীর কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং লাশ কুকুরকে খাওয়ানো হয়েছিল।
৪. হাকিম বিন তোফায়েলঃ এই নরাধম, যে হযরত আব্বাস (রা.)-এর শরীর থেকে পোশাক খুলে নিয়েছিল এবং ইমাম হোসাইনের প্রতি তীর নিক্ষেপ করেছিল, তাকেও হত্যা করা হয়েছিল এবং তার মাথা বর্শার অগ্রভাগে উঠিয়ে মুখতার সাকাফীর সামনে আনা হয়েছিল।
৫. যায়েদ বিন রেকাতঃ এই জালিম, যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুসলিম ইবনে আকিল (রা.)-এর কপালে তীর নিক্ষেপ করেছিল। তাকে ধরে এনে জীবিত জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল।

৬. আমর বিন সবীঃ এই আমর বিন সবী, যে গর্ব করে বলে বেড়াত ‘‘আমি হোসাইনের কোন সাহাবীকে হত্যা করার সুযোগ পাইনি বটে, কিন্তু তীর নিক্ষেপ করে অনেককে যখম করতে সক্ষম হয়েছিলাম। একে ধরে সকলের সামনে বর্শার আঘাতে হত্যা করা হয়েছিল।
৭. নরাধম ইবনে জিয়াদের করুণ পরিণতিঃ ইয়াজিদের পর এই নরাধম ইবনে জিয়াদ সবচেয়ে জঘন্য অপরাধী। কারবালার ঘটনার সময় এই ব্যক্তি কুফার গভর্ণর ছিল।

মুখতার সাকাফী এই নরাধমকে হত্যা না করা পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। সে ইব্রাহিম বিন মালেক আলতাবকে এক বিরাট সৈন্যবাহিনী ইবনে জিয়াদকে পরাস্ত করার জন্য প্রেরণ করল। ‘মুসল’ শহরের নিকটে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। এ যুদ্ধে ইবনে জিয়াদের বাহিনীর পরাজয় ঘটে। ইবনে জিয়াদ পলায়নকালে ইব্রাহিম মালেকের সৈন্যবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। ইব্রাহিম মালেককে সৈন্যরা ইবনে জিয়াদের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। দেহ আগুনে পুড়িয়ে দেয়। মাথা বর্শার অগ্রভাগে তুলে কুফায় নিয়ে আসে। তখন সাকাফী কুফাবাসীর উদ্দেশ্য করে বলে, ‘‘দেখ আজ থেকে ছয় বছরে আগে এই দিনেই এই জায়গায়, এই জালিমের সামনে ইমাম হোসাইন (রা)-এর মস্তক রাখা হয়েছিল। আজ আমার সামনে সেই জালিমের মাথা রাখা হয়েছে’’। এভাবে মুখতার সাকাফী কারবালার শহীদদের পবিত্র রক্তের যথাযথ বদলা নিয়েছিলেন।(ইন্টারনেট)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

যদি কেউ দাড়ি না রাখে তাহলে সে কি ...
পবিত্র ঈদে গাদীর
দাওয়াতে দ্বীনের গুরুত্ব ও ...
কারবালা ও ইমাম হোসাইন (আ.)- ১ম পর্ব
ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাবের ৬ মাস ...
হাসনাইন (ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন) ...
মসনবীর গল্প
অর্থসহ মাহে রমজানের ৩০ রোজার দোয়া
ইমাম হাসান আসকারী (আ.) এর জন্ম ...
সমাজ কল্যাণে আল-কুরআনের ভূমিকা

 
user comment