বাঙ্গালী
Saturday 20th of April 2024
0
نفر 0

একটি আধ্যাত্মিক আহবান

একটি আধ্যাত্মিক আহবান

বিশ্ববাসীর প্রতি শীয়াদের বাণী শুধু এটাই যে, “আল্লাহকে জানুন ।” অর্থাৎ জীবনে যদি সৌভাগ্য ও মুক্তি কামনা করেন, তাহলে আল্লাহকে জানার পথ অবলম্বন করুন । আর এটা প্রকৃতপক্ষে প্রিয়নবী (সা.)-এর হাদীসের অনুরূপ । বিশ্বনবী (সা.) যখন ইসলামের আন্তর্জাতিক আহবানের কাজ শুরু করেন, তখন তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন : হে জনগণ! এক আল্লাহকে জানতে চেষ্টা কর এবং আল্লাহকে এক বলেই স্বীকার কর । কেননা এর মধ্যেই তোমাদের মুক্তি নিহিত রয়েছে । এই অমিয় বাণীর ব্যাখায় সংক্ষেপে এটাই বলব মানুষ হিসেবে আমরা স্বভাবগতভাবে জীবনের বিভিন্ন পার্থিব লক্ষ্য ও কামনা বাসনার পুজারী । যেমন : সুস্বাদু খাদ্য, পানীয়, সুন্দর পোষাক, আরামপ্রদ বাসস্থান, মনোরম দৃশ্য, সুন্দরী স্ত্রী, অন্তরঙ্গ বন্ধু, বিশাল ধনসম্পদ, প্রবল ক্ষমতা, উচ্চতর রাজনৈতিক পদমর্যাদা, সামাজিক প্রভাব প্রতিপত্তি, নেতৃত্ব ও প্রভুত্ব, আপন মনের সাধ, ইচ্ছা ও অনিচ্ছা বাস্তবায়ন ও বিরোধীদের বিনাশই আমাদের প্রবৃত্তির চির আকাংখা । কিন্তু এর পাশাপাশি মানুষের হৃদয়ে আল্লাহ প্রদত্ত বিবেক অনুযায়ী আমরা সবাই এটা উপলদ্ধি করতে পারি যে, এ বিশ্বজগতের উপভোগ্য সবকিছু মানুষের জন্যেই সৃষ্টি করা হয়েছে । মানুষকে ঐসবের জন্যে সৃষ্টি করা হয়নি । স্বাভাবতই ঐ সমস্ত কিছু মানুষের পিছনে ছুটে আসবে । তাই মানুষকে ঐসবের পিছনে ধাবিত হওয়া উচিত নয় । উদরপূর্তি এবং যৌনতৃপ্তি ভোগই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া তো গরু ছাগেলেরই বা পাশবিক জীবনাদর্শ । অন্যদের হত্যা করা, ছিন্ন-ভিন্ন করা এবং অসহায় করাতো বাঘ, নেকড়ে, বা শিয়ালেরই নীতি । আল্লাহ প্রদত্ত বুদ্ধিবৃত্তি ও বিবেকপ্রসূত স্বভাবই মানুষের জীবনাদর্শ । বুদ্ধিবৃত্তি ও প্রজ্ঞাজাত জীবন দর্শনের বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গী আমাদেরকে সত্যের পথে পরিচালিত করে । আমাদেরকে তা কখনোই কামরিপু চরিতার্থের পথে বা আত্মঅহমিকা অথবা স্বার্থ পরতার পথে পরিচালিত করে না । বিবেক ও প্রজ্ঞা প্রসূত জীবন দর্শন মানুষকে এ সৃষ্টি জগতেরই একটি অংশ বিশেষ হিসেবে বিবেচনা করে । ঐ জীবন দর্শনের দৃষ্টিতে মানুষ সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন ও সার্বভৌম কোন অস্তিত্বের অধিকারী নয় । অথচ মানুষ সাধারণতঃ ধারণা করে যে, সে এই প্রকৃতি জগতের নিয়ন্ত্রক । তার ধারণা অনুযায়ী সে-ই এই অবাধ্য ও উচ্ছৃংখল প্রকৃতিকে ইচ্ছেমত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তার কাছে নতজানু হতে বাধ্য করে । অথচ, প্রকৃতপক্ষে মানুষ তার নিজের অজান্তেই এই প্রকৃতির হাতের পুতুল এবং তার নির্দেশ পালনকারী আজ্ঞাবহ দাস মাত্র । প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিবৃত্তি প্রসূত জীবন দর্শন মানুষকে এই দ্রুত ধ্বংসশীল জগতের নিগুঢ় রহস্য উপলদ্ধির ব্যাপারে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন ও সূক্ষ পর্যবেক্ষণের আহবান জানায় । কেননা, এর ফলে মানুষের কাছে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এ সৃষ্টিজগতের কিছুই নিজ থেকে অস্তিত্বশীল হয়নি । বরং তা এক অসীম উৎস থেকেই উৎসরিত । ঐ জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গীর মাধ্যমে এটা মানুষের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, এ আকাশ ও পৃথিবীর সব সুন্দর ও অসুন্দর অস্তিত্ব বাহ্যিক দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ স্বাধীন বলে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা অন্য একটি বাস্তবতারই প্রতিফলন মাত্র । এটা ঐ মূল অস্তিত্বেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র, যার বহিঃপ্রকাশ কখনও নিজ থেকে নয় । অতীতের সকল ঘটনা, শক্তি ও মহিমা সবই আজ রূপকথার গল্প বৈ আর কিছুই নয় । তেমনি আজকের ঘটনাপ্রবাহও আগামীকালের রূপকথা বৈ কিছু নয় । অর্থাৎ সবকিছুই তার নিজের কাছে রূপকথারই নামান্তর বটে । এ বিশ্বজগতে একমাত্র মহান আল্লাহ বাস্তব অস্তিত্বের অধিকারী । তাঁর অস্তিত্বই অমর । বিশ্বের সবকিছু তাঁরই আশ্রয়ে অস্তিত্বের রং ধারণ করে । তারই সত্তার জ্যোতিতে সবকিছু অস্তিত্বের জ্যোতি লাভ করে । মানুষ যখন এধরণের উপলদ্ধির অধিকারী হয়, তখন তার অন্তরচক্ষু উম্মোচিত হয় । তখন সে তার ঐ অন্তরচক্ষু দিয়ে এ বিশ্বজগতের অস্তিত্বগত সীমাবদ্ধতা অবলোকন করতে সক্ষম হয় । তখন সে উপলদ্ধি করে যে, সমগ্র বিশ্ব জগত এক অপরিসীম আয়ু, শক্তি ও জ্ঞানের অস্তিত্বের উপরই নির্ভরশীল । এ জগতের প্রতিটি অস্তিত্বই অনন্ত জগতের এক একটি জানালা স্বরূপ, যার ভিতর সেই অনন্ত অসীম জগতের দৃশ্যাবলীর কিয়দংশ পরিদৃষ্ট হয় । মানুষের উপলদ্ধি যখন এমনই এক স্তরে উন্নীত হবে, তখন সে তার মৌলিকত্ব ও সার্বভৌমত্বকে তার প্রকৃত সত্তার অধিকারীর কাছেই প্রত্যর্পণ করবে । তখন সে আপন হৃদয়কে সকল অস্তিত্বের বাধন থেকে মুক্ত করে শুধুমাত্র এক আল্লাহর সত্তার সাথে হৃদয়কে গেথে নেবে । একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া আর অন্য কোন শক্তির সামনে সে মাথা ঝোকাবে না । এ পর্যায়ে পৌছানোর পরই সে মহান আল্লাহর পবিত্র তত্ত্বাবধান ও কৃতকর্মের অধীন হয় । তখন প্রতিটি অস্তিত্বকেই সে আল্লাহর মাধ্যমেই চেনে এবং সৎকাজ ও সচ্চরিত্র অর্জনের মাধ্যমে সরাসরি আল্লাহর দ্বারাই সে পরিচালিত হয় । আর এটাই হচ্ছে মানুষের জন্যে শ্রেষ্ঠত্বের সর্বোচ্চ স্তর । ইমামগণ মহান আল্লাহর অনুগ্রহও তত্ত্বাবধানেই শ্রেষ্ঠত্বের ঐ বিশেষ মানবীয় স্তরে উন্নীত হন । আর যে ব্যক্তি তার স্বীয় প্রচেষ্টা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে এই পর্যায়ে উন্নীত হন, তিনিই ইমামের প্রকৃত অনুসারী হিসেবে আল্লাহর কাছে বিবেচিত হন । এটাই তার সাথে ইমামের পদমর্যাদাগত পার্থক্য । তাই এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর পরিচিতি এবং ইমাম পরিচিতির বিষয় পরস্পর বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয় । একইভাবে আল্লাহ পরিচিতি ও আত্মপরিচিতির বিষয়ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয় । কেননা, যে তার আপন সত্তাকে চিনতে সক্ষম হল, নিঃসন্দেহে ঐ ব্যক্তিই সর্বস্রষ্টা আল্লাহর সত্তাকেও অনুধাবন করতে সক্ষম হল ।

 

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মহান শাহাদাতের ...
ইমাম রেযা (আ.)
নবী রাসূল প্রেরণের প্রয়োজনীয়তা
ইমাম হাসান (আ.) এর শাহাদাত
অষ্টম ইমাম হযরত রেযা (আ.) স্মরণে
কোমে হযরত ফাতেমা মাসুমার (আ.) জন্ম ...
হযরত ইমাম হোসাইন বিন আলী আ
হযরত ফাতেমা (সা.আ.) এর ফজিলত ও ...
আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত ইমাম ও তাঁর ...
ইমাম হোসাইন (আঃ)'র সেই কালজয়ী ...

 
user comment