বাঙ্গালী
Friday 29th of March 2024
0
نفر 0

ইসলাম- সহনশীলতার ধর্ম

ইসলাম- সহনশীলতার ধর্ম

সাধারণত ধারণা করা হয় যে,কোন ধর্ম যদি নিজেকে একমাত্র সত্যধর্ম বলে দাবী করে এবং অন্য সকল ধর্মকে ভ্রান্ত বলে বিশ্বাস করে তবে সেই ধর্মে সহনশীলতার বিষয়টি উপেক্ষিত হয়। ফলে তা অন্য ধর্মগুলোকে বিলীন এবং তাদের অনুসারীদের দমন করার চেষ্টায় রত হয়। কিন্তু কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা এবং ইসলামের বিধি-বিধান অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা থেকে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে,ইসলাম নিজেকে একমাত্র সঠিক ধর্ম বলে প্রচার করা সত্ত্বেও এর শিক্ষা ও বিধান কেবল ধর্মীয় সহনশীলতার কথাই বলে না; বরং অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থানের বিষয়টির ওপরও গুরুত্ব আরোপ করে। প্রথম যে বৈশিষ্ট্যটি ইসলামের উদারতার পরিচয় বহন করে তা হল এ ধর্ম যখন কাউকে এর প্রতি আহবান জানায় তখন তাকে এটা গ্রহণ করতে বাধ্য করে না। পবিত্র কুরআন এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে যে,ধর্মের (গ্রহণের) বিষয়ে কোন জবরদস্তি নেই (সূরা বাকারা : ২৫৬)। ঐতিহাসিক সাক্ষ্য-প্রমাণও ইসলামের প্রসারের ক্ষেত্রে অন্যদের ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করণের বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করে। বিশিষ্ট প্রাচ্যবিদ গুস্তাব লুবন অন্য এক গবেষক ও প্রাচ্যবিদ মিশোর সূত্রে উল্লেখ করেছেন,দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমরের সময় যখন বায়তুল মুকাদ্দাস বিজিত হয় তখন খ্রিস্টানদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা দান করা হয়।

দ্বিতীয় যে বৈশিষ্ট্যটি ইসলামকে পরমতসহিষ্ণু ও সহনশীল ধর্ম হিসাবে প্রসিদ্ধি দান করেছে তা হল ইসলাম সংলাপ ও যৌক্তিক বিতর্কের সমর্থক। মহান আল্লাহ মহানবী (সা.)-এর প্রতি ইসলামের বাণী প্রচারের দায়িত্ব দানের সাথে সাথে তাঁকে এ নির্দেশ দান করেছেন যে,তোমার প্রতিপালকের পথে প্রজ্ঞা ও উপদেশসহ আহ্বান কর এবং প্রতিপক্ষের সঙ্গে যখন বিতর্ক করবে তখন উত্তম পন্থায় বিতর্ক করবে (সূরা নাহল : ১২৫)। অর্থাৎ ইসলাম অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে বিতর্কে সকল প্রকার আক্রমণাত্মক ও তিরস্কারমূলক কথা এবং পরিহাসমূলক আচরণ পরিহারের নির্দেশ দিয়েছে। ইসলাম সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে : ‘মুশরিকরা আল্লাহকে ছেড়ে যাদের (উপাস্য মনে করে) আহ্বান করে তোমরা তাদের গালি দিও না।’ (সূরা আনআম : ১০৮)। এ আয়াত অনুযায়ী অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপাস্যই শুধু নয়; বরং তাদের সম্মানিত ব্যক্তিদেরও কোনরূপ অবমাননা করা যাবে না। ইসলাম সংলাপ ও উত্তম পন্থায় বিতর্কের বিষয়টিকে এক বা দুই বৈঠকের জন্য সীমাবদ্ধ রাখেনি; বরং সব সময়ের জন্য তা উন্মুক্ত রেখেছে। তবে অবশ্যই তা যুক্তিনির্ভর হতে হবে এবং যে কোন ধরনের কটাক্ষ,অবমাননা,তিরস্কার ও নিন্দা হতে মুক্ত হবে। এমনকি ইসলাম ঐশী ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে সমবিশ্বাসের বিষয়গুলোর ভিত্তিতে ঐক্যের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানায়। এ উদ্দেশ্যে ইয়াহুদী ও খ্রিস্টধর্মের অনুসারীদের আহ্বান জানিয়ে বলেছে : ‘হে আহলে কিতাব! এস সে কথায় যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই,যেন আমরা আল্লাহ ব্যতীত কারও ইবাদাত না করি এবং কোন কিছুকেই তাঁর সঙ্গে শরীক না করি।’ (আলে ইমরান : ৬৪) বিধর্মীদের কর্তৃত্ব মেনে না নিয়ে তাদের সঙ্গে যে কোন ধরনের সৌহার্দ্রপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনকে ইসলাম নিষেধ করে না। মহান আল্লাহ বলেন : ‘ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের স্বদেশ হতে বহিষ্কার করেনি তাদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালবাসেন। আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন যারা দীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং তোমাদের স্বদেশ হতে বহিষ্কার করেছে এবং তোমাদের বহিষ্করণে সাহায্য করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে প্রকৃতপক্ষে তারাই জালিম।’ (সূরা মুমতাহিনা : ৮-৯)। এ আয়াতে আল্লাহ বিধর্মীদের সঙ্গে সদাচরণের মানদণ্ড তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস বলেননি; বরং মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ ও তাদের ওপর নির্যাতন না করাকে সুসম্পর্কের মাপকাঠি নির্ধারণ করেছেন।

ইসলাম সামাজিক সুসম্পর্কের মৌলিক নীতিমালা ও ভিত্তি ক্ষমাপরায়ণতা বলে উল্লেখ করেছে ও বলেছে : ‘(হে রাসূল!) তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন কর,সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদের এড়িয়ে চল।’ (সূরা আরাফ : ১৯৯)। এ আয়াতে আল্লাহ তাঁর রাসূলকে বিধর্মীদের অস্বীকার এবং দৈহিক ও মানসিক কষ্টদানের জবাব ক্ষমা প্রদর্শনের মাধ্যমে দিতে বলেছেন। এ কারণেই আমরা দেখি,মহানবী (সা.) মক্কা বিজয়ের দিনে তাঁর সকল শত্রুকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মানব-প্রেমের মূর্ত প্রতীক। তিনি বলেছেন : ‘সকল মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। তোমাদের মধ্যে সেই তাঁর নিকট সর্বাধিক প্রিয় যে তাঁর সৃষ্ট মানুষের প্রতি সর্বাধিক কল্যাণ করে।’ (উসূলে কাফি,২য় খণ্ড,পৃ. ১৬৪) মহানবী (সা.) তাঁর বরকতময় জীবনে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের সাথে সর্বোত্তম আচরণের নমুনা পেশ করেছেন। তিনি ইসলামী ভূখণ্ডে বসবাসকারী আহলে কিতাবদের (ইয়াহুদী ও খ্রিস্টান) যেমন জিম্মী চুক্তির অধীনে পূর্ণ নিরাপত্তা দান করেছেন,তেমনি মুশরিক-কাফিরদের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে তাদের জীবন,সম্পদ ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। তিনি সকল অবস্থায় যুদ্ধবিরতি ও সন্ধিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং মহান আল্লাহর এ নির্দেশ ‘তারা যদি সন্ধির দিকে ঝুঁকে পড়ে,তবে তুমিও সন্ধির দিকে ঝুঁকবে এবং আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে’ (সূরা আনফাল : ৬১) এবং ‘সুতরাং তারা যদি তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা হতে সরে দাঁড়ায়,তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ না করে এবং সন্ধির প্রস্তাব দেয় তবে সেক্ষেত্রে আল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের পথ রাখেননি’ (সূরা নিসা : ৯০)- এর প্রতি অনুগত ছিলেন। সুতরাং নির্দ্বিধায় বলা যায়,ইসলাম ধর্মীয় সহনশীলতার সর্বোচ্চ পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে এবং এর অনুসারীদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি উৎসাহিত করেছে। (প্রত্যাশা, বর্ষ ২, সংখ্যা ১)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

হযরত যয়নব (রা.) বিনতে রাসূলুল্লাহ্ ...
ভুলে যাওয়া ইতিহাস : ঘটনা প্রবাহ ...
ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাঈলের জন্ম ...
ইসলামের পবিত্র চারটি মাস ও আমাদের ...
যুগে যুগে কোরবানি
সূরা আত তাওবা;(৪র্থ পর্ব)
নবী ও রাসূলের প্রয়োজনীয়তা
ইসলামি ইতিহাসে গাদীর
বেহেস্তি নেত্রি: ফাতিমা যাহরা সা.আ
শিয়া মুসলমানরা কি দৈনিক তিন ...

 
user comment