বাঙ্গালী
Saturday 20th of April 2024
0
نفر 0

আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়

আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়

মানব জাতির সহজাত বৈশিষ্ট্য হল শক্তিশালী কোন সত্তার সম্মুখে নিজেকে অবনত রাখা। শৈশব থেকে যখন মানব বিচার-বুদ্ধি উন্নতি লাভ করতে থাকে তখন থেকেই প্রকৃতগতভাবে তার মনে এ চিন্তার উদ্রেক হয় যে, এতসব আশ্চর্য ও বিষ্ময়কর সৃষ্টির কি কোন শক্তিশালী সৃষ্টিকর্তা নেই? তখন থেকে শুরু হয়ে যায় তার কৌতুহলী জিজ্ঞাসা। সে খুজতে থাকে প্রকৃত সৃষ্টিকারককে। ক্রমশঃই তার কাছে সবকিছুর-ই কোন সৃষ্টিকারক আছে বলে ধারণা হতে থাকে। এ ব্যাপারে প্রতিটি মানব প্রকৃতিই বলে দেবে পৃথিবীর জন্যেও অবশ্যই কোন সৃষ্টিকারক আছেন। তাই স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা সর্বকালেই অধিকাংশ বলে পরিগণিত হয়ে আসছে। আল্লাহকে চেনার ক্ষেত্রে মানুষের তেমন কোন বেগ পেতে হয় না, কেননা তার প্রকৃতিই তাকে দিক নির্দেশনা দিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসের পর তার বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী চিহ্নিত করতে গিয়ে মানুষ প্রচুর ভুলের সম্মুখীন হয়ে পড়ে। আল্লাহ  যেহেতু আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কোন সত্তা নয় সেহেতু তার বৈশিষ্ট্যাবলী চিহ্নিত করতে অনেকাংশে মানুষ বিভ্রান্তির শিকার হয়ে পড়ে। কেননা, বস্তুগত সত্তার বৈশিষ্ট্য আমাদের জন্যে বোধগম্য নয়। আর সেজন্যে এক্ষেত্রে খুব ভেবে চিন্তে আল্লাহর বৈশিষ্ট্য নিরূপন করা একান্ত প্রয়োজন।

মানব সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাসে আমরা বিভিন্ন মতবাদে বিশ্বাসী মানুষের অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ করি। কেউ একত্ববাদী, আবার কেউ দ্বিত্ববাদী। কেউ আবার বহুত্ববাদে বিশ্বাসী। কেউ অগ্নিপূজক আবার কেউ মূর্তিপূজক।

যখন কেউ প্রকৃতির তাড়নায় বিশ্ব বিধাতার অবস্থান অন্বেষণ করে তখন তার দৃষ্টিগোচর হয় এক বিশালাকৃতির মহাকাশ, বিরাটাকার সূর্য যা সমস্ত পৃথিবীকে আলোকিত ও উত্তপ্ত করে। রাত্রের অন্ধকারে প্রত্যক্ষ করে আকাশের বুকে চন্দ্র ও তারকারাজী। বৃহদাকার পাহাড়-পর্বত, গাছ-পালা, নদ-নদী প্রভৃতি আরো শক্তিশালী ক্রিয়া-কর্মের নিদর্শন পরিলক্ষিত হয় প্রতিটি মানুষের দৃশ্যপটে। এক্ষেত্রে কোরআনে উল্লেখিত হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি  বলেন, ‘সূর্য প্রভাতে উদয় হয় আবার সন্ধ্যাবেলা অস্তমিত হয়ে যায়। তেমনি চন্দ্র রাত্রে প্রকাশিত হয় আবার প্রত্যুষে সূর্যের আলোর সম্মুখে বিলিন হয়ে যায়। এ সব কিছুই পরিবর্তনশীল। যে সত্তা সর্বদা পরিবর্তনশীল ও বস্তুজাত সত্তা তা কখনো মূল স্রষ্টা বা আদি সত্তা হতে পারে না। আমাদের স্রষ্টার কখনো অনস্তিত্বের রূপ ছিল না যে, পরবর্তীতে সময়ের আবর্তনে অস্তিত্বের আকার ধারণ করেছে। সৃষ্টিকুলের সৃষ্টিকারক এমন পরাক্রমশালী সত্তা যার নির্দেশে পরিচালিত হবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকল কিছু।’

লক্ষনীয় যে, এ বিশ্ব সৃষ্টির শৃঙ্খলা বিন্যাস ও বিরাজমান ভারসাম্য দর্শনে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের পরিচয় লাভ যেমনি অত্যন্ত সহজ, তার বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করা তেমনি কঠিন। কেননা, তিনি তো আমাদের ন্যায় ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কোন সত্তা নন। সুতরাং আল্লাহর বৈশিষ্ট্য পরিচয়ের জন্যে প্রাকৃতিক জগতের সমস্ত জীব ও জড় পদার্থের গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য থেকে তাকে আলাদা করে ভাবতে হবে। তার কারণ, তিনি প্রকৃতির কোন বস্তুর জাত ও বৈশিষ্ট্যের সাথে সংগতিপূর্ণ নন। তিনি আমাদের সকল কল্পনা, রূপকথা ও কল্প কাহিনীর বহির্ভুত এক সত্তা। এ বস্তু জগতের কোন কিছুর সাথে তাকে তুলনা করা চলে না।

এ কারণে আল্লাহর অস্তিত্বের পরিচয়ের পর তার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে বহু মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। তার প্রকৃত কারণ হল,মানুষ তার সৃষ্টিকর্তার গুণাবলীকে প্রকৃতির ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য ও দর্শনীয় জীব ও জড় পদার্থের সাথে তুলনা দিয়ে নির্ণয় করতে সচেষ্ট। আর এ জন্যেই এতসব মতবাদের উদ্ভব হয়েছে।

 

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

শিয়া মুসলমানরা কত ওয়াক্ত নামাজ ...
অষ্ট্রেলিয়ান নও-মুসলিম সুসান ...
শিয়া-সূন্নীর মধ্যে পার্থক্য কি?
সূরা আত তাওবা;(৬ষ্ঠ পর্ব)
আহলে সুন্নতের দৃষ্টিতে ...
সূরা রা’দ; (১ম পর্ব)
ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রমের মর্যাদা ...
মিথ্যা কথা বলা
আল্লাহ্‌ কেন শয়তানকে সৃষ্টি ...
মুসলমানদের প্রথম কিবলা ...

 
user comment