বাঙ্গালী
Friday 29th of March 2024
0
نفر 0

কোরআনের محكم (মুহকাম) বা সুস্পষ্ট ও متشابه (মুতাশাবিহ্) বা রূপক আয়াতের মধ্যে পার্থক্য কি?



প্রশ্ন  : কোরআনের محكم (মুহকাম) বা সুস্পষ্ট ও متشابه (মুতাশাবিহ্) বা রূপক আয়াতের মধ্যে পার্থক্য কি?

উত্তর দিয়েছেন আয়াতুল্লাহ্ নাসের মাকারেম সিরাজী


উত্তর : সূরা আলে ইমরানের ৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে,


هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ


“তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট যা কিতাবের মূল ভিত্তি। আর অন্যগুলো হলো রূপক।”
‘মুহ্কাম’ শব্দটি ‘ইহ্কাম’ শব্দ হতে নেয়া হয়েছে যার অর্থ নিষিদ্ধ করা। এজন্যই যে সকল বিষয় অটল ও দৃঢ় তাকে ‘মুহ্কাম’ বলা হয়। কারণ তাতে কোনরূপ পতনের আশংকা নেই। যে কথা বা বক্তব্য সুস্পষ্ট ও অকাট্য তাকেও এ কারণে ‘মুহ্কাম’ বলা  হয়ে থাকে।
সুতরাং ‘মুহ্কাম’ আয়াতসমূহ সেই সকল আয়াত যা এতটা সুস্পষ্ট যে,ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে বোঝাবার প্রয়োজন নেই,যেমন قل هو الله أحد (বল,তিনি আল্লাহ্ এক),ليس كمثله شيء  (কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়),للذكر مثل حظ الانثيين  (একজন পুরুষের অংশ উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে দুজন নারীর সমান)। এরূপ সহস্র আয়াত মুহ্কাম আয়াতের অন্তর্ভুক্ত যাদের কোনটি আকীদা,কোনটি আহ্কাম,কোনটি ইতিহাস,কোনটি উপদেশ ও নৈতিক শিক্ষামূলক। কোরআনে ‘মুহ্কাম’ আয়াতসমূহ ‘উম্মুল কিতাব’ বা কিতাবের মূল ভিত্তি হিসেবে অন্যান্য আয়াতের ব্যাখ্যাকারী।
‘মুতাশাবিহ্’ শব্দের অর্থ এমন কোন বস্তু যার বিভিন্ন অংশ পরস্পর সদৃশ। এ কারণেই যে সকল বাক্যের অর্থ জটিল এবং কয়েকটি সম্ভাব্য অর্থ থাকে সেগুলোকে ‘মুতাশাবিহ্’ বলা হয়। কোরআনের মুতাশাবিহ্-এর অর্থও তাই অর্থাৎ কোরআনের যে সকল আয়াতের অর্থ জটিল,কয়েক ধরনের অর্থ হতে পারে এবং যেগুলোকে মুহ্কাম আয়াতের সাহায্য নিয়ে ব্যাখ্যা করতে হয় সেগুলোই ‘মুতাশাবিহ’ আয়াত।
কোরআনের মুতাশাবিহ্ আয়াতের উদাহরণ হিসেবে আল্লাহর গুণাবলী,কিয়ামতের প্রকৃতির কথা বলা যেতে পারে,যেমন কোরআনে বলা হয়েছে- يد الله فوق أيديهم (আল্লাহর হাত তাদের হাতের ওপর রয়েছে)। আয়াতটি আল্লাহর মহান ক্ষমতার প্রতি ইঙ্গিত করেছে।
 و الله سميع عليم (এবং আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী)-এ আয়াতটি আল্লাহর জ্ঞানকে বুঝিয়েছে,نضع الموازن القسط ليوم القيامة (কিয়ামতের দিন ন্যায়ের পাল্লা স্থাপিত হবে) প্রভৃতি আয়াত।
সুস্পষ্ট যে,মহান আল্লাহর হাত বা কান বলে কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই এবং মানুষের আমল মাপার পাল্লাও আমাদের ব্যবহৃত দাড়িপাল্লার মত নয়;বরং এ বিষয়গুলো যথাক্রমে ক্ষমতা,জ্ঞান ও সত্যের মানদণ্ডের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে।
এখানে বলা প্রয়োজন মনে করছি,কোরআনে ‘মুহ্কাম’ ও ‘মুতাশাবিহ্’ ভিন্ন অর্থেও এসেছে। যেমন সূরা হুদের প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে,كذاب أحكمذ آياذه এমন এক কিতাব যার আয়াতসমূহ সুপ্রতিষ্ঠিত। এখানে কোরআনের সকল আয়াতকে ‘মুহ্কাম’ বলা হয়েছে এ অর্থে যে,এ মহাগ্রন্থের আয়াতসমূহ পরস্পর সম্পর্কিত বিধায় সুপ্রতিষ্ঠিত। অনুরূপ সূরা যুমারের ২৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে- كذابا مذشابها এমন কিতাব যার সকল আয়াত ‘মুতাশাবিহ্’। এখানে মুতাশাবিহ্ অর্থ সঠিকতা ও নির্ভুলতার ক্ষেত্রে তারা পরস্পরের অনুরূপ ও সামঞ্জস্যশীল। ( জ্যোতি ১ম বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

মিথ্যা কথা বলা
শিয়া-সূন্নীর মধ্যে পার্থক্য কি?
কুরআনে প্রযুক্তি [পর্ব-০2] :: ...
দরিদ্রতার চেয়ে মৃত্যু ভাল
ইফতার ও সেহরীর সময়সীমা
রহমত মাগফেরাত আর নাজাতের মাস : ...
ধর্ম ও রাজনীতি
শিয়া মুসলমানরা কত ওয়াক্ত নামাজ ...
হিজাব সমাজকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন ...
ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে হিংসার ...

 
user comment