বাঙ্গালী
Saturday 20th of April 2024
0
نفر 0

ইমাম মূসা কাযিম (আ.)-এর শাহাদাত বার্ষিকী

ইমাম মূসা কাযিম (আ.)-এর শাহাদাত বার্ষিকী



২৫ রজব ইমাম মূসা ইবনে জাফর আল-কাযিম (আ.)-এর শাহাদাত দিবস। ১৮৩ হিজরির এই দিনে বাগদাদে ৫৫ বছর বয়সে তদানীন্তন শাসক হারুনুর রশীদের এক চক্রান্তমূলক বিষপ্রয়োগে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। বাগদাদের কাযেমিয়ায় তাঁর মাজার রয়েছে। ষষ্ঠ ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.) ছিলেন তাঁর পিতা এবং হামিদা আল-বারবারিয়া ছিলেন তাঁর মাতা। ১২৮ হিজরির ৭ সফর রবিবার মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী স্থান আবওয়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

ইমাম মূসা ইবনে জাফর আল কাযিম (আ.) ছিলেন ইমামতি ধারার সপ্তম ইমাম। খোদার ইবাদাত-বন্দেগিতে অনন্য নিষ্ঠাবান হওয়ায় তিনি ‘আবদুস সালেহ’ বা খোদার নেক বান্দা খেতাবে ভূষিত হন। ‘আবুল হাসান’ নামেও তাঁর যথেষ্ট পরিচিতি ছিল। তাঁর মূল নাম ছিল মূসা; আল-কাযিম ছিল তাঁর উপাধি এবং ডাক নাম ছিল আবু ইবরাহীম।

ইমাম মূসা আল-কাযিমের পবিত্র জীবনের প্রথম বিশ বছর অতিবাহিত হয় তাঁর মহান পিতার পবিত্র ও আন্তরিক পৃষ্ঠপোষকতায়। পিতা ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.)-এর কাছে থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত প্রতিভা ও আলোকোজ্জ্বল দিকনির্দেশনা ও শিক্ষায় তাঁর ভবিষ্যৎ ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয়। ছেলেবেলা থেকেই তিনি খোদায়ী জ্ঞানে সমৃদ্ধি অর্জন করেন।

ষষ্ঠ ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.) ১৪৮ হিজরির ২৫ শাওয়াল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং ঐদিন থেকে ইমাম মূসা কাযিম (আ.) সপ্তম ইমাম হিসাবে অভিষিক্ত হন। ৩৫ বছর পর্যন্ত তাঁর ইমামতকাল ছিল। ইমামতের প্রথম দশক তিনি শান্তিপূর্ণভাবে তাঁর ইমামতের দায়িত্ব পালন করতে পারেন এবং মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা প্রচারের কাজে ব্যাপৃত থাকেন। কিন্তু এক পর্যায়ে ক্ষমতাসীন শাসকদের রোষানলে পড়লে জীবনের একটি বিরাট অংশ তাঁকে কারাগারে কাটাতে হয়।

ইমাম মূসা আল-কাযিমের জীবন অতিবাহিত হয় আব্বাসী শাসনের ক্রান্তিকালে। তিনি একাধারে আল-মনসুর আদ-দাওয়ানিকি, আল-মাহদী ও হারুনুর রশীদের শাসনকাল প্রত্যক্ষ করেছেন। আল-মনসুর ও হারুনুর রশীদ মহানবী (সা.)-এর বহু ভক্ত অনুসারীকে তরবারির নিচে স্থান দেয়। ইমামের জীবনকালেই বহু লোককে জীবন্ত কবর দিয়ে শহীদ করা হয় এবং অনেককে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আবদ্ধ করা হয়। ১৬৪ হিজরিতে আল-মনসুরের পুত্র আল-মাহদী শাসক হিসাবে একবার মদীনায় আসে এবং ইমাম মূসা আল-কাযিমের ব্যাপক সুনাম ও সুখ্যাতিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁকে বাগদাদে নিয়ে যায় এবং কারাগারে নিক্ষেপ করে। এক বছর পর ইমামকে মুক্তি দেয়। ১৭০ হিজরিতে হারুনুর রশীদ আব্বাসী সাম্রাজ্যের প্রধান হিসাবে ক্ষমতাসীন হলে ইমাম মূসা আল-কাযিমকে পুনরায় কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। বিষ প্রয়োগে শহীদ হওয়া পর্যন্ত তিনি কারাগারেই ছিলেন।

তাঁর নৈতিকতা ও নীতিবাদিতা সম্পর্কে হাজর আল-হায়তামী মন্তব্য করেছেন, ‘ইমাম মূসা আল-কাযিমের ধৈর্য ও সহনশীলতা এতই চমৎকার ছিল যে, তাঁকে ‘আল-কাযিম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ছিলেন পবিত্রতা ও মহানুভবতার প্রতীক। তিনি রাত অতিবাহিত করতেন ইবাদাতের মধ্য দিয়ে আর দিনে রোযা পালন করতেন। যারা তাঁর কাছে কোন ভুল-ত্রুটি করত তাদেরকে তিনি মাফ করে দিতেন।

দরিদ্র ও দুঃস্থদের প্রতি ইমাম মূসা আল-কাযিম খুব দয়ার্দ্র ও মহানুভব ছিলেন। তাদেরকে তিনি নগদ অর্থ, খাদ্য, বস্ত্র এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী গোপনে সাহায্য দিতেন। কোন সাহায্যপ্রার্থী তাঁর দ্বার থেকে খালি হাতে ফিরত না।

১৭৯ হিজরিতে হারুনুর রশীদ মদীনা সফরে এসে মদীনার জনসাধারণের মধ্যে এই মহান ইমামের বিরাট প্রভাব ও বিপুল জনপ্রিয়তা দেখে হিংসা ও শত্রুতার আগুনে জ্বলে ওঠে। মসজিদে নবীতে নামাযরত অবস্থায় ইমামকে সে গ্রেফতার করে বাগদাদের কারাগারে নিয়ে চার বছর পর্যন্ত আটক করে রাখে। ১৮৩ হিজরির ২৫ রজব বিষ প্রয়োগ তাঁকে শহীদ করা হয়। তাঁর লাশের সাথেও মানবিক আচরণ করা হয়নি। কারাগার থেকে বের করে তাঁর পবিত্র মৃতদেহ বাগদাদ সেতুর উপর ফেলে রাখা হয়। ইমামের ভক্ত ও অনুসারীরা তাঁর দেহ সেখানে থেকে নিয়ে গিয়ে ইরাকের কাযিমিয়াতে দাফন করেন।#আল হাসানাইন

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব
অবিকৃত গ্রন্থ আল-কোরআন
ইমাম রেজা (আ.)'র কয়েকটি অলৌকিক ঘটনা
কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনা : একটি ...
Protest einer Antikriegsgruppe gegen Luftangriff Amerikas auf ein Krankenhaus
খলিফা নির্বাচনের পদ্ধতি
‘বাতিলের মুকাবিলায় ঐক্যই ...
অর্থসহ মাহে রমজানের ৩০ রোজার দোয়া
কোরআন ও চিকিৎসা বিজ্ঞান
শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস (পর্ব-১)

 
user comment