বাঙ্গালী
Thursday 25th of April 2024
0
نفر 0

সূরা ইউসুফ; (৩১তম পর্ব)

সূরা ইউসুফ; (৩১তম পর্ব)



সূরা ইউসুফ; আয়াত ১১০-১১১ (পর্ব-৩১)

সূরা ইউসুফের ১১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

حَتَّى إِذَا اسْتَيْئَسَ الرُّسُلُ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ قَدْ كُذِبُوا جَاءَهُمْ نَصْرُنَا فَنُجِّيَ مَنْ نَشَاءُ وَلَا يُرَدُّ بَأْسُنَا عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِينَ

“(সত্য ধর্ম প্রচারের কাজ অব্যাহত ছিল) এক পর্যায়ে রাসূলগণ যখন (মানুষের হেদায়েতের ব্যাপারে) নিরাশ হলেন এবং মানুষ ভাবল যে, (শাস্তির ব্যাপারে) রাসূলগণকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তখন তাদের নিকট আমার সাহায্য এল। এভাবে আমি যাকে ইচ্ছা করি সে উদ্ধার পায়। অপরাধী সম্প্রদায়ের ওপর থেকে আমার শাস্তি রদ করা হয় না।” (১২:১১০)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শনের উদ্দেশে তাদের মধ্য থেকে একজনকে তাঁর বার্তাবাহক নবী বা রাসূল হিসেবে যুগে যুগে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু দেখা গেছে বহু মানুষ তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি, এমনকি নবী রাসূলদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছে।

এই আয়াতে বলা হচ্ছে , মানুষের প্রতিক্রিয়া যাই হোক না কেন নবী রাসূলরা সত্য প্রচারের কাজে অনড় ও অবিচল ছিলেন, তারা কখনোই তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে কুণ্ঠাবোধ করতেন না।

অবিশ্বাসী কাফেররা নবী রাসূলদেরকে বিদ্রুপ করে বলতো, যদি তাদের কথা সত্যিই হতো তাহলে এতদিনে ঐশী শাস্তি নেমে আসতো, আর আমরা সেই শাস্তিতে পুরোপুরি নাস্তানাবুদ হয়ে যেতাম।

যখনই অবিশ্বাসীদের ঔদ্ধত্য এতদূর গড়াতো তখনই পয়গম্বর ও তার অনুসারীদের জন্য ঐশী সাহায্য নেমে আসত আর অবিশ্বাসীরা ঐশী শাস্তিতে বিপর্যস্ত হত।

যেমন- হযরত নূহ (আ) একটানা বহু বছর সত্যের বাণী প্রচার করলেন, কিন্তু দেখা গেল খুব নগণ্য সংখ্যক মানুষ তার ডাকে সাড়া দিয়ে সত্য ধর্ম গ্রহণ করেছিল। ফলে এক সময় ঐশী শাস্তি নেমে আসল, মহা প্লাবণ তাদেরকে গ্রাস করেছিল, পরিণতিতে মুষ্টিমেয় বিশ্বাসী ছাড়া সবাই ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছিল।

পাপের শাস্তি শুধু পরকালের জন্যই নির্ধারিত- এমন নয়, ইহজগতেও পাপের শাস্তি ভোগ করতে হতে পারে। এই আয়াত থেকে আমরা আরেকটি বিষয় আমরা বুঝতে পারি, তা হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা অনেক সময় পাপাচারী কিংবা কোনো অবিশ্বাসী কাফেরকে অনুশোচিত হয়ে সত্যের দিকে ফিরে আসার সুযোগ দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে ইহকালে ঐশী শাস্তি কিছু সময় বিলম্বিত হয়।

এ সূরা সর্বশেষ অর্থাৎ ১১১ নং আয়াতে বলা হয়েছে ,

لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِأُولِي الْأَلْبَابِ مَا كَانَ حَدِيثًا يُفْتَرَى وَلَكِنْ تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

“পূর্ব পুরুষদের কাহিনীতে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। কুরআনের বাণী মিথ্যা রচনা নয়। বরং তা বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থগুলোর সমর্থক, সমস্ত কিছুর বিশদ বিবরণ, পথ নির্দেশ ও দয়া।" (১২:১১১)

সূরা ইউসুফের শেষ ভাগে এসে এই আয়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, বলা হয়েছে পবিত্র কুরআনে হযরত ইউসুফ (আ) এর ঘটনা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য স্রেফ কোনো ঘটনা বর্ণনা করা নয়, বরং এর মধ্যে মানব জাতির জন্য অনেক কিছু শিখবার রয়েছে। কুরআন কোনো ইতিহাস বা কাহিনী সম্ভার নয়। এই মহাগ্রন্থে বর্ণিত প্রত্যেকটি কাহিনীতে জ্ঞানি মানুষের জন্য অনেক কিছু শিখবার ও জানবার বিষয় রয়েছে যদিও অনেকেই এর গভীরতা উপলব্ধি করতে পারে না।

এছাড়া কুরআন গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে যে কোনো জ্ঞানি ব্যক্তির বোধগম্য হবে যে এটি মানব রচিত কোনো গ্রন্থ নয়। বরং তা ঐশী গ্রন্থগুলোরই ধারাবাহিকতা। এতে মানব জীবনের যাবতীয় সমস্যার সমাধান দেয়া হয়েছে।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

যদি কেউ দাড়ি না রাখে তাহলে সে কি ...
পবিত্র ঈদে গাদীর
দাওয়াতে দ্বীনের গুরুত্ব ও ...
কারবালা ও ইমাম হোসাইন (আ.)- ১ম পর্ব
ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাবের ৬ মাস ...
হাসনাইন (ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন) ...
মসনবীর গল্প
অর্থসহ মাহে রমজানের ৩০ রোজার দোয়া
ইমাম হাসান আসকারী (আ.) এর জন্ম ...
সমাজ কল্যাণে আল-কুরআনের ভূমিকা

 
user comment