বাঙ্গালী
Thursday 25th of April 2024
0
نفر 0

ইমাম জাফর সাদিক (আ.) এর শাহাদত ও এর পরবর্তী ঘটনাবলি

ইমাম জাফর সাদিক (আ.) এর শাহাদত ও এর পরবর্তী ঘটনাবলি

ইমাম সাদিক (আ.) ও তার পূর্বপুরুষগণ উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসনামলে সর্বদাই জনগণের আস্থা ও সম্মানের পাত্র ছিলেন এবং দিনের পর দিন তাদের জনপ্রিয়তা জনগণের মাঝে বৃদ্ধি পেতে থাকে। স্বভাবতই অত্যাচারী আব্বাসী সরকার তাদের জবরদখল করা ক্ষমতা হাত ছাড়া হওয়ার ভয়ে এ ধরণের ব্যক্তিত্ব হতে কখনই নিশ্চিন্তে ছিল না এবং তাদেরকে সহ্য করতে পারত না। বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি ও বিভিন্ন ভাবে ইমাম (আ.) গণের অত্যাচারের পর অবশেষে মানসুর দাওয়ানেকী হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) কে বিষপ্রয়োগ করে (মানাকেবে ইবনে শাহরে আশুব,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ২৮০)। ইমাম সাদিক (আ.) ঐ বিষের প্রভাবেই শাহাদতবরণ করেন।
শেইখ কুলাইনী ও অন্যান্যরা আবু আইয়ুব জোযী হতে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেন : আবু জাফর মানসুর (ওরফে মানসুর দাওয়ানেকী) রাতের আঁধারে আমার নিকট একজনকে পাঠিয়ে আমাকে তলব করলো। অতঃপর আমি তার নিকট গেলাম। মানসুর চেয়ারে বসেছিল,এমতাবস্থায় একটি মোমবাতি তার সামনে জ্বলছিল এবং তার হাতে একটি চিঠি ছিল। তাকে সালাম করা মাত্রই সে ঐ চিঠিটি আমার সম্মুখে ছুড়ে দিল। ক্রন্দনরত অবস্থায় সে বললো : মদিনার গভর্ণর মুহাম্মাদ বিন সুলাইমান এ পত্র পাঠিয়েছে। সে এতে লিখেছে যে,জাফর বিন মুহাম্মাদ (ইমাম সাদিক (আ.) আর দুনিয়াতে নেই। অতঃপর সে তিনবার বললো : ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। জাফরের মত ব্যক্তি আর কোথায় আছে?
অতঃপর আমার উদ্দেশ্যে বললো : লেখো,আমি লিখছি। মানসুর বললো : লেখো,জাফর (সাদিক আ.) কাকে নিজের পর (ইমাম হিসেবে) ওসিয়ত করে গেছে,তাকে তলব করে শিরোচ্ছেদ করো।
তার উত্তরে সে (মুহাম্মাদ বিন সুলাইমান) লিখলো : জাফর বিন মুহাম্মাদ ৫ জনকে ওসিয়ত করে গেছেন : আবু জাফর মানসুর (মানসুর দাওয়ানেকী),মুহাম্মাদ বিন সুলাইমান (মদিনার গভর্ণর),তার দুই পুত্র মুসা (ইমাম কাযিম আ.) ও আব্দুল্লাহ (আফতাহ) এবং হামিদাহ। মানসুর নামগুলোকে দেখার পর বললো : তাদেরকে হত্যা করার কোন উপায় নেই।
ইবনে শাহরে আশুব তার মানাকেব গ্রন্থে দাউদ ইবনে কাসীর রাক্কী হতে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি বলেন: এক বেদুঈন আরব আবু হামযা সুমালী’র নিকট আসলো। আবু হামযা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন : কি সংবাদ এনেছো? বেদুঈন বললো : জাফর সাদিক (আ.) ইন্তেকাল করেছেন। আবু হামযা চিৎকার করে উঠে বেহুশ হয়ে গেলেন। হুশ ফেরার পর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন : তিনি কারো সম্পর্কে ওসিয়ত করে গেছেন (তিনি কি কাউকে নিজের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করে গেছেন)? বেদুঈন বললো : জ্বী,(তারা হলেন) -তার দুই পুত্র- আব্দুল্লাহ ও মুসা এবং আবু জাফর মানসুর (তৎকালীন আব্বাসীয় শাসক)। অতঃপর আবু হামযা হেসে বললেন : প্রশংসা ঐ আল্লাহর যিনি আমাদেরকে হেদায়েত ও পথনির্দেশনা দিয়েছেন এবং আমাদেরকে বড়’র (ত্রুটি) স্পষ্ট করে ছোট’র প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন এবং বৃহৎ একটি বিষয়কে গোপন করেছেন। যখন তার এহেন মন্তব্য সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হল,তখন তিনি বললেন : বড়’র ত্রুটি স্পষ্ট করেছেন এবং ছোটকে প্রমাণিত (সমর্থন) করেছেন... তাকে আওসিয়াদের অন্তর্ভুক্ত বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। মানসুরের নামে ওসিয়ত করে ইমামতের বিষয়টিকে তিনি গোপন করেছেন। কেননা যদি মানসুর ইমামের স্থলাভিষিক্ত সম্পর্কে জানতে চায় তখন তাকে বলা হবে তুমিই ইমামের স্থলাভিষিক্ত। আব্দুল্লাহ যদিও ইমাম সাদিক (আ.) এর বড় সন্তান ছিলেন,কিন্তু তার শারীরীক সমস্যা ছিল,তিনি ছিলেন আফতাহ (যার মাথা বা নাক ছিল অতিরিক্ত চওড়া) এবং ইমামের অন্যতম শর্ত হচ্ছে তিনি সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত হবেন। আর তাছাড়া ধর্মীয় আহকাম সম্পর্কে তার (আব্দুল্লাহ’র) খুব একটা জ্ঞানও ছিল না।
মাসউদী তার মুরুজুয যাহাব গ্রন্থে লিখেছেন : আব্বাসীয় খলিফা মানসুরের খেলাফতকালের ১০ম বছরে ১৪৮ হিজরীতে আবু আব্দুল্লাহ জাফর বিন মুহাম্মাদ বিন আলী বিন হুসাইন বিন আলী বিন আবু তালিব ইন্তেকাল করেন। তাকে জান্নতুল বাক্বী কবরস্থানে তার পিতা ও পিতামহের পাশে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। বলা হয়েছে যে,তাকে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল। (সূত্র : ঐধুিধয.হবঃ)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

যদি কেউ দাড়ি না রাখে তাহলে সে কি ...
পবিত্র ঈদে গাদীর
দাওয়াতে দ্বীনের গুরুত্ব ও ...
কারবালা ও ইমাম হোসাইন (আ.)- ১ম পর্ব
ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাবের ৬ মাস ...
হাসনাইন (ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন) ...
মসনবীর গল্প
অর্থসহ মাহে রমজানের ৩০ রোজার দোয়া
ইমাম হাসান আসকারী (আ.) এর জন্ম ...
সমাজ কল্যাণে আল-কুরআনের ভূমিকা

 
user comment