বাঙ্গালী
Thursday 28th of March 2024
0
نفر 0

সূরা হুদ;(৪র্থ পর্ব)

সূরা হুদ;(৪র্থ পর্ব)



সূরা হুদ; আয়াত ১৩-১৬

সূরা হুদের ১৩ ও ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

  أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ (13) فَإِنْ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَكُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّمَا أُنْزِلَ بِعِلْمِ اللَّهِ وَأَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ فَهَلْ أَنْتُمْ مُسْلِمُونَ (14(

"(কাফিররা) বলে হযরত মুহাম্মদ (সা.) নিজেই এই কুরআন রচনা করেছেন। বলুন! তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে কুরআনের সূরার অনুরূপ ১০টি স্বরচিত সূরা আনয়ন কর এবং আল্লাহ ব্যতীত অপর যাকে পার আহ্বান কর।” (১১:১৩)

“যদি তারা তোমাদের আহ্বানে সাড়া না দেয় তাহলে জেনে রাখ,(এই কুরআন) আল্লাহর পক্ষ হতেই অবতীর্ণ হয়েছে এবং তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। তবে কি তোমরা আত্মসমর্পনকারী হবে না?"(১১:১৪)

আগের পর্বের আলোচনায় আমরা বলেছি, অবিশ্বাসী কাফিররা ইসলাম সম্পর্কে বা পবিত্র কুরআন সম্পর্কে এমন সব মন্তব্য করতো যাতে আল্লাহর রাসূল অনেক সময় মর্মাহত হতেন। এ প্রসঙ্গে এই আয়াতে বলা হয়েছে, কাফিরদের অনেকেই প্রচার করতো কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ কোন কিতাব নয় বরং পয়গম্বর (দ.) নিজেই তা রচনা করেছেন। অবিশ্বাসী কাফিরদের এই প্রচারণার জবাবে এই আয়াতে বলা হয়েছে, কুরআন যদি মানব রচিত গ্রন্থই হয়ে থাকে তাহলে তোমরা কুরআনের কোন সূরার মত সূরা রচনা করে দেখাও, এ ক্ষেত্রে এককভাবে নয় বুদ্ধিজীবী, কবি, সাহিত্যিক সকলে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করে দেখ কুরআনের মত কোন সূরা রচনা করা যায় কিনা।

কুরআনে ১১৪টি সূরা রয়েছে। অবিশ্বাসীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে আল্লাহ এখানে বলেছেন, ১১৪টি সূরার দরকার নেই গোটা দশেক সূরা রচনা করে দেখালেই হবে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী হয়ে রয়েছে যে, কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পর ১৪০০ বছর অতিক্রান্ত হলেও আজ পর্যন্ত কেউ এই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় দাঁড়াতে পারেনি। কুরআনের সূরার মত কোন সূরা আজ পর্যন্ত রচনা করতে সক্ষম হয়নি। এটাই পবিত্র কুরআনের সত্যতার প্রমাণ। হ্যাঁ,পবিত্র কুরআন যে শাশ্বত মুজিজা তা মুসলিম তো বটেই অনেক অমুসলিম পণ্ডিতও এখন তা স্বীকার করেন। কুরআন হচ্ছে মানব জাতির জন্য খোদা প্রদত্ত জীবন বিধান,যা অবতীর্ণ হয়েছে সীমাহীন জ্ঞানের আধার মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। তাই এই বিধান কোন কাল বা স্থানের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। সর্বকালে এবং সর্বত্র এই বিধান প্রযোজ্য। জ্ঞানপাপী কাফিরদের কিংবা কিংবা তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের বিভ্রান্তিকর মন্তব্যে প্রভাবিত না হওয়ার ব্যাপারে মুমিন মুসলমানদেরকে সচেতন থাকতে হবে।

এই সূরার ১৫ ও ১৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لَا يُبْخَسُونَ (15) أُولَئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الْآَخِرَةِ إِلَّا النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا وَبَاطِلٌ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (16(

"যদি কেউ পার্থিব জীবন ও তার শোভা কামনা করে তবে পৃথিবীতেই আমি তাদের কর্মের পরিমিত ফল দান করি এবং পৃথিবীতে তারা কম পাবে না।” (১১:১৫)

“তাদের জন্য পরলোকে নরকের আগুন ছাড়া অন্য কিছু নেই। পার্থিব জীবনে তারা যা করে পরলোকে তা নিষ্ফল হবে এবং তারা যা করে তা নিরর্থক।" (১১:১৬)

এই আয়াতে আল্লাহর রাসূল এবং পবিত্র কুরআনের বিরুদ্ধবাদীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, যারা পার্থিব জগতের সুখ-শান্তি এবং মোহের বশবর্তী হয়ে আল্লাহর বিধানকে উপেক্ষা করবে এবং নিজ অন্তরকে প্রবৃত্তির দাসে পরিণত করবে, এটাই স্বাভাবিক যে পরলোকে তাদের ঠিকানা হবে নরক। তবে এই জগতে যারা আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকাজ করে, বিভিন্নভাবে মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করে তারা তাদের ভালো কাজের প্রতিদান এই পার্থিব জগতেই লাভ করবে। এই পার্থিব জগতে তাদের প্রতিদানের ব্যাপারে কোন কমতি রাখা হবে না। তবে একমাত্র ঈমানদার বিশ্বাসীরাই পরকালীন পুরস্কারের আশা করতে পারে। তবে মহান আল্লাহ হচ্ছেন পরম করুণাময়, তিনি পরকালে হয়ত অনেককে তাদের সৎকর্মের জন্য বেহেশতে প্রবেশ করাবেন, তাদের শাস্তি কিছুটা হ্রাস করে দেবেন।

মানুষের সকল কর্মেরই মূল্যায়ন হবে, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে। মানুষ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির বিষয়টি বিবেচনায় না রেখে পার্থিব উদ্দেশ্যে সৎকর্ম করে তাহলে পরকালে তাতে কোন ফল হবে না। তবে সৃষ্টিকর্তা যেহেতু ন্যায়পরায়ন তাই বস্তুবাদী মানুষের ভালো কাজের পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছেন। এ ধরনের সৎকর্মশীল মানুষ এই পার্থিব জগতেই তাদের প্রতিদান লাভ করে থাকে।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article


 
user comment