বাঙ্গালী
Thursday 25th of April 2024
0
نفر 0

আলী (আ) এর দৃষ্টিতে একটি আদর্শ সমাজের মৌলিক উপাদান

আলী (আ) এর দৃষ্টিতে একটি আদর্শ সমাজের মৌলিক উপাদান

ইমাম আলী (আ) এর মতে কোনো একটি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের যোগ্যতা বিশেষ করে আদর্শ সমাজ পরিচালনায় দায়িত্বশীল যারা তাদের যোগ্যতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাঁর মতে সমাজের প্রত্যেক স্তরেই এ বিষয়টির বাস্তবায়ন সমানভাবে প্রযোজ্য। নাহজুল বালাগায় বর্ণিত ইমাম আলী (আ) এর বক্তব্য অনুযায়ী সমাজ পরিচালনা একটা জটিল এবং কঠিন গুরুদায়িত্ব। হুকুমাতের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রয়োজন যোগ্য,সক্ষম,সৃজনশীল এবং উপযুক্ত দায়িত্বশীল। সেই যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও কাউকে যদি দায়িত্বে বসানো হয় তাহলে তাহলে সেই সমাজের উন্নতি,অগ্রগতি বা পূর্ণতা অর্জিত হবে না। আলী (আ) এ সম্পর্কে নাহজুল বালাগায় বলেছেনঃ শাসকদের যোগ্যতা ছাড়া জনগণের কাজে সাফল্য আসে না। অন্যত্র তিনি বলেছেন-হে জনগণ!শাসন করার উপযুক্ত সে-ই,যে সে ব্যাপারে অপেক্ষাকৃত যোগ্যতরো এবং আল্লাহর আদেশ-নিষেধের ব্যাপারে অপেক্ষাকৃত বেশি জ্ঞানী।
আদর্শ একটি সমাজের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ইমাম আলী (আ) আরো বলেছেন,সেই সমাজই আদর্শ সমাজ যে সমাজে জনগণ ও তাদের শাসকদের যোগ্যতার পরিমাপ যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। তিনি আরো বলেছেন কোনো সমাজে যদি অসাধারণ কোনো কাজ করা হয় তাহলে সেই কাজের মূল কর্তাকে উৎসাহিত করা হয়। বসরার গভর্নরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছিলেনঃ এমন যেন না হয় যে সৎ কর্মশীল আর অসৎ কর্মশীলদেরকে এক দৃষ্টিতে দেখা হয়। সৎকর্মশীলদেরকে সৎ কাজ করার ব্যাপারে কম উৎসাহিত করা আর অসৎ কর্মশীলদেরকে মন্দ কাজের ব্যাপারে প্ররোচিত করা-এমন যেন না হয়।
একটি সমাজের আভিজাত্যর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ যেসব চালিকাশক্তি থাকে তার একটি হলো সেই সমাজে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতার উপস্থিতি। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন স্বাধীন করে। তাই একটি হুকুমাতের ভিত্তিও এই নীতির ওপরই প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। নাহজুল বালাগায় স্বাধীনতার যে বর্ণনা এসেছে তা প্রমাণ করে যে এটা এমন কোনো অধিকার নয় যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা তাদের অধীনস্থ জনগণকে তা হস্তান্তর করবে। এ কারণেই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদেরকে স্বাধীন একটি সমাজ বিনির্মাণের আগে জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন,তোমরা স্বাধীন। কেননা আল্লাহ পাক তোমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।
ইমাম আলী (আ) তাঁর নিজস্ব পথের যথার্থতায় বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু জনগণের ব্যক্তিসত্ত্বাকে তিনি সম্মান করতেন। তাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন তিনি। তাঁর মতে স্বাধীনতার এই মূলনীতিটি বিরোধীদের এমনকি শত্রুদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে মেনে চলা উচিত। এক চিঠিতে ইমাম আলী (আ) লিখেছেন আমি রাসূলে খোদার কাছ থেকে বহুবার শুনেছি ততোক্ষণ পর্যন্ত যথার্থ একটি সমাজ বিনির্মাণ করা যাবে না যতোক্ষণ না সেখানে একজন দুর্বল মানুষ সবলের কাছ থেকে নির্ভয়ে ও অবাধে তার অধিকার আদায় করে নিতে সক্ষম না হবে।
নাহজুল বালাগায় স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ বলতে বোঝানো হয়েছে একটি সমাজের সুখ-শান্তি ও সৌবাগ্যকে। কেননা ইমাম আলী (আ) এর সমাজেই স্বাধীনতার সেই মূল অর্থ বাস্তবে পরিলক্ষিত হয়েছে এবং সেখানে এমনকি খ্রিষ্টানরা এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনও পরিপূর্ণ নিরাপত্তা ও প্রশান্তির মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করেছে। অবশ্য স্বাধীনতা হচ্ছে এমন এক মূল্যবোধ যার ব্যবহারিক বাস্তবতা সরকারের কর্মকর্তাদের গভীর বিশ্বাসের ছত্রছায়া ছাড়া এবং বিশেষ প্রশিক্ষণ ছাড়া অর্জিত হওয়া দুরূপ ব্যাপার।
আদর্শ সমাজের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হলো জনগণকে সমান দৃষ্টিতে দেখা এবং আইন সবার জন্যে সমানভাবে কার্যকর করা। এটা ইসলামের মহান এক অবদান। ইসলাম সমাজে প্রত্যেক মানুষকে ভাই ভাই বলে মনে করে। তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব আর হীনতা নির্ভর করে তাদের মানবিকতা বোধ এবং তাদের তাকওয়ার ওপর। আলী (আ) এর কাঙ্ক্ষিত সমাজেও মানুষের এই সমান অধিকারের বিষয়টি ছিল এবং ইসলামের এই মৌলিক বিধানটি সকল অস্তিত্ব দিয়েই অনুভব করা যেত।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

যদি কেউ দাড়ি না রাখে তাহলে সে কি ...
পবিত্র ঈদে গাদীর
দাওয়াতে দ্বীনের গুরুত্ব ও ...
কারবালা ও ইমাম হোসাইন (আ.)- ১ম পর্ব
ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাবের ৬ মাস ...
হাসনাইন (ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন) ...
মসনবীর গল্প
অর্থসহ মাহে রমজানের ৩০ রোজার দোয়া
ইমাম হাসান আসকারী (আ.) এর জন্ম ...
সমাজ কল্যাণে আল-কুরআনের ভূমিকা

 
user comment