বাঙ্গালী
Tuesday 23rd of April 2024
0
نفر 0

সূরা আল আনফাল; (৬ষ্ঠ পর্ব)

সূরা আল আনফাল; আয়াত ২৬-২৯ সূরা আনফালের ২৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন- وَاذْكُرُوا إِذْ أَنْتُمْ قَلِيلٌ مُسْتَضْعَفُونَ فِي الْأَرْضِ تَخَافُونَ أَنْ يَتَخَطَّفَكُمُ النَّاسُ فَآَوَاكُمْ وَأَيَّدَكُمْ بِنَصْرِهِ وَرَزَقَكُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ “স্মরণ কর তোমরা ছিলে স্বল্পসংখ্যক, পৃথিবীতে তোমরা দুর্বলরূপে পরিগণিত হতে, তোমরা আশঙ্কা করতে যে, লোকেরা তোমাদেরকে অকস্মাত ধরে নিয়ে যাবে। অতঃপর তিনি
সূরা আল আনফাল; (৬ষ্ঠ পর্ব)



সূরা আল আনফাল; আয়াত ২৬-২৯

সূরা আনফালের ২৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَاذْكُرُوا إِذْ أَنْتُمْ قَلِيلٌ مُسْتَضْعَفُونَ فِي الْأَرْضِ تَخَافُونَ أَنْ يَتَخَطَّفَكُمُ النَّاسُ فَآَوَاكُمْ وَأَيَّدَكُمْ بِنَصْرِهِ وَرَزَقَكُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

“স্মরণ কর তোমরা ছিলে স্বল্পসংখ্যক, পৃথিবীতে তোমরা দুর্বলরূপে পরিগণিত হতে, তোমরা আশঙ্কা করতে যে, লোকেরা তোমাদেরকে অকস্মাত ধরে নিয়ে যাবে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে আশ্রয় দেন, স্বীয় সাহায্য দ্বারা তোমাদেরকে শক্তিশালী করেন এবং জীবিকারূপে তোমাদেরকে উত্তম বস্তুসমূহ দান করেন যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।” (৮:২৬)

এই পবিত্র আয়াতে হিজরতের আগে মক্কায় এবং হিজরতের পরে মদীনায় মুসলমানদের অবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের আগে মুসলমানরা অবিশ্বাসী মুশরিকদের হাতে নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছিল। অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে মুসলমানদের জীবন বিষিয়ে তোলা হয়েছিল। কাফের মুশরিকদের নিষ্ঠুরতার হাত থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর রাসূল মুসলমানদেরকে মক্কা ছেড়ে বিভিন্ন দেশে হিজরত করার নির্দেশ দেন। এরপর কেউ হাব্‌শায় (বর্তমান ইথিওপিয়া), কেউ ইয়েমেন, আবার কেউ তায়েফে হিজরত করেছিলেন। এরপর যারা আল্লাহর রাসূলের আগে বা পরে মদীনা শরীফে হিজরত করেছিলেন তাদের কোনো সহায় সম্বল ছিল না। তারা সম্পূর্ণ নিঃস্ব অবস্থায় নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে মদীনায় হিজরত করেছিলেন। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মহান আল্লাহ মুসলমানদেরকে এই কঠিন অবস্থা থেকে উদ্ধার করেন এবং একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধশালী জাতিতে পরিণত করেন। এই আয়াতে মহান আল্লাহ ইসলামের প্রথম যুগের কঠিন অবস্থা এবং পরবর্তীতে তাদেরকে অফুরন্ত নেয়ামত দেয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যাতে মুসলমানরা কৃতজ্ঞ হতে পারে।

সূরা আনফালের ২৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَخُونُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ

“হে বিশ্বাসীগণ! জেনে শুনে আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে বিশ্বাসভঙ্গ করবে না এবং তোমাদের পরস্পরের গচ্ছিত দ্রব্য বা আমানতের ব্যাপারেও তা করবে না।” (৮:২৭)

আগের আয়াতে মদীনায় মুসলমানদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং তাদের উন্নতির কথা বলা হয়েছে। এই আয়াতে মুসলমানদেরকে সৎর্ক করে বলা হচ্ছে তারা যেন, বৈষয়িক স্বার্থে আল্লাহ, তার রাসূল এবং মুসলিম উম্মাহ'র সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করেন। এই আয়াতের শানে নুযুল হচ্ছে, মুসলমানদের সঙ্গে ইহুদি এক গোত্রের বিবাদের সময় একজন মুসলমান গোপনে মুসলিম বাহিনীর পরিকল্পনার কথা শত্রু পক্ষকে অবহিত করেছিল। অবশ্য ওই সাহাবী ঘটনার পরপরই তার কাজের জন্য ভীষণ অনুতপ্ত হয়ে তওবা করেছিলেন এবং আল্লাহর দরবারে তার তওবা কবুলও হয়েছিল। মুফাসসিররা মনে করেন, ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াতটি নাজিল হয়েছিল।

ইসলামী পরিভাষায় ‘আমানত’ শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। এই আমানত বৈষয়িক এবং অবৈষয়িক হতে  পারে। কারো গচ্ছিত সম্পদ বা গোপন কথা আমানত হিসেবে বিবেচিত হয়। তেমনি আল্লাহর দেয়া ধর্ম বা জীবন-দর্শন এমনকি আমাদের দেহ-প্রাণ, সন্তান-সন্ততি সবই হচ্ছে আমানত। তা রক্ষা করা ইমানী দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে বিশ্বাসভঙ্গ করা মুনাফেকির লক্ষণ।

সূরা আনফালের ২৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَاعْلَمُوا أَنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ وَأَنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ

“জেনে রাখো যে, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো এক পরীক্ষা এবং নিশ্চয়ই (এই পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবে তাদের জন্য) আল্লাহর নিকট রয়েছে মহা পুরস্কার।” (৮:২৮)

এখানে লক্ষ্য করার মত একটি বিষয় হচ্ছে, আগের আয়াতটিতে বিশ্বাস ভঙ্গ না করতে এবং আমানতের খেয়ানত না করার জন্য মুসলমানদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই আয়াতে এ ধরনের গর্হিত কাজে প্রধান যে দুটি জিনিস মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে সে দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। মুসলমানদেরকে সৎর্ক করে দিয়ে এখানে বলা হচ্ছে, তারা যেন সম্পদ বা নিজ স্বার্থের জন্য কিংবা সন্তানদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি না দেয়। নিজের সন্তানদেরকে তুষ্ট করার জন্য বা ধন-সম্পদ রক্ষার জন্য অন্যকে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে যেন বঞ্চিত করা না হয়।

সাধারণত মানুষ যেসব অন্যায় করে যেমন, যাকাত, খুমস না দেয়া, প্রতারণা বা মিথ্যার আশ্রয় নেয়া, অন্যায় ও দুর্নীতির ব্যাপারে আপোষ করে চলা, এসবই কিন্তু করে থাকে অর্থ-সম্পদ বা সন্তান-সন্ততির মায়া বা আকর্ষণেই। কাজেই মহান আল্লাহ এই আয়াতে সম্পদ এবং সন্তান-সন্তুতিকে বড় পরীক্ষা হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং সতর্ক করে দিয়েছেন মুমিন বিশ্বাসীরা যেন অর্থ-সম্পদ বা সন্তানের মোহে পড়ে বিভ্রান্ত না হয়ে পড়েন।

হ্যাঁ, আল্লাহতালা যেন আমাদের সকলকে সৎ পথে চলার তাওফিক দান করেন, আমাদের সন্তানদেরকেও যেন সৎ এবং আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। কারণ আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ছাড়া শয়তান এবং কুপ্রবৃত্তির প্ররোচনা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়।

সূরা আনফালের ২৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنْ تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ

“হে  বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে আল্লাহ তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দেবেন। তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতিশয় মঙ্গলময়।” (৮:২৯)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, যারা আল্লাহকে ভয় করে, নিজেদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ রাখে তারাই খোদায়ী পরীক্ষায় সফলতা লাভ করতে পারে। যারা মুমিন বিশ্বাসী তারা তাদের খোদাভীতি এবং সৎ কাজের জন্য এ ধরনের আত্মিক শক্তি অর্জন করেন যার মাধ্যমে তারা সত্য ও অসত্যের মধ্যে এবং ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে একটা পার্থক্য দেখতে পান। ফলে তারা যেকোনো ধরনের বিভ্রান্তি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন। তারপরও তারা যদি মানবীয় দুর্বলতার কারণে কখনো কোনো ভুল করে ফেলেন তাহলে মহান আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং তাদের ভুল-ত্রুটিগুলো গোপন রাখেন। সৎকর্মশীল এবং সুন্দর মনের মানুষের প্রতি মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ সব সময়ই বিশেষ অনুগ্রহ করে  থাকেন।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

ইসলাম এবং আধ্যাত্মিকতা
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ...
কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনা : একটি ...
কোরআনের দৃষ্টিতে মহান আল্লাহর ...
উলিল আমর
আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.) এর ...
মক্কায় দুর্ঘটনায় ৫ ইরানি নিহত; ...
রমজান: খোদা-প্রেমের অসীম সাগর (১২)
মহৎ গুণাবলির আকর হযরত যয়নাব (আ.)
দুঃখ-কষ্ট মোকাবেলার উপায়

 
user comment