বাঙ্গালী
Wednesday 24th of April 2024
0
نفر 0

জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ?

অনেক লোক হযরত আলীকে (আ.) ঘিরে মসজিদে বসেছিল। একজন ভদ্রলোক মসজিদে প্রবেশ করলো এবং সুযোগ বুঝে প্রশ্ন করলো: ** হে আলী ! আমার একটি প্রশ্ন আছে। আর তা হচ্ছে এই যে, জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ? - উত্তরে আলী (আ.) বললেন: জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা জ্ঞান হচ্ছে নবীদের মি'রাসী সম্পদ আর ধন -সম্পদ হচ্ছে কারুন, ফেরাউন, হামান ও শাদ্দাদের মি'রাসী সম্পদ।
জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ?

অনেক লোক হযরত আলীকে (আ.) ঘিরে মসজিদে বসেছিল। একজন ভদ্রলোক মসজিদে প্রবেশ করলো এবং সুযোগ বুঝে প্রশ্ন করলো:
** হে আলী ! আমার একটি প্রশ্ন আছে। আর তা হচ্ছে এই যে, জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ?
- উত্তরে আলী (আ.) বললেন: জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা জ্ঞান হচ্ছে নবীদের মি'রাসী সম্পদ আর ধন -সম্পদ হচ্ছে কারুন, ফেরাউন, হামান ও শাদ্দাদের মি'রাসী সম্পদ।
লোকটি যে নিজের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে চুপ হয়ে গেল।
এমন সময় আরেক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলো এবং যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিল প্রশ্ন করলো:
** হে আবাল হাসান ! আমার একটি প্রশ্ন আছে জিজ্ঞেস করার অনুমতি আছে কি ? ইমাম (আ.) উত্তরে বললেন: অনুমতি রয়েছে জিজ্ঞেস করতে পারো ! লোকটি যেহেতু সবার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল জিজ্ঞেস করলো:
** জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ?
- আলী (আ.) বললেন: জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা জ্ঞান তোমাকে রক্ষা করবে, কিন্তু ধন -সম্পদকে তুমি রক্ষা করতে বাধ্য।
দ্বিতীয় ব্যক্তিটিও যে, তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে সন্তুষ্ট হয়ে গিয়েছিল, যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল বসে পড়লো।
** এবার তৃতীয় ব্যক্তি প্রবেশ করলো, সেও পুনর্বার একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো।
- আর ইমাম (আ.) তার উত্তরে বললেন: জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা জ্ঞানী ব্যক্তির অনেক বন্ধু রয়েছে, কিন্তু ধনী ও সম্পদশালী ব্যক্তির শত্রু হচ্ছে বেশি।
তখনও ইমামের (আ.) কথা শেষ হয়নি চতুর্থ ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলো। সে তার বন্ধুদের পাশে বসে হাতের আ'সা (লাঠি) সামনে রাখলো এবং জিজ্ঞেস করলো:
** হে আলী ! জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ?
- হযরত আলী (আ.) সেই লোকটির উত্তরে বললেন: জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা যদি সম্পদ হতে তুমি ব্যয় কর তা কমতে থাকবে; কিন্তু যদি জ্ঞান হতে কাউকে শিক্ষা দান কর তা বৃদ্ধি পাবে।
** এবার ছিল পঞ্চম ব্যক্তির পালা। কিছুক্ষণ পূর্বে সে মসজিদে প্রবেশ করে মসজিদের কোন এক স্তম্ভের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। ইমামের (আ.) কথা শেষ হতেই পুনর্বার সে একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো।
- হযরত আলী (আ.) সেই লোকটির উত্তরে বললেন: জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা জনগণ ধনী ও সম্পদশালী ব্যক্তিকে কৃপণ মনে করে, কিন্তু আলেম ও জ্ঞানী ব্যক্তিকে মহত্ত্ব ও সম্মানের সাথে মনে করে।
** ষষ্ঠ ব্যক্তি প্রবেশ করার সাথেই সবাই পেছনে ফিরে তাকালো, আশ্চর্যের সাথে সবাই তার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। জনসমষ্টির মধ্য হতে একজন বলে উঠলো: অবশ্যই এ লোকটিও জানতে চায় যে, জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ! যারা তার কথা শুনছিল, ব্যঙ্গাত্মক ভাবে হাসলো। লোকটি, সবার পেছনে বসে উচ্চস্বরে বলতে শুরু করলো:
হে আলী ! জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ?
- ইমাম (আ.) জনগণের দিকে একবার ফিরে তাকালেন, অতঃপর বললেন: জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা ধন সম্পদকে চোর চুরি করে নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু জ্ঞান চুরি হওয়া সম্পর্কে কোন ভয় ভীতি নেই। লোকটি চুপ হয়ে গেল। জনগণের মধ্যে হৈ চৈ শুরু হয়ে গেল; আজ কি হল ! সবাই কেন একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছে ? আশ্চর্য ভাবে সবার দৃষ্টি একবার হযরত আলীর (আ.) দিকে এবং আরেকবার নতুন প্রবেশকারী লোকদের উপর উপবিষ্ট হয়ে রইলো।
এমন সময় সপ্তম ব্যক্তি যে, হযরত আলীর (আ.) কথা শেষ হবার কিছুক্ষণ পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করেছিল এবং জনগণের মাঝখানে বসেছিল, জিজ্ঞেস করলো:
** হে আবাল হাসান ! জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ?
- ইমাম (আ.) হাত তুলে সবাইকে নীরব থাকার ইশারা করে বললেন: জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে সম্পদও পুরনো হয়ে যায় কিন্তু জ্ঞান যতই তার সময় যাক না কেন নষ্ট হয় না। লোকটি আস্তে আস্তে উঠলো এবং তার বন্ধুদের পাশে গিয়ে বসলো; তারপর বন্ধুদের দিকে ফিরে বললো: নবীর (সা.) কথা অনর্থক ছিল না যে, বললেন: আমি জ্ঞানের শহর ও আলী (আ.) তার তোরণ ! তার কাছে যা জিজ্ঞেস করেছি, প্রত্যেকটির জবাব তার কাছে ছিল। জনগণের সামনে আমরা হাসির পাত্র না হয়ে যাই তাই অন্যদেরকে আসতে বারণ করে দেয়াটা ভাল হবে ! যে লোকটি তার পাশে বসেছিল বললো: কে বলতে পারে হয়তো যে কয়েকজন বাকি আছে তাদের প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যর্থও হতে পারে। তখন জনগণের সামনে অপমানিত হবে আর আমরা আমাদের উদ্দেশ্যে পৌঁছে যাবো ! এক ব্যক্তি যে, দুরে বসেছিল বললো: যদি সঠিক উত্তর দিয়ে দেয় তখন কি হবে ? তখন আমাদেরকে জনগণের সামনে অপমানিত হতে হবে ! লোকটি শান্তভাবে বললো: তোমাদের কি হয়েছে ? এখনই পিছপা হয়ে যাচ্ছ ! আমাদের কথা কি ছিল, তা কি ভুলে গেছ ? আমাদেরকে অবশ্যই নবী করিম (সা.) যা বলেছেন তার বিপরীত কথা প্রমাণ করতে হবে।
** এমন সময় অষ্টম ব্যক্তি প্রবেশ করে পূর্বের প্রশ্নটিই জিজ্ঞেস করলো:
- ইমাম (আ.) তার উত্তরে বললেন: জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা ধন -সম্পদ শুধুমাত্র মৃত্যু পর্যন্ত তার মালিকের সাথে থাকে, কিন্তু জ্ঞান, এ পৃথিবীতে এবং মৃত্যুর পরও মানুষের সাথে থাকে।
সবাই চুপ হয়ে গিয়েছিল, কেউই কোন কথা বলছিল না। সবাই ইমামের উত্তর শুনে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল যে, ...
** নবম ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে এবং জনগণের বিস্ময় ও আশ্চর্যের মধ্যেই জিজ্ঞেস করলো: হে আলী ! জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ?
- ইমাম (আ.) মুচকি হেসে বললেন: জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা ধন -সম্পদ মানুষকে নিষ্ঠুর করে দেয়, কিন্তু জ্ঞান মানুষের মনকে আলোকিত করে দেয়।
জনগণের বিস্মিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় চোখ দরজার পানে চেয়ে ছিল, মনে হচ্ছিল সবাই দশম ব্যক্তির অপেক্ষা করছিল। এমন সময় এক ব্যক্তি বাচ্চার হাত ধরে মসজিদে প্রবেশ করে। সে সবার শেষে বসে এক মুঠো খেজুর শিশুটির হাতে দিল এবং সামনের দিকে তাকালো। জনগণ যারা চিন্তা করছিল যে হয়তো আর কেউ কিছু জিজ্ঞেস করবে না, সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলো, এমন সময় লোকটি জিজ্ঞেস করলো:
** হে আবাল হাসান ! জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ? সবার বিস্মিত চোখ পেছনের দিকে তাকালো। আলীর (আ.) কথা শুনে সবাই ফিরে তাকালো:
- জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা ধনী ও সম্পদশালী ব্যক্তিরা অহংকারী হয়, এমন কি কখনও প্রভু হওয়ার দাবীও করে বসে, কিন্তু জ্ঞানী ব্যক্তিরা সব সময় বিনয়ী হয়। জনগণের হৈ চৈ, হট্টগোল, খুশি ও প্রশংসাতে কিছু শোনা যাচ্ছিল না। প্রশ্নকারীরা আস্তে আস্তে চুপচাপ জনগণের মাঝখান থেকে উঠে চলে গেল। যখন তারা মসজিদ থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল ইমামের (আ.) আওয়াজ শুনতে পেল যে, তিনি বলছিলেন: যদি পৃথিবীর সকল লোক এই একটি প্রশ্নই আমার কাছে জিজ্ঞেস করতে থাকে, তাদের প্রত্যেককে আমি বিভিন্ন রকম উত্তর দিতাম।(তাকরিবে মাযাহেব)


ইরানের বিস্ময়কর সাফল্য ও বিশ্ব ইসলামী জাগরণ
•    ফন্টের আকার   
•    প্রিন্ট
•    Comments (1)
 ড. জহির উদ্দিন মাহমুদ
(ড. জহির উদ্দিন মাহমুদ)
ইতিহাসের এক চরম সন্ধিক্ষণে আইয়ামে জাহেলিয়াতের শত দেবতার নিষ্পেষণ থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) নিপীড়িত মানবতাকে মুক্তি দিয়েছিলেন। মানবজাতি প্রত্যক্ষ করেছিল এক অকৃত্রিম শাশ্বত ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ইসলামের সে অবিকৃত রূপ থেকে মানুষ আবারো দূরে সরে গিয়েছিল। বিজ্ঞানের পরম উৎকর্ষের পাশাপাশি নৈতিক চরিত্রের চরম অধঃপতন, সাম্রাজ্যবাদী শোষক শ্রেণির হিংস্র আগ্রাসন, দেশে দেশে মুক্তিকামী মজলুম জনতার করুণ আহাজারি যখন পৃথিবীকে ভারাক্রান্ত করে তুলেছিল তখনই পারস্যের শাহী লৌহ প্রাচীর ভেদ করে মহান নেতা ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর নেতৃত্বে সংঘটিত ইসলামী বিপ্লব মানবজাতির সামনে আবারো সেই চিরন্তন সত্যবাণী ঘোষণা করল- ‘সত্য এসেছে, মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, মিথ্যা তো বিলুপ্ত হবারই’। (সূরা বনি ইসরাইল : ৮১)
 
বিশ্ব-ইহুদি চক্রের হাতে বন্দি পৃথিবীর মানুষগুলো আবার নতুন করে ভাবতে শিখল। অভ্যন্তরীণ শত্রুদের অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা ও বহিঃশত্রুর কূটনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক আগ্রাসন আর অব্যাহত অপপ্রচারের প্রবল লড়াই মোকাবিলা করে ৩৩ বছর ধরে ইসলামী বিপ্লব বিশ্ব-মুসলমানের জন্য এক অনুকরণীয় আদর্শ রূপে অটল থেকে আজ ৩৪তম বার্ষিকীতে পদার্পণ করছে। সমকালীন বিশ্বে সংঘটিত এত বড় ঘটনার পরবর্তী তিন দশক খুব একটা দীর্ঘ সময় নয়। এ অল্প সময়েই সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব-শয়তানি চক্র এ ইসলামী বিপ্লবের প্রতি নানাভাবে তাদের মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এর কারণ হিসেবে অনেকে মনে করেন শত শত বছর ধরে এই শোষক পুঁজিবাদী ইহুদি গোষ্ঠী বিশ্বের তাবৎ জনগোষ্ঠীর চোখে ধুলা দিয়ে বিশ্বকে একচেটিয়াভাবে শোষণ করে আসছিল- ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের কারণে যেন তাতে ছেদ পড়ল। বিশেষ করে বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনীর সময়োপযোগী, জাগরণী ও সুনির্দিষ্ট তথ্যবহুল বাণীসমূহ ধীরে ধীরে যখন মানুষের চোখ খুলে দিচ্ছিল তখনই এই বিশ্বলুটেরা গোষ্ঠী এ বিপ্লব ও তার নেতার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। বিশ্বব্যাপী তাদের নিয়ন্ত্রিত সকল মিডিয়া ও তাদের দোসরদের মাধ্যমে এ ইসলামী বিপ্লব ও ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে তারা পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার প্রচেষ্টা চালালো। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদীদের সকল হিসাবকে ভুল প্রমাণ করে এ বিপ্লব স্ব মহিমায় এগিয়ে যাচ্ছে।
 
ইরানে ইসলামী বিপ্লব সংঘটনের পর থেকে যেসব বাধার সম্মুখীন হয় তার মধ্য থেকে কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো-
 
১. অপপ্রচার : ইসলামী বিপ্লব ও তার নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে অপপ্রচার চালিয়ে বিকৃত চিত্র প্রদানের চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন :
ক. ইসলামী বিপ্লব ইরানকে একটি পশ্চাৎপদ দেশে পরিণত করেছে;
খ. ইসলামের উদারনীতির বিপরীত একটি উগ্র ধারা গড়ে তুলেছে;
গ. রাজা-বাদশাহশাসিত তথাকথিত আধুনিক আরব দেশগুলোতে ইরান আগ্রাসন চালিয়ে দখল করবে; ইরানের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ও গবেষণা কাজের স্বার্থে সাম্প্রতিক পরমাণু সক্ষমতা অর্জন ও মিসাইল প্রযুক্তির অগ্রগতি সম্পর্কেও প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে ইরান সম্পর্কে একটি ভীতি তৈরি করা।
ঘ. ইরান পুরাতন পারস্য সাম্রাজ্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাবে;
ঙ. ইরানের বিপ্লব একটি শিয়া বিপ্লব। এর লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী শিয়া সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা;
চ. শিয়ারা মুসলমান নয়; বরং তারা একটি ভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী, একটি বিভ্রান্ত সম্প্রদায় ইত্যাদি। এমনকি শিয়া মুসলমানদেরকে ইহুদিদের দোসর বলে প্রচার করা;
ছ. এ বিপ্লব নারী অধিকার পদদলিত করছে;
জ. এ বিপ্লব গণতন্ত্র, মানবতা, বাক-স্বাধীনতাবিরোধী।
 
২. অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা : ইরানের বিপ্লব-বিরোধী অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে বিপ্লবের প্রতি নিবেদিত অসংখ্য দেশপ্রেমিক নেতাকে গুপ্তহত্যা করা হয়। গুপ্ত হামলায় ১৯৭৯ সালের ১ মে আয়াতুল্লাহ মোতাহহারীর শাহাদাত, ১৯৮১ সালের ২৮ জুন ড. বেহেশতীসহ ৭২জন নেতার শাহাদাত, ১৯৮১ সালের ৩০ আগস্ট প্রেসিডেন্ট রাজাই ও প্রধানমন্ত্রী বাহুনারের শাহাদাত সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশবিশেষ। বিপ্লবের প্রথম দশকে বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মোস্তফা চামরান (১৯৮১) ও সাম্প্রতিককালে চারজন পরমাণু বিজ্ঞানী গুপ্তহত্যার শিকার হন। জুন্দুল্লাহ বাহিনীর গুপ্তঘাতকের পাতা বোমায় শহীদ হন জেনারেল নূর আলী শুসতারী। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পূর্বে ও পরে এ বিপ্লবের সফলতার জন্য প্রাণ দেন লক্ষাধিক মানুষ।
 
৩. আগ্রাসন : বাথপন্থী জল্লাদ চরিত্রের সাদ্দামকে দিয়ে ইরানের ওপর আগ্রাসন চালিয়ে নয় বছর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ অব্যাহত রাখা হয়। ইরানের বাইরে অনেক ইসলামী নেতাকে হত্যা ও গুম করা হয়। এ যুদ্ধে প্রায় দুই লক্ষ ইরানী দেশপ্রেমিক শহীদ হন। পারস্য উপসাগরে ইরানী এয়ারবাসে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ভূপাতিত করা (১৯৯০), যে হামলায় ২৯২ জন যাত্রী নিহত হন, মার্কিন গুপ্তচরদের উদ্ধার করার জন্য ইরানের তাবাস মরুভূমিতে অভিযান (২৫ এপ্রিল, ১৯৮০), মক্কায় হারাম এলাকায় তিন শতাধিক হাজীকে শহীদ করা (১৯৮৭) এসব আগ্রাসনেরই অংশ ছিল।
 
৪. বিপ্লবের নেতৃবৃন্দের মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির প্রয়াস : ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিভিন্ন নেতার মাঝে কাউকে কট্টরপন্থী, কাউকে উদারপন্থী বলে প্রচার করে তাঁদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টির চেষ্টা এবং বহির্বিশ্বে তা ফলাও করে প্রচার করা।
 
৫. পণ্য আমদানিতে বাধা : বিজ্ঞান ও প্রকৌশলগত গবেষণার জন্য অতীব প্রয়োজনীয় সামগ্রী, বিমান ও অন্যান্য বাহন ও যন্ত্রপাতির স্পেয়ার পার্টস ইত্যাদি (যখন ইরান এসবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় নি) ইরানে আমদানি করতে বাধা দেয়া। একইভাবে বাণিজ্যিক লেনদেনে বাধা প্রদান।  
 
৬. শিয়া-সুন্নি বিরোধ উস্কে দেয়া : দেশে দেশে শিয়া-সুন্নি বিষয়টিকে ইস্যু বানানো। এমনকি বিভিন্ন দেশে শিয়াদের ও ইরানী কূটনীতিকদের গুপ্তহত্যা করা। যেসব দেশে ৭০:৩০, ৬০ : ৪০, ৮০ :২০ অনুপাতে শিয়া-সুন্নি জনসংখ্যা বিরাজ করছে সেখানে সুন্নি জনগোষ্ঠী ও নেতৃবৃন্দকে শিয়াদের সাথে শত শত বছর ধরে চলে আসা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও যৌথ ব্যবসায়ে বাধা দেয়া। শিয়াদের সাথে না মিশতে ভীতি প্রদর্শন, এমনকি শিয়াদের সাথে যৌথ সরকারে বা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করলে হুমকি ও হত্যাকাণ্ডও চালানো হয় (ইরাক, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে)।
 
৭. বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডে বাধা প্রদান : পারমাণবিক ও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক সক্ষমতা অর্জনে বাধা দেয়া হয়। এ কাজে সফল না হয়ে ‘ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে’ এই মিথ্যা অভিযোগের ধুয়া তুলে ইরানের প্রতি অব্যাহত অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ ও ইরানে আগ্রাসন চালানোর হুমকি প্রদান করা হয়। গোয়েন্দা ড্রোন পাঠিয়ে ইরানের প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য সক্ষমতা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য ইরানের সীমানা অতিক্রমের চেষ্টা করা হয়। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার রুটিন পরিদর্শক দলের কাছ থেকে ইরানের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানের চিত্র ও তথ্য হস্তগত করার চেষ্টা করা হয়, যে সম্পর্কে ইরান অনেকবার অভিযোগ করেছে।
 
৮. সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য ইরান ও ইসলামপন্থীদের দায়ী করা : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জনপদে সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী তাদের ভাড়াটে লোকদের দিয়ে বোমা হামলা চালিয়ে কাজটি ইরান করেছে বলে প্রচার করা ও ইরানকে অভিযুক্ত করার চেষ্টা করা হয়। নাইন-ইলেভেনের ঘটনা এবং এর ধারাবাহিকতায় ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা এর সবচেয়ে বড় ঘটনা।
 
৯.  বিশ্বে ইসলামকে কদর্য রূপে তুলে ধরা : সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী ও তাদের বাদশাহী দোসরদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মুসলমানদের স্বল্পজ্ঞানী ও স্বল্প তথ্যজ্ঞানসম্পন্ন মোটা বুদ্ধির মোল্লাদের দিয়ে আল-কায়েদা, তালেবান, সিপাহ-ই সাহাবা ইত্যাদি বিভিন্ন নাম দিয়ে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী গ্রুপ তৈরি করা হয়। এসব গ্রুপের নামে বিভিন্ন দেশে (প্রায় সবগুলোই মুসলিম দেশে) নিরীহ মানুষদের হত্যা করা, ঐতিহাসিক নিদর্শন ধ্বংস করা, ইসলাম ও মহানবী (সা.)-এর স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহের চিহ্ন ধ্বংস করা, নারীশিক্ষা বন্ধ করা, টেলিভিশন দেখা বন্ধ করা ও অনুরূপ কাজ করে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী এক বিকৃত চিত্র প্রকাশ করা হয়, ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে একটি ভীতিকর ভাব তুলে ধরার চেষ্টা। এসব দুর্ঘটনার ডামাডোলে বেছে বেছে মেধাবী ইসলামী ব্যক্তিত্বদের হত্যা করা হয়।
 
১০. তথ্যের অবাধ প্রবাহে বাধা দান : ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের নেতৃবৃন্দের বাণী, বক্তব্য, বিভিন্ন ডকুমেন্ট অন্যান্য দেশে বিশেষ করে গণ ও প্রচারমাধ্যমসমূহে প্রচারে বাধা দেয়া হয়। নিতান্তই কিছুটা প্রচার করলেও তা বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়।
 
১১. তথাকথিত নেতৃত্বের প্রচারণা : ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতৃত্বের আবহ যেন অন্যান্য মুসলিম দেশে না পড়ে সেজন্য সাদ্দাম, গাদ্দাফি, মাহাথির মোহাম্মদ, লাদেন, মোল্লা ওমর, আইমান আল জাওয়াহিরি প্রমুখ ব্যক্তিদের নিয়ে সারা বছর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মিডিয়া কভারেজ দেয়া- তাদের কণ্ঠে সর্বদা রণহুঙ্কারের তথ্য প্রচার, অন্যান্য ধর্মের লোকদের হত্যা করার ঘোষণা, অন্যান্য দেশের স্থাপনায় হামলার ঘোষণা মিডিয়ায় ফলাও করে আসতে থাকে। অথচ আজ পর্যন্ত ঐসব ব্যক্তির কোনো কর্মসূচি, মেনিফেস্টো, ফলো আপ বিশ্ববাসী দেখে নি। এরা সবসময়ই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের তথাকথিত ছায়াশত্রু । এদের হুমকি ও আক্রমণের ছুতা দেখিয়ে মুসলমানদের বিভিন্ন স্থান ও সম্পদ দখল করাই মার্কিনিদের চিরাচরিত কর্মপদ্ধতি।
 
১২. ইরানবিরোধী চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা : ইতিমধ্যে হলিউডসহ পাশ্চাত্যের বিভিন্ন চলচ্চিত্র ধারায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ চরিত্র চিত্রায়িত করে প্রচুর ইরানবিরোধী চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। সর্বশেষ উদাহরণ হলো হলিউড নির্মিত চলচ্চিত্র ARGO। একইভাবে প্রচুর পুস্তক, সাময়িকীর মাধ্যমে, এমনকি উচ্চতর অ্যাকাডেমিক গবেষণা (Ph.D) থিসিসের মাধ্যমেও ইরানের ইসলামী বিপ্লব ও এর নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে বিকৃত ও ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
 
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বিরুদ্ধে উপরিউক্ত পদ্ধতিতে বাধার প্রাচীর সৃষ্টি করা ছাড়াও আরো বহুমুখী পদ্ধতিতে ইরানের এ বিপ্লবের প্রতি নেতিবাচক আচরণ করা হয়।
 
এবার আমরা ইসলামী বিপ্লব সংঘটনের পর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বলয়ে যে মৌলিক বিষয়গুলো অর্জন করেছে সেগুলো সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরছি-
 
১. ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা : ১৯৭৯ সালে মহান আল্লাহর সার্বভৌমত্বের মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ গণভোটে ৯৮% ভোট পেয়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং গত ৩৩ বছরে বিভিন্ন পর্যায়ে ৩০টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগসহ সব ধরনের Infrastructure-ই আধুনিক ইসলামী প্রজাতন্ত্রে বিদ্যমান। ইরানে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণই স্বাধীন। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান কুরআন-সুন্নাহ ও আহলে বাইতের শিক্ষার ওপর প্রতিষ্ঠিত।
 
২. নাগরিক সুবিধা প্রদান : ইসলামী ইরানে সকল মানুষ সকল মৌলিক নাগরিক সুবিধা- খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, মত প্রকাশের সুবিধাদি ভোগ করছে। বর্তমানে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রত্যেক নাগরিক মাসিক ৪৫০০০ তুমান করে নিয়মিত ভাতা পাচ্ছে। স্বল্প আয়ের জনগণ কম খরচে ও ঋণ সুবিধা পেয়ে গৃহের মালিক হচ্ছে। নব বিবাহিতরা গৃহায়ন ঋণ পাচ্ছে। বিপ্লবের পরপরই প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানি, স্কুল-কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে তাৎক্ষণিক নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
 
৩. সামাজিক নিরাপত্তা ও ইসলামী পরিবেশ : ইরান বর্তমান বিশ্বে একটি বিরল রাষ্ট্র যেখানের জনগণ বিশেষ সামাজিক নিরাপত্তা ভোগ করছে। দিনে-রাতে সর্বক্ষণ সকল নারী-পুরুষ নিরাপদে রাস্তাঘাটে চলাচল করতে পারে। শালীন পোশাক, নারীর হিজাব মেনে চলা ও প্রচারমাধ্যমে অশ্লীলতার চিহ্ন না থাকায় অপরাধ-প্রবণতা নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
 
৪. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অসামান্য সাফল্য : একের পর এক যুদ্ধ, অবরোধ, পাশ্চাত্যের অসহযোগিতা, হুমকি ও সর্বশেষ সাম্প্রতিক বিশেষ অর্থনৈতিক অবরোধের (যার ফলে তেল রপ্তানি এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে) মুখে তাদের ধর্মীয় নেতার নির্দেশে ইরানের বিজ্ঞানীরা চরম আত্মত্যাগ ও সাধনার মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শনৈ শনৈ উন্নতি করছে যার সংক্ষিপ্ত খতিয়ান এ নিবন্ধের শেষে সংযুক্ত করা হবে। বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে ইরানের বিজ্ঞানীদের অগ্রগতি বর্তমানে সমগ্র বিশ্বের বিজ্ঞানীদের গড় অগ্রগতির চেয়ে ১১ গুণ দ্রুততর (Fastest)। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে স্বল্পতম সময়ে তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্বের প্রথম ৫টি দেশের মাঝে স্থান করে নেবে। শান্তিপূর্ণ কাজে ইরানের বিজ্ঞান গবেষণা কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে Iranian Technology for Peace and Human Prosperity সংস্থার রয়েছে ওয়েবসাইট http://diplotech.isti.ir/
 
৫. ধর্মের আলোকে সাংস্কৃতিক বিপ্লব : ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর অনেক ইসলামপন্থী ও সেকুলার (ধর্মনিরপেক্ষ) জনগণ মনে করেছিল ইরান বোধ হয় ইসলামের প্রথম যুগের উমাইয়্যা ও আব্বাসী খলিফাদের মতো রাজ্যজয় ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করবে এবং একের পর এক অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ভূখণ্ডে ইসলামী হুকুমত কায়েম করবে। কিন্তু ইরানীরা তাদের ভাষায়-- প্রকৃত মুহাম্মাদী ইসলাম যা তাঁরা মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইতের ইমামদের রেওয়ায়েত ও জীবন থেকে শিক্ষা নিয়েছে-- সে ধারায় রাজ্যজয় ধরনের কোনো জবরদস্তিমূলক হুকুমত কায়েমের ধারায় বিশ্বাস করে না। তারা মহানবী (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের শিক্ষা ও কুরআনের সংস্কৃতির বিকাশ করতে চায়-- প্রকৃত ইমাম ও রাহবারের নেতৃত্বে জীবনকে ঢেলে সাজাতে চায়-- সে আলোকে একটি সমাজ যদি সত্যিই পরিপুষ্টতা (maturity) লাভ করে তাহলে স্বাভাবিক গতিতে জনগণের মাধ্যমে রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আর একবার যদি সঠিক যোগ্যতাসম্পন্ন মুজতাহিদ এর অধীনে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে অভ্যন্তরীণ শত্রু (মুনাফিক) ও বহিঃশত্রুর হাত থেকে তার প্রতিরক্ষা করা তাদের দৃষ্টিতে ফরয হয়ে দাঁড়ায়।
 
ক. এ ধারায় ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সারা দেশে ও বহির্বিশ্বে সকল বয়সী ও সকল পেশার মানুষের মাঝে কুরআন শিক্ষা প্রোগ্রাম ছড়িয়ে দিয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কুরআন তেলাওয়াত ও হিফজ প্রতিযোগিতার আয়োজন ও অংশগ্রহণ ব্যাপক করেছে। কুরআনের বিভিন্ন কাহিনিনির্ভর চলচ্চিত্র ও সিরিয়াল তৈরি করেছে। যেমন- মারইয়াম মুকাদ্দাসা, মুল্কে সুলায়মান, হযরত ইউসুফ, মারদানে আনজালোস (আসহাবে কাহাফ এর ঘটনা অবলম্বনে) ইত্যাদি। ইরান প্রতি রমযানে আন্তর্জাতিক কুরআন প্রদর্শনীর আয়োজন করে যাতে কুরআনের গবেষক, পুস্তক লেখক, ক্যালিগ্রাফি শিল্পী ও হাফেজ-কারিগণের সরব উপস্থিতি থাকে। এছাড়া কুরআনিক গযল, বিষয়ভিত্তিক, কাহিনিভিত্তিক, শব্দভিত্তিক ইত্যাদি বিভিন্ন সফটওয়্যার তৈরি করেছে।
 
খ. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ কার্যক্রম : রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে ও প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এজন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বাসিজ সংগঠন রয়েছে। যারা সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি বিনোদন, চলচ্চিত্র, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। জাতির ক্রান্তিকালে তারা গণসংযোগের মাধ্যমে নাগরিকদের কর্তব্য নির্ধারণে পরামর্শ দিয়ে থাকে।
 
গ. হিজাবের সংস্কৃতি : ইরানী নারীদের হিজাবের মডেলটি এখন বিশ্বব্যাপী মুসলিম মেয়েদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি অনেক দেশে কিছুসংখ্যক অমুসলিম নারীও আজকাল এ ধরনের হিজাব পরছেন। এটি নারীদের মাঝে এক সাংস্কৃতিক বিপ্লব। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত, খেলাধুলা- সর্বত্র হিজাব পরে নারীর স্বচ্ছন্দ গতিময় চলাফেরা বিশ্বব্যাপী নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় এক উন্নত মডেল উপস্থাপন করেছে।
 
ঘ ইরানী চলচ্চিত্র, পেইন্টিং, ফটোগ্রাফি, ভাস্কর্য ইত্যাদি : মানুষের সুকৃতি আচরণকে বিকশিত করার জন্য ইরান সকল শিল্পমাধ্যমকেই ব্যবহার করছে। আর এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীসমূহে অংশগ্রহণ করে শুধু স্বদেশের জন্য সম্মানই বয়ে আনছে না; বরং সকল মুসলমানের পক্ষ থেকে এক শক্তিশালী প্রতিনিধিত্ব করছে। ইসলাম সুস্থ ও মানবিক চিন্তার বিকাশের পথে সাংস্কৃতিক চর্চার বিরোধী তো নয়ই; বরং সংস্কৃতির উন্নত সংস্করণ উপহার দিতে সক্ষম- এটিই প্রমাণ করেছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান। অশ্লীলতা ও উগ্রতাবর্জিত ইরানী আর্ট ফিল্ম ও অ্যাকশন ফিল্ম আজ বিশ্ববিখ্যাত।
 
৬. প্রতিরক্ষায় স্বনির্ভরতা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা : ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রতিরক্ষা সামগ্রী তৈরি করে তার জল, স্থল, আকাশপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। ইরান ঘোষণা করেছে তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আত্মরক্ষামূলক, আক্রমণাত্মক নয়। আজ পর্যন্ত ইরান তার প্রতিবেশী বা দূরবর্তী কোনো দেশে নিজ থেকে আক্রমণ করেছে এমন কোন নজির নেই। ইরান বলছে তার প্রচলিত ও অপ্রচলিত অনেক যুদ্ধকৌশল রয়েছে যা বহিঃশত্রু আক্রমণ করলেই টের পাবে। ইরানের প্রতিরক্ষা ও সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে পশ্চিমা শক্তির অনেকটা ধারণা রয়েছে- সেজন্য বিগত ৩৩ বছরে শতবার হুমকি দিয়েও তারা ইরানকে প্রত্যক্ষ আক্রমণের সাহস করে নি। পাশ্চাত্য ইরানের সাথে অর্থনৈতিক, কৌশলগত, মিডিয়াগত ইত্যাদি এককথায় এক soft-war-এ লিপ্ত রয়েছে।
 
৭. ইসলাম ও মানবতার বড় শত্রু চিহ্নিত করা : ইসলামী ইরান বিপ্লবের শুরু থেকেই তার নিজস্ব গণমাধ্যম, সাময়িকী ও আন্তর্জাতিক ফোরাম ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনসমূহে ইসলাম ও মানবতার কমন শত্রুকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সাম্রাজ্যবাদী, পুঁজিবাদী, ইহুদিবাদী, বর্ণবাদী আগ্রাসী শক্তিসমূহের অপরাধের খতিয়ান ইরান জাতিসঙ্ঘের অধিবেশনসমূহে ও আন্তর্জাতিক আদালতে ( হেগে) লিখিতভাবে ডকুমেন্টেড করেছে। ইরান কোনো আন্তর্জাতিক ফোরাম বর্জন করে নি। বরং জাতিসঙ্ঘ, ওআইসি, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন, ডি-৮ সম্মেলন, ওপেক, ECO- সহ সকল ফোরামে ইরান সক্রিয় ও গঠনমূলক ভূমিকা রেখে নিজেদের অধিকার আদায় করা ও মানবতার উন্নয়নে শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে।
 
৮. বিশ্বে মার্কিন নিয়ন্ত্রিত একমেরু (Unipolar) রাজনীতি রুখে দেয়া : মার্কিন-ব্রিটেন ইহুদিবাদী গোষ্ঠীর একমেরু-রাজনৈতিক হিসাবকে ইরান ভুল প্রমাণ করেছে। অবশ্য এ অবস্থাটি অর্জন করতে ইরানকে অনেক প্রচেষ্টা চালাতে হয়েছে। মৌলিক আদর্শের বিতর্কে না জড়িয়ে মানবতা, সুস্থ সংস্কৃতি, সমঅধিকার, ন্যায়বিচার, বাণিজ্যিক লেনদেনের বিষয়গুলোকে ভিত্তি করে ভারত, চীন, রাশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার বামপন্থী সরকারগুলোর সাথে ইরান ব্যাপক কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছে-যার ফলে ঐ সব দেশ স্ব স্ব অবস্থানে ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে আমেরিকার একক পরাশক্তি হওয়ার খায়েশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। তার Unipolar প্রভাবকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।
 
৯. অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন : ইরান মধ্যপ্রাচ্যের ও আফ্রিকার আরব দেশসমূহ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে ব্যাপক সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এর ফলে সেসব দেশ আজ আন্তর্জাতিক কোনো ফোরামেই ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিরোধিতায় অবতীর্ণ হয় না। এসব সম্পর্কের ব্যাপক সুফল রয়েছে। সুদান, গাম্বিয়া, লেবাননসহ বেশ কয়েকটি দেশের সাথে ইরানের রয়েছে ব্যাপক ও দীর্ঘ মেয়াদী বাণিজ্যিক, সমাজকল্যাণমূলক ও প্রতিরক্ষা চুক্তি। সুদান ও লেবানন তো হিজাবসহ সামাজিক অনেক বিষয়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে অনুসরণ করছে।
 
১০. ইরাক, ফিলিস্তিন, লেবানন ও আফগানিস্তানের শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদান ও এর সুফল : আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন ও ইরাকে সাদ্দামের নির্যাতনে সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ লক্ষ শরণার্থী বছরের পর বছর ধরে ইরানে অবস্থান করেছে। ইসলামের মানবিক সাহায্যের শিক্ষা অনুসরণ করে ইরান তাদের আশ্রয় দিয়েছে। আর তারা অন্যান্য দেশের শরণার্থীদের মতো কোনো শরণার্থী শিবিরে আটক ছিল না; বরং তারা সর্বত্র বিচরণ, শিক্ষা, ব্যবসা, কর্মসংস্থানেরও ব্যাপক সুযোগ পেয়েছে। আর সেসাথে হয়েছে ইরানের বিপ্লবীদের সাথে তাদের চিন্তাগত বিনিময়। বর্তমানে এদেরই বিরাট অংশ ইরাক ও আফগানিস্তানে ব্যাপক প্রভাবশালী ভূমিকায় রয়েছে। ফিলিস্তিনি ও লেবাননি বহু নেতা দীর্ঘদিন ইরানে আশ্রয় নিয়ে থাকার সময় ইরানের ইসলামী বিপ্লব থেকে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। ইরানের ধর্মীয় আধ্যাত্মিক নেতৃবৃন্দের সাথে তাঁদের সখ্য গড়ে উঠেছে।
 
১১. আল্-কুদস ও ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে ইরানের ভূমিকা : ইরানে ইসলামী বিপ্লব সংঘটনের পর এ বিপ্লবের নেতৃবৃন্দ যে আন্তর্জাতিক ও ধর্মীয় ইস্যুতে তাঁদের চিন্তা ও প্রচেষ্টাকে সর্বাধিক বিনিয়োগ করেছেন তা হচ্ছে ফিলিস্তিন ইস্যু। বিপ্লবের পর থেকেই ফিলিস্তিনিদের মানবিক ও অন্যান্য কৌশলগত ক্ষেত্রে সাহায্যে ইরানই সর্বাধিক সাহায্য প্রদান করেছে। ইরানের বিপ্লবী নেতাদের অনুপ্রেরণায়ই ফিলিস্তিনিদের ব্যাপক অংশ আপোসের পথ পরিহার করে শক্তিশালী ইন্তিফাদা গড়ে তোলে। গড়ে ওঠে বিপ্লবী সংগঠন হামাস। ইরানের পাশাপাশি শক্তিশালী সাহায্যে এগিয়ে আসে লেবাননের হিজবুল্লাহ ও সিরিয়ার সরকার। ফিলিস্তিনিরা শক্তি ও সাহস পুনঃসঞ্চয় করে ইহুদিবাদী ইসরাইলের মোকাবিলায় টিকে আছে ও শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। ২০০৬ সালে ইসরাইল দক্ষিণ লেবানন থেকে হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। পরবর্তীকালে লেবাননের হিজবুল্লাহর সাথে (২০০৬) ৩৩ দিনের যুদ্ধে, হামাসের সাথে ২২ দিনের (২০০৮-২০০৯)  যুদ্ধে ও ও সর্বশেষ গাজায় হামলা চালিয়ে ৮ দিনের (২০১২)  বেশি টিকে থাকতে পারে নি। আর এ কথা কে না জানে যে, ফিলিস্তিনি ও লেবাননিরা এক্ষেত্রে ইরান থেকে নৈতিক, আধ্যাত্মিক, মানবিক, রাজনৈতিক ও বস্তুগত ব্যাপক সাহায্য লাভ করে থাকে। আর এটি ফিলিস্তিন ও লেবাননের নেতারা অকপটে স্বীকার করেন। ফিলিস্তিন ও আল্-কুদস মুক্তির জন্য ইমাম খোমেইনী রমযানের শেষ শুক্রবারকে বিশ্ব আল্-কুদস দিবস ঘোষণা করেছেন এবং কুদস দিবসের বিশেষ কর্মসূচি দিয়েছেন। এ কথা আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সাফল্য ও ফিলিস্তিনিদের জন্য এ বিপ্লবের সর্বাত্মক সাহায্যের জন্যই এ বিপ্লবের পর ইসরাইল তার সীমানা একটুও সম্প্রসারিত করতে পারে নি। অথচ ইসরাইলের নীল থেকে ফোরাত পর্যন্ত সম্প্রসারিত ইহুদিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ছিল।
 
১২. ধর্মের মূলে ফিরে আসার জন্য ইসলামী বিপ্লবের অবদান : ইরানে ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর থেকেই বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম খোমেইনী বিশ্ববাসীকে কুরআন, সুন্নাহ ও আহলে বাইতের প্রদর্শিত প্রকৃত ইসলামে ফিরে আসার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। ইমাম খোমেইনী তাঁর ইন্তেকালের আগেও তাঁর অসিয়তনামায় এ আবেদন জানান। এ প্রসঙ্গে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দিবস ও উপলক্ষগুলোকে বিশ্বব্যাপী উদযাপন করতে কার্যক্রমের উজ্জীবন ঘটান। এ উপলক্ষে ইরানে ও বহির্বিশ্বে আন্তর্জাতিক সম্মেলন, সফর বিনিময়, স্মারক ও সাময়িকী প্রকাশনার আয়োজন করা হয়। যেসব উপলক্ষকে কেন্দ্র করে ইসলামী ইরান ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করে তা হলো-
 
ক. হজ : হজ বিশ্ব-মুসলিমের সর্ববৃহৎ আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক সম্মেলন। হজের সময় কাবায় তাওয়াফ, আরাফাতে অবস্থান, মীনায় কুরবানী, পাথর নিক্ষেপ, মদীনায় মহানবী (সা.)-এর রওজা যিয়ারত ইত্যাদি কার্যক্রমকে জীবন্ত করতে, নিছক যপ-তপের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রাখতে, প্রকৃত চেতনার স্ফুরণ ঘটাতে ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হাজীদের উদ্দেশে প্রতি বছর সময়োপযোগী গুরুত্বপূর্ণ বাণী প্রদান করেন। ইরানের হজ মিশনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিকভাবে মক্কায় বারাআত-এর (মুশরিকদের সাথে সম্পর্কোচ্ছেদ সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতের) চেতনা উজ্জীবনের সমাবেশ করা হয়। মহানবী (সা.) কর্তৃক মদীনায় আনসার ও মুহাজিরদের ভ্রাতৃত্ব-বন্ধনের স্মরণে ওয়াহদাত বা ঐক্য সম্মেলন আয়োজন করা হয়। বিশ্বের সব মুসলমানকে সচেতন করতে তাঁরা সুশৃঙ্খলভাবে এসব কার্যক্রম চালিয়ে থাকেন।
 
খ. ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে ১২-১৭ রবিউল আউয়াল সপ্তাহব্যাপী ইসলামী ঐক্য সপ্তাহ উদযাপন করে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান বিশ্বব্যাপী ইসলামী ঐক্য সুদৃঢ় করার প্রচেষ্টা চালায়। এ উপলক্ষে মহানবী (সা.)-কে কেন্দ্র করে সকল মুসলমানের মাঝে ঐক্য প্রয়াসের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সম্মেলনেরও আয়োজন করা হয় ও বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা হয়।
 
গ. আশুরা উদযাপন : মুসলমানদের প্রকৃত ইসলামী সত্তায় ফিরে আসার সবচেয়ে চেতনা জাগ্রতকারী ঘটনা হচ্ছে কারবালায় নবী-দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর সঙ্গীদের শাহাদাত। ইমাম খোমেইনী (রহ.) বলেছিলেন : ‘আমাদের যা কিছু অর্জন তার সবই মুহররম ও সফর থেকে।’ ইরানের ইসলামী বিপ্লবে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের চালিকাশক্তিও ছিল এই কারবালার হুসাইনী চেতনা। তাই ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান স্বদেশে ও বিদেশে সর্বত্র মুহররমের ১-১২ তারিখ পর্যন্ত আশুরার শাহাদাতের প্রেক্ষাপট, ঘটনাপ্রবাহ ও শিক্ষা আলোচনা ও শোকানুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।
 
ঘ. রমযান মাসে বিশ্বব্যাপী ইরানী কারিগণ সফর করেন ও দেশে দেশে কুরআন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
 
ঙ. এসব দিবস ও ধর্মীয় উপলক্ষগুলোকে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের পাশাপাশি পবিত্র কুরআন, মহানবী (সা.) ও অন্যান্য নবী ও ইসলামের ভিত্তিমূলে আঘাতকারী পুস্তক, চলচ্চিত্র ও অন্যান্য ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সর্বদাই সোচ্চার ভূমিকা পালন করে থাকে। সালমান রুশদীর ‘শয়তানের পদাবলি’ (Satanic Verses) উপন্যাসের জন্য ইমাম খোমেইনী কর্তৃক (১৯৮৯) তাকে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া বিশ্ব-মুসলিমকে জাগ্রত ও ঐক্যবদ্ধ করেছিল।
 
১৩. ইসলামী জাগরণ বনাম আরব বসন্ত : ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের পর থেকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান এ বিপ্লবের নেতৃবৃন্দ ও বিশ্বব্যাপী এর সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের আহ্বানে উপরিউক্ত কর্মসূচিগুলো অব্যাহত রাখেন। ধীরে ধীরে এসব চেতনা বিশ্ব-মুসলমানের চোখ খুলে দেয়, চেতনা জাগ্রত করে, দেশে দেশে গড়ে ওঠে ইসলামের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম। ফলে মানুষের মাঝে মূল ইসলামে ফিরে যাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও জালেম, ভণ্ড, পাশ্চাত্যের সেবাদাস সরকারগুলোর প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মুসলমানরা ইসলামের চেতনায় জেগে ওঠে। কিছু কিছু আরব দেশে যে নামকাওয়াস্তে পার্লামেন্ট রয়েছে সেসব প্রতীকী পার্লামেন্টেও ইসলামপন্থীরা ব্যাপক আসন পায়, কোথাও স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান দানা বাঁধে। অবশেষে তিউনিশিয়া, মিসর, ইয়েমেন, লিবিয়ায় স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে জনগণ মাঠে নামে। পাশ্চাত্য ইহুদিবাদী পক্ষ ও তাদের প্রচারমাধ্যমসমূহ আরব জনগণের এহেন ইসলামী চেতনাসমৃদ্ধ জাগরণকে তাৎক্ষণিকভাবে ‘আরব বসন্ত’ বলে অভিহিত করে প্রচার চালায় এবং পাশ্চাত্য মাধ্যমগুলো তড়িঘড়ি করে প্রচেষ্টা চালায় যেন সেসব দেশে তাদের দোসর ব্যক্তিরাই ভোল পাল্টিয়ে বিপ্লবী সেজে নির্বাচনের মাধ্যমে বা জোট গঠনের নামে ক্ষমতা দখল করতে পারে। তবে এ প্রসঙ্গে একথা বলা যায় যে- ভণ্ড স্বৈরশাসকদের প্রতি জনগণের ঘৃণা প্রকাশ, অভ্যুত্থানকারীদের অধিকাংশই ইসলামপন্থী হওয়া, স্বৈরচারীদের ইতিমধ্যে অনেকেরই পতন হওয়া- এসব মিলিয়ে ইসলামী জাগরণ একটি পর্যায় অতিক্রম করেছে। আশা করা যায় যে, পরবর্তী ভণ্ডরাও মুনাফিকী করে বেশিদিন পার পাবে না।
 
তবে অনেক ভাল নেতাকেও ভণ্ড আখ্যায়িত করে কলঙ্কিত করার প্রয়াস চালানো হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। অবশেষে অনেক ধাপ পার হয়ে প্রকৃত ইসলামী জাগরণ পরিণতি পাবে ইনশাআল্লাহ। ইসলামী জাগরণকে ছিনতাই করে আরব জাগরণ আখ্যা দিয়ে তারা বেশিদূর এগুতে পারবে না।
 
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার আরব দেশগুলোতে ইসলামী জাগরণকে ইতিবাচক ধাপ হিসেবে গ্রহণ করেছে, ইসলামী বিপ্লবের রাহবার সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী এসব দেশের ইসলামী নেতৃবৃন্দকে ইসলামী নেযাম বা রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করে বিপ্লব ও জাগরণকে সুসংহত রূপদান করতে আহ্বান জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে গত এক বছরে রাহবারের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আলী আকবর বেলায়েতীর আহ্বানে ইরানে ইসলামী জাগরণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক কবি সম্মেলন, নারী সম্মেলন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। info@islamic-awakening.ir ওয়েবসাইটে এসব সম্মেলনের Proceedings ও গবেষণাপত্রগুলো পাওয়া যাচ্ছে।
 
১৪. সফল ন্যাম সম্মেলন : গত আগস্ট ২০১২ ইরানের রাজধানী তেহরানে অনুষ্ঠিত হলো জোট নিরপেক্ষ দেশগুলোর সফল ষোড়শ শীর্ষ সম্মেলন। পাশ্চাত্যের প্রতিক্রিয়াশীল সাম্রাজ্যবাদী কতক দেশের অপপ্রচার ও বাধার মুখেও জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবসহ ২৭টি দেশের প্রেসিডেন্ট, ২ জন বাদশাহ, ৮ জন প্রধানমন্ত্রী, ২ জন পার্লামেন্ট স্পীকার, ৯ জন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ১০টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। এ সম্মেলনের অন্যতম বিষয় ছিল ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি, পরমাণুমুক্ত বিশ্বব্যবস্থা গড়ার আহ্বান, সন্ত্রাসবাদের শিকড় উপড়ে ফেলা ও ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কার্যক্রমের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ঘোষণা। ইহুদিবাদী ইসরাইল ও তার দোসররা এ সম্মেলনের সফলতার বিরুদ্ধে কাজ করেও কিছুই করতে পারে নি।
 
১৫. ইরানের পরমাণু সক্ষমতা প্রসঙ্গে পাশ্চাত্যের ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা : ২০০৯ সালে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান পারমাণবিক ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জন করে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান গড়ে তোলে। এক্ষেত্রে ইরানের বিজ্ঞানীরা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (IAEA) সকল প্রটোকল মেনেই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ইসফাহান, বুশেহর ও কোমের পরমাণু কেন্দ্রগুলোতে IAEA-এর পরিদর্শকদল তাদের রুটিন পরিদর্শন অব্যাহত রেখেছেন এবং ইরান NPT- এ স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। ইরান বিদ্যুৎ উৎপাদন, চিকিৎসা ও কৃষি গবেষণার কাজে এই পারমাণবিক শক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে। ইরান শুরু থেকেই বলে আসছে যে, তার এই পারমাণবিক প্রযুক্তির জ্ঞান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মুসলিম ও শান্তিপ্রিয় দেশগুলোর সাথে ব্যবহার করতে প্রস্তুত। এক্ষেত্রে ইরান পরমাণু প্রযুক্তি কাজে লাগাতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি ক্লাব গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু শুরু থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি দেশ ইরানের এই শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। তারা কল্পিত অভিযোগ এনে প্রচার চালাচ্ছে যে, ইরান পারমাণবিক গবেষণার অন্তরালে পারমাণবিক বোমা বানানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। এসব চিৎকারে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হলো NPT-তে সাক্ষর করতে অস্বীকারকারী ২ শতাধিক পারমাণবিক বোমার অধিকারী অবৈধ রাষ্ট্র ইহুদিবাদী ইসরাইল ও হিরোসিমা-নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপকারী আমেরিকা।
 
যাই হোক, এই কল্পিত অভিযোগের ধুয়া তুলে আমেরিকা ইরানে একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে এবং ইরানে হামলার হুমকি দিচ্ছে। আমেরিকা তার মিত্র সকল দেশকে ইরানের সাথে বাণিজ্যিক লেনদেনে বাধা দিচ্ছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ কল্পিত অভিযোগ যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অন্তঃসারশূন্য তা বিশ্বের অধিকাংশ পর্যবেক্ষক মহলই আজ বুঝতে পারছেন। আবার অনেক অতি উৎসাহী ইসলামপন্থীদের বলতে শোনা যায় যে, ইরানের পারমাণবিক বোমা বানানো দরকার, প্রতিপক্ষের শক্তির ভারসাম্য আনার জন্য। কিন্তু তাদের জবাবে বলতে হয় যে, ইরান তো পারমাণবিক বোমার অধিকারী না হয়েও গত ৩৩ বছর দুশমনের হুমকির মুখে টিকে আছে। আর পারমাণবিক বোমার অধিকারী পাকিস্তানের জনগণ নিজ দেশেই প্রতিদিন মার্কিন ড্রোন হামলার শিকার হচ্ছে। তাই পারমাণবিক বোমার অধিকারী হওয়াই নিরাপত্তার গ্যারান্টি নয়। সর্বোপরি ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা পারমাণবিক বোমা বানানোর বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছেন। আর ইসলামী প্রজাতন্ত্রের রাহবারের ফতোয়া যে কোনো ফাঁকা বুলি নয় তা সবারই জানা আছে। আর একটি বিষয় হলো আমেরিকা ও তার দোসররা এ পর্যন্ত বহু বার চেষ্টা করেছে ওঅঊঅ এর প্রধানের মাধ্যমে রিপোর্ট দিতে চাপ প্রদান করে যে, ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম সন্দেহজনক ও পারমাণবিক বোমা তৈরি করা যেতেও পারে ইত্যাদি। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা সেরকম সুনির্দিষ্ট কোনো বিবৃতি লাভ করতে পারে নি। এদিকে বিগত দুটি জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন সম্মেলন ও ওআইসি সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কার্যক্রমের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে। ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের স্লোগান হলো- ‘Nuclear energy for all, Nuclear weapon for none.’
 
ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য রয়েছে ইরানের পরমাণু শক্তি কমিশনের ওয়েবসাইট
http://www.aeoi.org.ir/Portal/Home/
 
১৬. প্রচারযুদ্ধে ইরান : দীর্ঘদিন ধরে সারা বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত সব প্রচারমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল বিশ্ব-ইহুদিবাদী চক্র নিয়ন্ত্রিত পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদ। তাই স্বাভাবিকভাবেই এসব সংবাদমাধ্যমে ইরানের প্রকৃত সংবাদগুলো ইতিবাচক কভারেজ পায় নি। তাই বিপ্লবের পর থেকেই ইরান এ সংকটে ভুগছিল। ইরানের IRIB-এর বহির্বিশ্ব সম্প্রচার কার্যক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় রেডিওর সম্প্রচার এর অভাব কিছুটা পূরণ করে। পরবর্তীকালে ইরানের ইংরেজি ভাষায় Press TV, স্প্যানিশ ভাষায় হিসপান টিভি ও আরবি ভাষায় আল-আলাম টিভি চ্যানেল শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর প্রবল বাধার মুখে গত ৩০ বছরে ইরান তার নিজস্ব প্রচারমাধ্যম ও দেশে দেশে বন্ধুত্বের বিনিময়ে এ নিবন্ধের শুরুতে ইসলামী ইরান সম্পর্কে বর্ণিত অপপ্রচারগুলো যে মিথ্যা তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। দিনদিন বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সম্মান বাড়ছে। মাজহাব নির্বিশেষে মুসলমানগণ ইসলামী ইরানকে তাদের সহযোদ্ধা ও সত্যের পথে নিশানবরদার হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন জনপদে ইসলামী জাগরণ জোরদার হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদের কাছে এ অবস্থাটি সহ্য করা কঠিন হয়ে উঠেছে। তাই বর্তমানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় ইহুদিবাদী ইন্ধনে বহু দেশ ইসলামী প্রজাতন্ত্র পরিচালিত প্রেস টিভিসহ অন্যান্য চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করলেও বিশ্বের অনেক গণমাধ্যম তাদের ওয়েবসাইট থেকে সংবাদ সংগ্রহ করছে। আজ ইসলামী বিপ্লব দীর্ঘ সংগ্রামের পর নতুন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা ও ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের কথাগুলো, উন্নয়ন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির সংবাদগুলো বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম নিজ উদ্যোগেই সংগ্রহ করছে। যেসব ওয়েবসাইট থেকে ইরানের সংবাদগুলো বেশি সংগৃহীত হচ্ছে সেগুলো হলো-Iran Supreme Leader : www.leader.ir/, President : www.president.ir, Judiciary : www.judiciary.ir; Parliament: www.majlis.ir; Ministry of Culture : www.farhang.gov.ir; Foreign Ministry: www.mfa.gov.ir; Iran Broadcasting: www.irib.ir/, Organization of Islamic Culture and Relations: www.icro.ir/; Women Magazine: www.raihaneh.com; Mahjubah: info@itf.org.ir ; Centre for Strategic Studies in Iran: www.csr.ir/, ইমাম খোমেনী (র.) সম্পর্কে www.imam-khomeini.com;  ইসলামী তথ্য জানতে http://www.itf.org.ir, ইত্যাদি
 
 
কয়েকটি ক্ষেত্রে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের অবস্থান :
* সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার : প্রত্নতত্ত্ব, ভাস্কর্য, হস্তশিল্প ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক নিদর্শনাদির সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের দিক থেকে UNESCO-এর তালিকাভুক্তিতে ইরানের অবস্থান বিশ্বে সপ্তম।
 
*  কর্মসংস্থান : ২০০৭ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইরানের কর্মক্ষম জনসংখ্যার ৯২.২৫% অর্থাৎ ২১৭৬৯০০০ ব্যক্তির কর্মসংস্থান হয়েছে এবং বেকার রয়েছে ৭.৭৫%।
 
* তেল ও গ্যাস সম্পদ : ভূগর্ভস্থ রিজার্ভ তেল এর পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বে পঞ্চম। রিজার্ভ গ্যাসের পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় (প্রথম রাশিয়া)।
 
* দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য গ্যাস সরবরাহ : ১১২৯টি শহরে
 
* বিদ্যুৎ উৎপাদন (২০০৬ সাল) : ২০০ মিলিয়ন কিলোওয়াট আওয়ার
 
*  বাঁধের সংখ্যা : ১৮৬টি সুবৃহৎ ও ৩২০টি ছোট আকারের বাঁধ। ৯১টি বৃহৎ বাঁধের মাধ্যমে ১০ বিলিয়ন কিউব মিটার পানি সরবরাহ হয়। বিশ্বে এর র্যাওঙ্কিং তৃতীয় (প্রথম চীন, দ্বিতীয় তুরস্ক)।
 
* রেলপথ : প্রধান রেলপথ ৮৮৩৭ কিলোমিটার, দ্বিতীয় স্তরে ১৮৩৩ কিলোমিটার, বাণিজ্যিক রেলপথ (স্বতন্ত্র)- ১০০০ কিলোমিটার।
 
*  ইন্টারনেটের ব্যবহার :  ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার মধ্যে ইরানের অবস্থান প্রথম স্থানে।
 
*  কৃষি উৎপাদন (২০০৭)
 - GNP (Gross National Production) : কৃষি থেকে ১৫%
 
 -  তেল বহির্ভূত রফতানি সামগ্রী : কৃষি থেকে ২২%
 
  - কৃষিজ দ্রব্য উৎপাদন ৮৫ মিলিয়ন টন (৬২.৫ মিলিয়ন দানাশস্য, ১৩.৫ মিলিয়ন টন বাগানশস্য, ৮.৬ মিলিয়ন টন গবাদিজাত ও ৪৫৫০০০ টন মৎস্য উৎপাদন।
 
-  বৈচিত্র্যময় বাগানজাত উৎপাদনের দিক থেকে ইরানের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়
 
-  পেস্তা, জাফরান, খেজুর, ডালিম ও এপ্রিকট (খুবানি) উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান বিশ্বে প্রথম।
 
* বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় ইরানের অগ্রগতি বিশ্বে দ্রুততম (Fastest) [Canadia.htmail]। বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষত মহাকাশ গবেষণা, পরমাণু চিকিৎসা ও ন্যানো টেকনোলজি গবেষণায় ইরানের অগ্রগতি ব্যাপক।  [presstv.com, ২১ অক্টোবর, ২০১১]
 
- ন্যানো টেকনোলজি (Nanotechnology) : পঞ্চাশের অধিক ন্যানো টেকনোলজি কোম্পানি কাজ করছে। Nanotechnology-সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিবন্ধের ক্ষেত্রে বিশ্বে ইরানের অবস্থান ২৫তম এবং মধ্যপ্রাচ্যে সর্বোচ্চ। ২০১২ এর মধ্যে ইরান ন্যানো টেকনোলজিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে আসার পরিকল্পন করছে। [En.nano.ir.retrieve, 21 Oct, 2011]
 
-  মহাকাশ গবেষণা (Space and Aerospace) : নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত মহাশূন্যে স্যাটেলাইট পাঠানোর ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান বিশ্বে নবম এবং মহাকাশ যানে প্রাণী পাঠানোর ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান ষষ্ঠ। ২০০৮ সালে Iranian Space Agency একটি তিন স্তরের স্যাটেলাইট ‘সাফির’ (Ambassador) পরীক্ষা চালায় এবং ২০০৯ সালে Omid (আশা) নামের ক্যারিয়ার কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করে। ২০১৫ সালের মধ্যে ইরান মহাশূন্যে মানুষবাহী স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে।
 
ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের পর ইরানের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ গবেষকদের প্রতি ইসলাম ও আধুনিক বিজ্ঞানের সমন্বয়ের মাধ্যমে জাতীয় অগ্রগতির ও স্বয়ংসম্পূর্ণতার আহ্বান জানান। এরই ফলে সাম্প্রতিককালে ইরানে বিজ্ঞান গবেষণায় প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে।
 
[1. Quarks and the Koran : Iran’s Islamic Embrace of Science- The Daily Beast, 22 May, 2009
2. Science and Technology and the Future Development of Soceities: International Workshop Proceedings. Nap.edu. 11 February, 2007, retrieved 21 Oct, 2011]
 
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় ইরানের দ্রুততম অগ্রগতির রিপোর্ট : এ সম্পর্কে ইরানের সর্বোচ্চ দ্রুত অগ্রগতির স্বীকৃতি (১৯৯৬-২০০৪) দিয়েছে ISI (Institute of Scientific Information), Canadian Research Firm Science-Matrix and Engineering Indicators: 2010, 2012’, Science Watch Report (2008), International Comperative Performance of UK Research Base (2009), Ges ‘Knowledge, networks and nations’ by Britain Leading Academic Institution, the Royal Society in Collaboration with Elsevier.
 
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ৫১০০০ পৃষ্ঠাসমৃদ্ধ ব্যাপক বিজ্ঞান গবেষণা সংক্রান্ত প্রকল্পপত্রে বর্ণিত ২২৪টি প্রকল্প ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর। [Iran Unveils Comprehensive Scientific Plan. payvand.com. 4 Jan, 2011, retrieved 21 Oct, 2011] UNESCO-এর রিপোর্ট অনুযায়ী (২০১০) ইরানের বিজ্ঞান গবেষণার ৭৫% বাজেটই সরকার বহন করে।
 
- চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণা : চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান বিশ্বে ১৯তম এবং ২০১২ সালের মধ্যে ১০ম অবস্থানে আসার পরিকল্পনা করেছে। [presstv.ir, 20 Jan, 2012]
 
 - বায়ো টেকনোলজি : স্টেমসেল (মৌলিক কোষ) গবেষণার ক্ষেত্রে ইরান প্রথম সারির ১০টি দেশের মাঝে অবস্থান করছে। স্টেমসেল রিপ্লেস (প্রতিস্থাপন) করার ক্ষেত্রে বিশ্বে ইরানের অবস্থান দ্বিতীয়। হাড়, হার্টভাল্ভ  ও ট্যানডন রিপ্লেস করা ও Bio-tech drug উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইরান প্রথম ১২টি দেশের মাঝে অবস্থান করছে।
 
- কম্পিউটার সায়েন্স ও রবোটিকস : ২০১০ সালে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব প্রযুক্তিতে Sorena 2 নামক রোবট তৈরি করে যা IEEE কর্তৃক বিশ্বের ৫টি সর্বোচ্চ প্রযুক্তির রোবটের মাঝে স্থান পায়। একই ধারাবাহিকতায় ইরানের automotive industry দশটি রোবট তৈরি করে। তেহরানের আমির কবীর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৭ সালে একটি সুপার কম্পিউটার তৈরি করে যার প্রতি সেকেন্ডের কর্মক্ষমতা ৮৬০ বিলিয়ন, যদিও ইরান ২০০১ সালেই প্রথম সুপার কম্পিউটার তৈরি করে- পরবর্তীকালে ইরান তৈরি করেছে RAHYAB-300, যার সক্ষমতা 40 Gbit/s। ২০১১ সালে আমির কবীর ও ইসফাহান বিশ্ববিদ্যালয় ২টি সুপার কম্পিউটার তৈরি করে যার প্রসেসিং ক্ষমতা প্রতি সেকেন্ডে ৩৪০০০ বিলিয়ন- যা বিশ্বের প্রথম সারির ৫০০টি কম্পিউটারের মাঝে রয়েছে।
 
- এনার্জি (Energy) : ইরান বিশ্বের প্রথম সারির চারটি দেশের মধ্যে রয়েছে যারা V 94.2 গ্যাস টারবাইন তৈরি করার সক্ষমতা অর্জন করেছে। গ্যাস রিফাইনারির সব পার্টসই ইরান নিজেই তৈরি করছে। তরল গ্যাস তৈরির (GTL) প্রযুক্তি অর্জনে ইরান প্রথম তিনটি দেশের মাঝে রয়েছে। ইরান দেশীয়ভাবে রিফাইনারি, তেল ট্যাংকার, তেল কূপ খনন, Offshore platform এবং তেল উত্তোলনের ৭০ ভাগ সক্ষমতা অর্জন করেছে। গভীর পানিতে তেল কূপ খনন প্রযুক্তিতে ইরান বিশ্বের অল্প কয়েকটি দেশের মাঝে রয়েছে। দেশীয় প্রযুক্তিতে ডিজাইনকৃত ইরানের Darkhovin Nuclear Power Plan কার্যক্ষম হবে ২০১৬ সালে।
 
- সমরবিজ্ঞান : ইরান সুপারফাস্ট এন্টি-সাবমেরিন তৈরি করেছে যা পানির তলদেশ দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ১০০ মিটার গতিতে চলে; আর এ প্রযুক্তিটি বিশ্বে একমাত্র রাশিয়ার হাতে রয়েছে। লেজার টার্গেটিং প্রযুক্তির অস্ত্রের ক্ষেত্রে ইরান বিশ্বের পাঁচটি দেশের অন্যতম যাদের চালকবিহীন বিমান বা ড্রোনের নির্মাণ সক্ষমতা রয়েছে। ১৯৯২ সাল থেকেই ইরান নিজস্ব প্রযুক্তিতে ট্যাংক, মিসাইল, সাবমেরিন, ফাইটার প্লেন ও যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত সামরিক যান তৈরি করছে।
 
*  ইসলামী বিপ্লবের ৩৪তম বিজয় বার্ষিকীর প্রাক্কালে ইরানের বিজ্ঞান গবেষণার কতিপয় সাফল্যের সংবাদ:
 
-  কয়েক ধরনের অত্যাধুনিক ড্রোন বা চালকবিহীন বিমান তৈরি;
-  সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে সমুদ্রগামী তেল ট্যাঙ্কার তৈরি;
-  মহাশূন্যে ‘পিশগাম’ বা ‘অভিযাত্রী’ নামের বায়ো-ক্যাপসুল (বানর) প্রেরণ;
-  রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম স্টিলথ ধরনের অত্যাধুনিক জঙ্গি বিমান ‘কাহের-৩১৩’ তৈরি।
-  সৌরশক্তিচালিত মোটরগাড়ি তৈরি।
 
পরিশেষে এ কথা বলা যায় যে, শক্তিশালী ফকিহ নেতৃত্বের অধীন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান পুরো জাতির বিভিন্ন পর্যায়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিত্বদের পরিচালনায় সুসংবদ্ধ রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠন করেছে; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে চরম অগ্রগতি অর্জন করেছে, স্বনির্ভর অর্থনীতির একটি শক্তিশালী ভিত তৈরি করেছে, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে, স্বীয় ভূখণ্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে, ফিলিস্তিনসহ মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, বিশ্ব-সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে, বিশ্বমানবতা ও বিশ্ব-মুসলিমকে ঐক্যের ও উন্নত সংস্কৃতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। এসবই ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে একটি অনন্য মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছে। বিশ্বব্যাপী ইসলামী জাগরণে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান আরো সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। #
(ডক্টর জহির উদ্দিন মাহমুদ একজন গবেষক, চিন্তাবিদ, বিশ্লেষক, সমাজ-কর্মী ও সাংবাদিক)



ইমাম হাসান আসকারী (আ) এর জন্মবার্ষিকী-২০১৩
•    ফন্টের আকার   
•    প্রিন্ট
•    Add new comment
 
হিজরী ৮ রবিউস সানি মুসলিম বিশ্বের জন্যে একটি আনন্দের দিন। কেননা ২৩২ হিজরির এই দিনে পবিত্র এক শিশুর জন্মের সুসংবাদ পুরো মদিনা শহরে আনন্দের আমেজ ছড়িয়ে দিয়েছিল। তিনি আর কেউ নেন। ইমাম হাদি (আ) এর সন্তান ইমাম হাসান আসকারি (আ)। আহলে বাইতের সম্মানিত ইমামদের জন্মদিন সবার জন্যেই আনন্দের এবং খুশির বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। কেননা তাঁদের চিন্তাদর্শন, তাঁদের চারিত্র্যিক সুষমা, তাঁদের আধ্যাত্মিক মহিমা সমগ্র মানব জাতির জন্যেই কল্যাণবহ। তাঁরই হলেন সত্য ও ন্যায়ের পতাকাবাহী, নৈতিকতা ও চারিত্র্যিক মাধুর্যের অনন্য নিদর্শন। তাই ইমাম হাসান আসকারী (আ) এর শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে আপনাদের সবার প্রতি রইলো অকৃত্রিম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
 
 
নবীজীর আহলে বাইতের জ্ঞান-গরিমা সবসময়ই অনুসরণীয়। মানবজাতি তাদের জীবনপ্রবাহের যে-কোনো ক্রান্তিলগ্নেই ইমামদের জ্ঞানের পবিত্র আলোয় নিজেদেরকে আলোকিত করতে পারে। ইমামগণ মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁদের জীবনাদর্শ তাই আজো বিশ্বমানবতার পথপ্রদর্শক।
 
 
ইমাম হাসান আসকারী (আ) তাঁর ২৮ বছরের সংক্ষিপ্ত অথচ সমৃদ্ধ জীবনে পৃথিবীবাসীর জন্যে রেখে গেছেন অমূল্য সব অবদান। ছোটবেলায় পিতা ইমাম হাদি (আ) এর সাথে তিনি মদিনা ত্যাগ করতে বাধ্য হন। জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি ইরাকের সামেরায় আব্বাসীয় সেনাদের নজরদারিতে কাটান। তারপরও তাঁর অনুসারীদের কাছ থেকে তাঁকে আলাদা করা যায় নি। তিনি সবসময় জনগণকে আল্লাহর পথে ডেকেছেন এবং বিপথগামিতা বা গোমরাহীর পথ থেকে মানুষকে বিরত রেখেছেন। ইমাম সবসময় তাঁর অনুসারীদেরকে সৎ চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং অসৎ চিন্তা পরিহার করার প্রেরণা জুগিয়েছেন।
 
 
ইমাম হাসান আসকারি (আ) তাঁর ৬ বছরের ইমামতির মেয়াদকালে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিস্তারে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। একদিকে তিনি অসংখ্য মেধাবি ছাত্র তৈরি করে গেছেন এবং অপরদিকে ইসলামী সমাজকে যেসব ভ্রান্ত মতবাদ অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো দূরদর্শী চিন্তার মাধ্যমে তিনি সেসব মোকাবেলা করেছেন। কোরআনের জীবন ঘনিষ্ট তাফসিরের মাধ্যমে এবং ইসলামের নীতি-নৈতিকতা ও বিশ্বাসগত মূল্যবোধের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর ব্যাপক খেদমত করে গেছেন। ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার আসর করে, ছাত্রদের যথার্থ প্রশিক্ষণ দিয়ে ইমাম হাসান আসকারি (আ) আব্বাসীয় অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মৌলিক ভিত রচনা করেন। তিনি একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলতেন তাহলো অন্যায় ও অত্যাচারী শাসন ব্যবস্থা একটি সমাজে মানব মুক্তির সনদ ধর্মের যথাযথ বাস্তবায়নের অন্তরায়। তাছাড়া দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনে জনগণের অধিকার ব্যাপকভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়।
 


ইমাম হাসান আসকারীর ইমামতিকালে আব্বাসীয় খলিফাদের বেশ কয়েকজন শাসক মুসলমানদের ওপর শাসন করেছে। কিন্তু কেউই ইমামের সত্যতার মর্যাদা না দিয়ে বরং তাঁকে উপেক্ষা করেছে। কেবল উপেক্ষাই করে নি বরং তাঁকে অনেক কষ্টও দিয়েছে। আব্বাসীয় শাসকদের মধ্যে ইমামকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে মু'তামেদ। মু'তামেদ ইমামকে এবং ইমামের অনুসারীদের অনেককেই কারাগারে আবদ্ধ রেখেছে। কারণটা হলো মু'তামেদ ছিল খুবই ক্ষমতালিপ্সু। সে জানতো ইমাম হাসান আসকারি (আ) যদি স্বাধীনভাবে জনগণকে শিক্ষা-দীক্ষায় সচেতন করে তোলার সুযোগ পান তাহলে আজ হোক কাল হোক তাঁর অনুসারীরা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেই ছাড়বে। অন্যদিকে নবীজীর একটি বাণী আব্বাসীদের শাসকদের কানে পৌঁছেছিল,তাহলো ইমাম হাসান আসকারি (আ) এমন এক সন্তানের অধিকারী হবেন, যেই সন্তান সারাবিশ্ব থেকেই অত্যাচারী শাসনের অবসান ঘটাবেন।
 
সেজন্যে ইমাম হাসান আসকারি (আ)'র ওপর কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শুধু তাই নয় যেই কারাগারে তাঁকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল সেই কারারক্ষী এবং তার সহযোগিরা ছিল নির্দয় পাথরের মতো নিষ্ঠুর মনের অধিকারী। কিন্তু ইমাম তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ব্যবহার ও আচার-আচরণের সাহায্যে সেই পাথর-হৃদয় কারা কর্তৃপক্ষের মনে নির্মলতার সুশীতল ঝর্ণাধারা বইয়ে দিলেন। তারা অচিরেই সদয় ও সহৃদয় হয়ে উঠলো। তারপর তারা তাদের পূর্বেকার নির্দয় আচরণের জন্যে লজ্জাবোধ করলো। পবিত্র আহলে বাইতের সম্মানিত ইমামগণের সান্নিধ্যটাই ছিল এরকম প্রভাব বিস্তারকারী। পূর্ণিমার চাঁদের জ্যোৎনায় চারদিক যেমন নির্মলতায় ভরে যায় তেমনি ইমামগণের পবিত্র সাহচর্যে কঠিন হৃদয়ও হয়ে যেত অনাবিল সুন্দর, কোমল।
 
ইমাম হাসান আসকারি (আ) ছিলেন দান-সদকার ক্ষেত্রে উদারহস্ত। জনগণের সাহায্যে তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। যে-কোনোভাবেই হোক জনগণের কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারলে তিনি আত্মতৃপ্তি বোধ করতেন। বহু মানুষ তাঁর কাছ থেকে উপকৃত হয়েছে। আবু ইউসুফ নামে আব্বাসীয়দের রাজদরবারের একজন কবি ছিলেন। তিনি নিজ থেকে বর্ণনা করেছেন-€˜আমি একটি সন্তানের পিতা হয়েছিলাম। কিন্তু আমার দিনকাল খুব একটা ভালো কাটছিল না। অভাব-অনটনের মধ্যে ছিলাম। এতোই অভাবী ছিলাম যে নিরুপায় হয়ে শাসকদের উচ্চ পদস্থদের অনেকের কাছেই আমার সমস্যার কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপারটি হলো কেউই আমার সাহায্যে এগিয়ে আসে নি। তাদের কাছ থেকে বিমুখ হয়ে হতাশ বনে গেলাম। হঠাৎ মনে পড়লো ইমাম হাসান আসকারি (আ) এর কথা। মনে পড়তেই আমি তাঁর দরোজায় গিয়ে হাজির হলাম। দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলাম আদৌ ইমামের কাছে আমার সমস্যাটার কথা বলবো কি বলবো না। কারণ আমি তো আব্বাসীয় শাসকের দরবারের একজন কবি ছিলাম কিছুসময়। এ কারণে ভয় পাচ্ছিলাম যে ইমাম আমাকে হয়তো সাহায্য নাও করতে পারেন। এরকম একটা অস্থিরতা নিয়ে ইমামের ঘরের আশেপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেললাম এবং ইমামের ঘরের দরোজায় টোকা দিলাম। টোকা দিতে না দিতেই দরোজা খুলে গেল এবং ইমাম হাসান আসকারি (আ) এর সঙ্গীদের একজন টাকার একটি ব্যাগ নিয়ে বাইরে এসে আমাকে বললো-এই চার শ' দেরহাম নাও! ইমাম তোমাকে বলেছেন,তুমি যেন তোমার নবজাতক শিশুটির জন্যে এই টাকাটা খরচ করো! আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই শিশুর মধ্যে তোমার জন্যে কল্যাণ ও বরকত রেখেছেন।' এই ঘটনায় আমি হতবাক হয়ে গেলাম। টাকার ব্যাগটা নিয়ে আমি এরকম একজন মানুষের অস্তিত্বের জন্যে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলাম।
 
 
ইবাদাত-বন্দেগির ক্ষেত্রে ইমাম হাসান আসকারি
(আ) ছিলেন অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। ইমামের একজন সাথী ছিলেন আবু হাশেম জাফারি নামে। তিনি বলেছেন, যখন নামাযের সময় হতো,ইমাম তখন সকল কাজকর্ম বন্ধ করে দিতেন। নামাযের ওপর অন্য কোনো কিছুকেই অগ্রাধিকার দিতেন না। নামাযের ক্ষেত্রে ইমাম ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী। একমাত্র আল্লাহর কাছেই নিজের সকল অভাব-অভিযোগের কথা বলার উপদেশ দিতেন ইমাম। অন্যের কাছে অভাবের কথা বলে বেড়ালে ব্যক্তিত্বের হানি ঘটে। তাই তিনি অভাব অনটনে জনগণকে ধৈর্য ধারণ করার উপদেশ দিতেন। তিনি বলেছেন, €˜যতোক্ষণ পর্যন্ত পারো ধৈর্য ধরো, সহ্য করো! কারো দ্বারস্থ হয়ো না! কেননা প্রতিদিনের জন্যেই নতুন করে রিযিকের ব্যবস্থা হয়। জেনে রাখো চাহিদা মেটানোর জন্যে পীড়াপীড়ি করলে মানবীয় মূল্যবোধ এবং ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয়। তাই ধৈর্যধারণ করো যতোক্ষণ না আল্লাহ তোমার জন্যে দ্বার উন্মুক্ত না করেন। আল্লাহর নিয়ামতের প্রত্যেকটারই নির্দিষ্ট সময় আছে। তাই যে ফলটি এখনো পাকে নি,তাড়াহুড়ো করো না,সময়মতো সে ঠিকই পাকবে।'
 
 
ইমামের এই বাণী থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। আমরা যতোই ইবাদাত করি এবং আল্লাহর দরবারে বিভিন্ন সাহায্য প্রার্থনা করি, সেসবের ব্যাপারে হতাশ হবার কিছু নেই। আমরা অনেক সময় আল্লাহর কাছে চেয়ে পেলাম না বলে মনে মনে হতাশ হই, রুষ্ট হই। এটা ঠিক নয়। বরং আল্লাহর কাছে মুনাজাত দিয়ে ধৈর্য ধারণ করুন। সময়মতো আল্লাহ নিশ্চয়ই প্রতিদান দেবেন। কখন কোথায় কীভাবে দেবেন-যদিও আমরা সে ব্যাপারে কিছুই জানি না।#
রেডিও তেহরান

নৈতিকতা, ধর্ম ও জীবন - প্রথম পর্ব

যে কোনো মানুষের জন্যই আত্মশুদ্ধি, নৈতিক পরিশুদ্ধি এবং সদাচার অত্যন্ত জরুরি। এসব গুণ ছাড়া প্রকৃত কল্যাণ অর্জন সম্ভব নয়। একজন ব্যক্তি যদি পৃথিবীর সব জ্ঞান অর্জনের পরও নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়,তাহলে সে ব্যক্তিকে পরিপূর্ণ স্বার্থক বলা যাবে না। মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। বৈজ্ঞানিক ও শিল্প ক্ষেত্রেও চোখ ধাঁধানো সাফল্য পাচ্ছে মানুষ। কিন্তু আত্মিক ও নৈতিক ক্ষেত্রে মানুষের সাফল্য কতটুকু? মানুষ কি ক্রমেই নীতিবান হচ্ছেন নাকি আরো নীতিহীন হয়ে পড়ছেন? বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে নজর দিলে সে প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে সহজেই। বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রই এখন ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতাকে পরিহার করছে। তারা ধর্মীয় শিক্ষাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে চলছে। এর ফলে দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা। আত্মিক ও নৈতিক পরিশুদ্ধির  গুরুত্ব উপলব্ধি করতে ব্যর্থতা  ও নৈতিকতা সংক্রান্ত  প্রশিক্ষণ কর্মসূচি না থাকার কারণে পাশ্চাত্যে সমকামিতার মতো নানা ঘৃণ্য সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ছে।


এ পরিস্থিতিতে পাশ্চাত্যের চিন্তাবিদ ও গবেষকরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। যারা মানব জাতির ভবিষ্যৎ ও পরিণতি নিয়ে ভাবেন, স্বাভাবিকভাবেই তারা নৈতিক অবক্ষয়ের বিপদের বিষয়ে শঙ্কিত না হয়ে পারেন না। মার্কিন অধ্যাপক থমাস লিকোনা এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘ আমরা আসলে কোথায় যাচ্ছি ? এখন সদ্যজাত শিশুদেরকে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটছে। প্রতি বছর আমেরিকায় ১৫ লাখ ভ্রুণ হত্যা করা হচ্ছে। শিশুদের ওপর শারীরিক ও যৌন নির্যাতনও ক্রমেই বাড়ছে। কে জানে ৫০ অথবা ১০০ বছর পরের প্রজন্ম এ পরিস্থিতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবে? জনমত জরিপগুলোর ফলাফলেও দেখা যাচ্ছে, আমেরিকার জনগণের একটা বড় অংশ এটা বুঝতে পাচ্ছেন যে, দেশটি আধ্যাত্মিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের কবলে পড়েছে। তারা এটাও বুঝতে পাচ্ছেন যে, মার্কিন শিশুদেরকে স্কুল ও পরিবারে নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা দেয়া উচিত।’ অধ্যাপক থমাস লিকোনা এর মাধ্যমে পাশ্চাত্যে নৈতিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।


পাশ্চাত্যের দেশগুলোর পাশাপাশি অনেক মুসলিম দেশেও ধর্মীয় শিক্ষা গুরুত্ব পাচ্ছে না। এর একটি কারণ হলো, ধর্ম ভিত্তিক নীতি-নৈতিকতা ও শিক্ষার গুরুত্ব এখনো অনেক মুসলমানই বুঝতে সক্ষম হননি। ইসলাম ধর্মকে পুরোপুরি বুঝতে না পারার কারণেই এ ধরনের সমাজে নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষ সৃষ্টি করতেই পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষ হচ্ছে আল্লাহর এক মহান সৃষ্টি। মানবদেহ সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণা সত্ত্বেও এখনো অনেকেই বলছেন, মানবদেহ সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি জানা সম্ভব হয়নি। মানুষ হচ্ছে দ্বিমাত্রিক জীব। মানুষের রয়েছে শরীর ও আত্মা। অন্য সব প্রাণীর সঙ্গে অনেক মিল থাকলেও মানুষই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ জীব। মানুষের এমন কিছু গুণাবলী রয়েছে,যা অন্য কোনো প্রাণীর নেই।


পরম সত্ত্বা আল্লাহর সর্বোত্তম ও সৌন্দর্যতম প্রকাশ হচ্ছে মানুষ। প্রতিটি মানুষের মাঝে আল্লাহতায়ালা এমন সব যোগ্যতা দিয়েছেন যে, মানুষ ইচ্ছে করলে নিজেকে সর্বোত্তম সৃষ্টি হিসেবে প্রকাশ করতে পারে। আবার এই মানুষই নিকৃষ্টতম সৃষ্টিতে পরিণত হতে পারে। মানুষকে আধ্যাত্মিক এবং বৈষয়িক উন্নতি সাধন ও পূর্ণতা লাভের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। একদিকে প্রজ্ঞা, আর অন্যদিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নির্বাচন করার যোগ্যতা হলো মানুষের দু’টি বড় প্রাপ্তি। মানুষের জন্য সততার পথ উন্মুক্ত। নবী-রাসূলেরা হচ্ছেন মানুষের পথপ্রদর্শক ও প্রেরণাদাতা। তবে মানুষ কামনা-বাসনা, অজ্ঞতা ও উদাসীনতার কবলে পড়ে চরমভাবে বিভ্রান্ত হতে পারে এবং পূর্ণতা ও উৎকর্ষতা লাভের সুযোগ হাতছাড়া করতে পারে।


কাজেই মানুষের সামনে দু’টি পথই খোলা রয়েছে। মানুষ পূর্ণতার পথেও যাত্রা করতে পারে, আবার চরম পতনের দিকেও ধাবিত হতে পারে। পবিত্র কুরআনের সূরা শামসের ৭,৮,৯ ও ১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
মানুষের নফসের ও সেই সত্ত্বার কসম, যিনি তাকে সঠিকভাবে গঠন করেছেন। এবং [শপথ ] তার পাপ পুণ্যের জ্ঞানের। সেই-ই সফলকাম যে তার [ আত্মাকে ] পরিশুদ্ধ করে এবং সেই-ই ব্যর্থ হয়েছে যে তা দুর্নীতিগ্রস্ত করেছে।
 

এসব আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, মানুষ উন্নতির মাধ্যমে ফেরেশতার চেয়েও উঁচু মর্যাদায় পৌঁছতে পারে। অপরদিকে মানুষ পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট অবস্থানে নিজেকে নিয়ে যেতে পারে। কাজেই ব্যক্তির ওপরই নির্ভর করে তার পরম স্বার্থকতা ও চরম ব্যর্থতার বিষয়টি।


আল্লাহতায়ালা মানুষের সামনে ভালো ও মন্দ- এ উভয় পথই খোলা রেখেছেন। মানুষ তার আক্‌ল বা বিবেকের মাধ্যমে এবং নবী-রাসূলগণের পথনির্দেশনায় ভালো ও মন্দকে আলাদা করতে পারে। যারা ঐশী শিক্ষার আলোকে আত্মগঠন করতে পারে, আত্মার উন্নতি সাধন করতে পারে এবং পাপ-পঙ্কিলতা থেকে দূরে থাকতে পারে, তারাই প্রকৃত সফলকাম,তারাই কেবল পরিত্রাণের আশা করতে পারে। রাসূল (সা.) কে  পৃথিবীতে পাঠানোর একটি প্রধান উদ্দেশ্য হলো, পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা। সূরা জুমার ২ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে:  তিনিই মহান সত্তা যিনি উম্মীদের  মধ্য থেকে তাদেরই একজনকে রসূল করে পাঠিয়েছেন যে তাদেরকে তাঁর আয়াত শোনায়, তাদের জীবনকে সজ্জিত ও সুন্দর করে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। অথচ ইতিপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল। রাসূল (সা.) রেসালাতের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন, উন্নত নৈতিক গুণাবলীকে পূর্ণতা দিতে আমাকে পাঠানো হয়েছে।
 

কাজেই প্রচলিত শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি সবাইকে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে, নইলে গোটা মানবজাতিই চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।(রেডিও তেহরান)


source : alhassanain
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

কারবালা ও ইমাম হোসাইন (আ.)- ১ম পর্ব
ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাবের ৬ মাস ...
হাসনাইন (ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন) ...
মসনবীর গল্প
অর্থসহ মাহে রমজানের ৩০ রোজার দোয়া
ইমাম হাসান আসকারী (আ.) এর জন্ম ...
সমাজ কল্যাণে আল-কুরআনের ভূমিকা
ইসলাম এবং আধ্যাত্মিকতা
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ...
কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনা : একটি ...

 
user comment