বাঙ্গালী
Friday 29th of March 2024
0
نفر 0

রমজান: খোদা-প্রেমের অসীম সাগর-৮

রমজান মাসে পাপ এড়ানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা আলোচনা করছিলাম গত কয়েক অনুষ্ঠানে। পাপ পরিহারের প্রচেষ্টায় সাফল্য অর্জন করতে হলে খোদাভীরু হতে হবে এবং পাপ এড়ানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানোও জরুরি।
রমজান: খোদা-প্রেমের অসীম সাগর-৮

রমজান মাসে পাপ এড়ানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা আলোচনা করছিলাম গত কয়েক অনুষ্ঠানে। পাপ পরিহারের প্রচেষ্টায় সাফল্য অর্জন করতে হলে খোদাভীরু হতে হবে এবং পাপ এড়ানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানোও জরুরি।
 
 
 
কেউ যদি ভাবে যে আমি ইচ্ছে করেই বা জেনে-শুনে পাপের পথেই থাকবো অথচ আল্লাহ তাকে জোর করে পাপের পথ থেকে সুপথে টেনে আনবেন-এমন ধারণা হাস্যকর।
 
আমরা অনেক সময় জালিমের জুলুমের ভয়ে বা জুলুমের বিরুদ্ধে কেউ এগিয়ে আসছে না দেখে পাপে জড়িয়ে পড়ি। আসলে জালিমদের বাহ্যিক ভালো অবস্থা দেখে হতাশ হতে নেই।
 
 
 

মহানবী (সা.) বলেছেন, " যখন তোমরা কেউ দেখ যে, কেউ অন্যায়, অবিচার ও পাপাচার করে চলেছে অথচ আল্লাহ তাকে অঢেল নিয়ামত দান করেছেন, তখন বুঝে নিও যে আল্লাহ তার রশিটা বেশি লম্বা বা দীর্ঘ করে দিয়েছেন, আর আল্লাহ এক টানেই এদের গুটিয়ে ফেলবেন।"
 
 
 
অনেক সময় আমরা একই বিষয়ে নানা পথ ও মত দেখে বিভ্রান্ত হই এবং হতাশ হয়ে ধর্ম থেকেই দূরে সরে পড়ি। অথচ পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন,
 
'যারা মনোনিবেশ সহকারে (নানা মতের) কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেন এবং তারাই বুদ্ধিমান।' (সুরা জুমার-১৮)
 
 
 
বিশ্বনবী (সা.)'র হাদিসে এসেছে, আমার উম্মতের মধ্যে ৭২ ফিরকা হবে। তবে ৭২ ফিরকার মধ্যে কেবল এক ফিরকাই বেহেশতে যাবে। -এখানে ৭২ ফিরকা বলতে হুবহু যে ৭২ ফিরকা বোঝানো হয়েছে তা নয়। বাস্তবে মুসলমানদের মধ্যে ৭২টি নয় বরং শত শত ফিরকা সৃষ্টি হয়েছে নানা যুগে।  মহানবী (সা.) বলেছেন, আমার আহলে বাইত হচ্ছে নুহের কিশতির সমতুল্য, যারা তাতে আরোহণ করবে, তারা নাজাত পাবে, আর যারা তাতে আরোহণ করবে না তারা নাজাত পাবে না। মহানবী (সা.) আরও বলেছেন, পবিত্র কুরআন ও আহলে বাইত কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না পরস্পর থেকে।
 
 
 
মহান আল্লাহ আমাদেরকে যেন পবিত্র কুরআনের অনুসারী করেন এবং বিশ্বনবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের প্রতি অসংখ্য দরুদ ও সালাম পাঠানোর উসিলায় আমাদেরকে চরম প্রশান্তি ও সৌভাগ্য লাভের সুযোগ দান করেন।
 
 
 
পাপ পরিহারের জন্য আমাদের কুরআন ও হাদিসের জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং বিশেষ করে মহানবী (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের বক্তব্যের আলোকে জীবনকে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। আমরা যদি এভাবে সচেষ্ট হই তাহলে ভুলেও কখনও গিবত, তোহমৎ বা অপবাদ, পরনিন্দা, চোগলখুরি, সুদ-ঘুষ, ব্যভিচার ও অন্য কোনো ধরনের পাপে জড়িয়ে পড়ব না। বলা হয় একজন মু'মিন মুসলমানের উচিত প্রতিদিন পবিত্র কুরআন থেকে ৫০ আয়াত পাঠ করা। পাপ এড়ানোর নানা কৌশলের জ্ঞানসহ যেসব কারণে নামাজ রোজা ও নানা ইবাদত এবং সৎ কাজ মূল্যহীন হয়ে পড়ে তা আমরা জানতে পারি বিশ্বনবী (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতসহ অন্যান্য মহাপুরুষদের জীবনী থেকে। মহানবী (সা.)'র সহি বা সঠিক হাদিস ও আহলে বাইতের জীবন পবিত্র কুরআনেরই নানা নীতির ব্যাখ্যা তুলে ধরে। ইসলামের পবিত্র মহাপুরুষদের রেখে যাওয়া নানা বক্তব্য, বাণী ও ভাষণ ছাড়াও তাঁদের দোয়াগুলো অধ্যয়ন পাপ পরিহারের পাশাপাশি উন্নত চরিত্র ও জীবন গঠনের জন্য খুবই সহায়ক। এ ধরনের কয়েকটি বিখ্যাত দোয়া হল, মুনাজাতে শাবানিয়া, দোয়ায়ে কুমাইল, দোয়ায়ে আবু হামজা সুমালি, দোয়ায়ে আরাফা এবং সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ায় বর্ণিত নানা দোয়া।
 
 
 
সহিফায়ে সাজ্জাদিয়া হচ্ছে মহান ইমাম হযরত যাইনুল আবেদিন (আ.) বা ইমাম সাজ্জাদের রেখে যাওয়া প্রাণস্পর্শী নানা দোয়ার সংকলন। এখানে রয়েছে 'মাকারিমুল আখলাক বা সর্বোচ্চ নৈতিক গুণাবলী' শীর্ষক বিখ্যাত দোয়াসহ বহু বিষয়ের দিক-নির্দেশনায় সমৃদ্ধ অনেক দোয়া।
 
 
 
পাপ এড়ানোর জন্য আমাদেরকে মানুষের ওপর আল্লাহর অধিকার, মানুষের অধিকার ও পরিবেশ ও প্রকৃতির অধিকার এবং এমনকি নিজের ওপর নিজের অধিকার সম্পর্কেও জ্ঞান অর্জন করা উচিত। আর এইসব অধিকারের বিবরণ রয়েছে সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ায়। আমরা আল্লাহর অধিকারের ক্ষেত্রে যত পাপই করি না কেনো তওবার মাধ্যমে সেইসব পাপ মোচন করা সম্ভব। তাই কখনও আল্লাহর রহমতের ব্যাপারে কোনো মুসলমানের হতাশ হওয়া উচিত নয়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ হতাশাকে একমাত্র কাফির ও মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেছেন। তবে আমরা যদি কোনো মানুষের অধিকার এবং তার সম্মান, সম্পদ ও পরিবারের কোনো ক্ষতি করে থাকি সে জন্য যতক্ষণ সেই ব্যক্তি আমাদের ক্ষমা না করেন ততক্ষণ আল্লাহ সেই পাপ ক্ষমা করেন না। তাই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ করতে হবেও  তার কাছেই সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ক্ষমা চাইতে হবে।
 
 
 
পাপ এড়ানোর প্রশিক্ষণের একটি কৌশল হল, প্রবৃত্তি বা নফসের ঠিক বিপরীত দিকে চলা এবং এ জন্য হালাল অথচ জরুরি নয় এমন বিষয়গুলো পরিহার করা। যেমন,যে কথা না বললেই নয় এমন কথা না বলা, প্রবল ক্ষুধা না পেলে কিছু না খাওয়া বা ক্ষুধা মোটামুটি মিটে যাওয়ার পরই আর কিছু না খাওয়া,  সুস্বাদু খাবার এড়িয়ে চলা, গরমের সময় ঠাণ্ডা পানি ও শীতের সময় গরম পানি পান বা ব্যবহার না করা, বেশি বিশ্রাম না করা, চাকচিক্যময় পোশাক পরিহার, প্রতিহিংসার কারণে কারো কোনো সাফল্য বা ভালা কাজের প্রশংসা করতে ইচ্ছে না হলেও তা করা, অপমানজনক বা মন্দ কথা ও কাজের জবাবে রেগে না গিয়ে ভালো কিছু বলা ও করা ইত্যাদি। আসলে এইসব বিষয়ে প্রশিক্ষণের সবচেয়ে মোক্ষম সময় হল পবিত্র রমজান মাস। কারণ, মানুষ এ সময় ক্ষুধা ও তৃষ্ণা সহ্য করার মাধ্যমে চরিত্র আর মানসিক প্রকৃতিকে উদার ও সহনীয় করার চেষ্টা করে।
 
এবারে পড়া যাক অর্থসহ অষ্টম রোজার দোয়া:
 

اليوم الثّامن : اَللّـهُمَّ ارْزُقْني فيهِ رَحْمَةَ الاَْيْتامِ، وَاِطْعامَ اَلطَّعامِ، وَاِفْشاءَ السَّلامِ، وَصُحْبَةَ الْكِرامِ، بِطَولِكَ يا مَلْجَاَ الاْمِلينَ .
হে আল্লাহ ! তোমার উদারতার উসিলায় এ দিনে আমাকে এতিমদের প্রতি দয়া করার, ক্ষুধার্তদের খাদ্য দান করার, শান্তি প্রতিষ্ঠা করার ও সৎ ব্যক্তিদের সাহায্য লাভ করার তৌফিক দাও । হে আকাঙ্খাকারীদের আশ্রয়স্থল ।
 
 


source : irib.ir
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

মুসলিম-দর্শনে অনাদিত্ব বিষয়ক ...
লম্বা স্কার্ট পরায় স্কুল ছাত্রী ...
যদি আল-মাজেদ জীবিত থাকতেন...
রোহিঙ্গা ফেরত নেয়া নিয়ে ইরানি ...
সূরা হুদ;(১৭তম পর্ব)
আয়াতুল্লাহ জাকজাকি বেঁচে আছেন ...
সালাতে তারাবী না তাহাজ্জুদ ?
ইরানের কয়লা খনিতে বিস্ফোরণ: ৩৫ ...
মুসলিম সমাজে স্বামী-স্ত্রীর ...
সূরা আত তাওবা; (১৭তম পর্ব)

 
user comment