বাঙ্গালী
Friday 29th of March 2024
0
نفر 0

গাদীর একটি ঐতিহাসিক স্থান ও একটি ঐতিহাসিক ঈদ দিবস

গাদীরের হাদিসের অন্তর্নিহিত কথাঃ
যে কথাটি গাদীরের হাদিসের ক্ষেত্রে সাক্ষ্য বহন করে ও গাদীরের ঘটনার বাস্তব তাৎপর্য যার ভিতর নিহিত সেটা হচ্ছে- রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ ‘আমি যাদের যাদের মাওলা, এই আলীও তাদের তাদের মাওলা'। যারা এই হাদিসটির "মাওলা" শব্দটি এই অর্থে ব্যবহার করেছেন যে, "আওলা" বা প্রধান, "আওলা" বা উন্নততর অর্থাৎ এমন এক ব্যক্তি যিনি অন্যতম বা প্রধান, সহজ ভাষায় যা বলা যায় যে, যিনি অভিভাবকত্বের, নেতৃত্বের ও স্বত্বাধীকারীর ক্ষেত্রে উপযুক্ত। উক্তধারায় এই হাদিসের অর্থ দাঁড়ায় "আমি যাদের যাদের অভিভাবক ও নেতা বা প্রধান এই আলীও তাদের তাদের অভিভাবক ও নেতা বা প্রধান"। সুতরাং যারা রাসূলের (সাঃ) নেতৃত্ব ও অভিভাবকত্বের সাথে একাত্ম, শুধুমাত্র তারাই আলীর নেতৃত্ব ও অভিভাবকত্বের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করবেন।

এ পর্যায়ে অবশ্যই জানা দরকার যে, আরবি ভাষাতে "মাওলা" শব্দের অর্থ কি ঠিক এভাবে ব্যবহৃত হয়েছে না কি অন্যভাবে? আবার যদি মেনেও নিই যে, এই একই অর্থেই আরবি ভাষাতেও "মাওলা" শব্দের ব্যবহার হয়েছে, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে- এই খুতবাতেও (বক্তব্যেও) কি সেই অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে? না-কি, না।

মরহুম আল্লামা আমিনী ৪২ জন বড় বড় মুফাস্‌সির ও আভিধানিক আলেমদের নাম উল্লেখ করেছেন, যাদের মধ্যে ২৭ জনই বলেছেন যে, "মাওলা" এর অর্থ "আওলা"বা প্রধান। বাঁকী ১৫ জন বলেছেন- "আওলা" হচ্ছে- "মাওলা" শব্দের বিভিন্ন অর্থের মধ্যে একটি অর্থ।

কিন্তু উক্ত হাদিসেও কি "মাওলা" শব্দের ঐ একই অর্থ বুঝাতে চেয়েছেন? তাহলে দেখতে হবে যে, তিনি কোন পরিস্থিতিতে, কোন স্থানে এই হাদিসটি পাঠ করেছেন। আর খুতবাটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, ঐ বাক্যটিতে ব্যবহৃত "মাওলা" শব্দের অর্থটি নিঃসন্দেহে "আওলা" অর্থাৎ প্রধান হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে।

কেননা রাসূলের (সাঃ) মত ব্যক্তি যিনি পরিপূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী পূর্ণাঙ্গ মানব ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং আসমানী দূত, ঐ রকম একটি দিনে, যে দিনের অপমাত্রা এত বেশী ছিল যে, সেখানকার মাটিগুলো গলিত লৌহের মত জনগণের পাগুলোকে মনে হচ্ছিলো গলাচ্ছে এবং সূর্য্য মাথার মগজকে মনে হচ্ছিলো টগবগ করে ফুটাচ্ছে, উত্তপ্ত মরুভূমি সেটাও আবার কোন ব্যবস্থাপনা ছাড়াই সেখানে এমন অবস্থা ছিল যেন, মাটিতে মাংস ফেললে তা কাবাবে পরিণত হবে। ঐ স্থানটি ছিল এমনি এক এলাকায় যেখানে কোন কাফেলা বা পথযাত্রীই থামে না, সেখানে হাজার হাজার হাজীদেরকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন, অগ্রগামীদের প্রত্যাবর্তন করিয়েছেন ও অপেক্ষায় ছিলেন যাতে পশ্চাৎগামীরা উপস্থিত হয় এবং দিনের সর্বাধিক তাপমাত্রার সময় চাচ্ছেন ভাষণ দিতে। তাছাড়াও তিনি কয়েকবার জনগণের নিকট প্রশ্ন করলেন যাতে পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন হয় যে, তারা তাঁর আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন কি না এবং সবশেষে আলীকে (আঃ) তাদের সামনে তুলে ধরলেন ও নাম এবং বংশপরিচয়সহ তাকে পরিচয় করালেন এবং বললেনঃ "আমি যাদের যাদের নেতা বা প্রধান এই আলীও তাদের তাদের নেতা বা প্রধান"। অতঃপর সকলকে দায়িত্ব দিয়ে বললেন যেন, তারা এই বার্তাটি অনুপস্থিতদের কর্ণগোচর করে। তারপর সবাইকে নির্দেশ দিলেন যে, তার সাথে যেন বাইয়াত (শপথ গ্রহণ) করে ও তাকে স্বাদর-সম্ভাষণ জানায় এবং স্বীয় পাগড়ী মোবারকটি তার মাথায় পড়ালেন ও বললেনঃ- "পাগড়ী হচ্ছে আরবের তাজ বা মুকুট" আর সাহাবীদের বললেনঃ বদর যুদ্ধের দিন যে সকল ফেরেশ্‌তা আমাকে সাহায্যার্থে এসেছিল তারা ঠিক এরূপ পাগড়ীই পড়ে এসেছিল।

এখন যদি আমরা ধরেও নিই যে, হাদিসটি কোন প্রকার ইশারা-ইঙ্গিত ও তাফসীর-ব্যাখ্যা ছাড়াই কারো নিকট পৌঁছালো ও নিরপেক্ষভাবে সে হাদিসটিকে পর্যালোচনা করলো, তাহলেও এই হাদিসের অর্থ স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, হাদিসটির অর্থ তাদের কথার বিপরীতে, যারা রাসূল (সাঃ) সম্পর্কে অনবগত থাকার কারণে বলে থাকে যে, তিনি (সাঃ) বলতে চেয়েছেনঃ "আমি যাদের যাদের বন্ধু এই আলীও তাদের তাদের বন্ধু" অথবা "আমি যাদের যাদের সাথী এই আলীও তাদের তাদের সাথী"! কেননা, বন্ধুত্ব ও সাথীর ক্ষেত্রে বাইয়াত বা শপথের প্রয়োজন পড়ে না, পাগড়ী বা মুকুট পড়ানো দরকার হয় না, মোটকথা এত গুরুত্ব দেওয়ার কোন কারণই নেই যে, ঐরুপ পরিস্থিতিতে ও ঐরুপ ভূমিকাসহ ঘোষণা দিতে হবে।

এসব দলিলের উপর ভিত্তি করেই মরহুম সাবেত ইবনে জৌওজী যিনি আহলে সুন্নাতের একজন আলেম, এ সম্পর্কে একটি বিশাল আলোচনার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, উক্ত হাদিসে "মাওলা" শব্দের অর্থ "আওলা" বা প্রধান।

ইবনে তারহা তার "মাতালিবুস সৌ'উল" গ্রন্থে লিখেছেনঃ হযরত রাসূল (সাঃ) "মাওলা" শব্দের যে অর্থই নিজের জন্য ব্যবহার করেছেন, আলীর জন্যেও ঠিক একই অর্থই প্রয়োগ করেছেন। আর এটা একটা উচ্চ মর্যাদা যা বিশেষ করে আলীর জন্য ব্যবহার করেছেন।

উল্লিখিত ফলাফলটি ঐ একই ফলাফল যা রাসূলের (সাঃ) খুতবার প্রতিটি বাক্যে প্রমাণ বহন করে ও ঐ একই জিনিস যা, একলক্ষ বিশ হাজার প্রকৃত আরববাসী দ্বিধা-দ্বন্দহীনভাবে রাসূলের (সাঃ) বাণীকে অনুধাবন করেছিলেন। আর তাই হাস্‌সান উঠে দাঁড়িয়ে আলীর (আঃ) শানে কবিতা আবৃতি করেছিলেন এবং রাসূলও (সাঃ) তাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন।

এরপর থেকে যারাই এ ঘটনা শুনেছে তারা সবাই একই রকম বিষয় অনুধাবন করেছে যে, রাসূল (সাঃ) স্বীয় প্রতিনিধি নির্ধারণ করেছেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আভিধানিকগণ এবং আলেমগণও ঠিক ঐ একই রকম বিষয়বস্তু অনুধাবন করেছেন। আর শত শত আরবি কবি ও অন্যান্য কবিগণ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কবিতা রচনা করেছেন এবং তাতে উল্লেখ করেছেন যে, রাসূল (সাঃ) স্বীয় প্রতিনিধি হিসেবে আলীকে নির্ধারণ করেছেন। আর সে কারণেই গাদীর দিবসকে সম্মানের সাথে স্মরণ করা হয়।

হযরত আলী (আঃ) তাঁর প্রকাশ্য খেলাফতকালে কুফা শহরে অনেকবার এই হাদিসটি উল্লেখ করে রাসূলের (সাঃ) সাহাবীদেরকে কসম দিতেন যাতে যা কিছু এ সম্পর্কে তাদের স্মরণে আছে তার সাক্ষ্য প্রদান করে তাও আবার চল্লিশ বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর এবং রাসূলের (সাঃ) অনেক সাহাবী ইন্তেকাল করার পর। আর যারাও বা অবশিষ্ট ছিল তারাও ছিল বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এবং কুফাও ছিল সে সময়ে সাহাবীদের প্রাণকেন্দ্র মদীনা হতে অনেক দূরে এবং তিনিও কোন পূর্ব পরিকল্পনা ব্যতিতই বা কোন ভূমিকা ছাড়াই তাদের নিকট সাক্ষ্য চেয়েছিলেন। তারাও কোন ধরণের অজুহাত দেখানো ছাড়াই আমিরুল মোমিনীন আলীর (আঃ) কথার সত্যতা স্বীকার করেছিল। বর্ণনাকারীগণ সাক্ষীদের যে সংখ্যার কথা উল্লেখ করেছেন তা একেক জনের বর্ণনা একেক মতন, কোন কোন বর্ণনা মতে ৫ অথবা ৬ জন অন্য এক বর্ণনায় ৯ জন আর এক বর্ণনায় ১২ জন অপর এক বর্ণনায় ১২ জন বদরী সাহাবী অন্য এক বর্ণনায় ১৩ জন অপর এক বর্ণনায় ১৬ জন এক বর্ণনায় ১৮ জন এক বর্ণনায় ৩০ জন এক বর্ণনায় একদল লোক এক বর্ণনায় ১০ জনেরও বেশী এক বর্ণনায় কিছু সংখ্যক এক বর্ণনায় কয়েক দল লোক এবং এক বর্ণনায় ১৭ জন ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদান করেছেন যে, গাদীর দিবসে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ

"আমি যাদের মাওলা বা নেতা এই আলীও তাদের মাওলা বা নেতা"।

অনুরুপভাবে আহলে বাইত (নবীর পরিবার) ও তাঁদের সাথীগণ এবং অনুসারীগণও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই হাদিসকে প্রমাণ স্বরূপ উপস্থাপন করেছেন। মরহুম আল্লামা আমিনী এ ধরণের ২২টি প্রামাণ্য চিত্র তুলে ধরেছেন।

 

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article


 
user comment