বাঙ্গালী
Wednesday 24th of April 2024
0
نفر 0

পিতা মাতার সাথে উত্তম আচরণ

পার্থিব জীবনে সন্তানের গর্ভধারণ, শৈশবে লালন-পালন এবং মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে পিতা-মাতার অবদান অপরিসীম। তাদের অকৃত্রিম স্নেহ ও ভালোবাসা ব্যতীত পৃথিবীতে কোনো সন্তানের জীবনযাপন করা সম্পূর্ণ অসম্ভব। একজন মা তার স্নেহের পরশ দিয়ে তার সন্তানকে অতি ক্ষুদ্র এক খণ্ড রক্তপিণ্ড থেকে বড় করে তোলেন।
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায়ের পাশাপাশি পিতা-মাতার অবদানের জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নির্দেশ দিয়ে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে, ‘আমি মানুষকে (তাদের) পিতা-মাতার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছি যেন তারা তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করে। কেননা তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং দুই বছর পরই সে বুকের দুধ খাওয়া ছেড়েছে। তুমি তোমার নিজের সৃষ্টির জন্য আমার শোকর আদায় করো এবং তোমার লালন-পালনের জন্য পিতা-মাতারও কৃতজ্ঞতা আদায় করো। তোমাদের সবাইকে আমাদের কাছেই ফিরে আসতে হবে।' [সূরা লোকমান : আয়াত-১৪]
আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক না করার নির্দেশ প্রদানের পাশাপাশি মাতা-পিতার সাথে সুন্দর আচরণ করার আদেশ করে মহান আল্লাহপাক সূরা বনি ইসরাইলের ২৩ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘তোমার মালিক আদেশ করছেন, তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কারো ইবাদত করো না এবং তোমরা (তোমাদের) পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো; তাদের একজন কিংবা উভয়ই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তাহলে তাদের সাথে বিরক্তিসূচক কিছু বলো না এবং কখনো তাদের ধমক দিয়ো না, তাদের সাথে সম্মানজনক ভদ্রজনোচিত কথা বলো।' এ ছাড়া সূরা বনি ইসরাইলের ২৪, সূরা আন নিসার ৩৬, সূরা আনকাবুতের ৮ এবং সূরা আল আহকাফের ১৫ নম্বর আয়াতে পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিশ্ব জগতে যা কিছু আছে তার সব কিছুর স্রষ্টা হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা। তাঁর হুকুম ও নির্দেশ মোতাবেক বিশ্বের সব কিছু নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। আল্লাহপাকের অগণিত সৃষ্টির মাঝে মানুষ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আর এ সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় মাধ্যম হিসেবে কাজ করছেন মাতা-পিতা। অবশ্য এ কথাও ঠিক যে, মাতা-পিতার নিজেদের ইচ্ছাতে বা তাদের খেয়াল-খুশিমতো দুনিয়াতে সন্তানের আবির্ভাব ঘটে না। এ ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশ বা হুকুমই সবচেয়ে বড় বিষয়। আল্লাহ যদি ইচ্ছা না করেন কোনো মাতা-পিতার পক্ষে সন্তান জন্মদান সম্ভব নয়। যেহেতু সন্তানের গর্ভধারণ থেকে শুরু করে তার শৈশব, কৈশোর পর্যন্ত মাতা-পিতা বহুমাত্রিক ভূমিকা পালন করে থাকেন এ জন্য মহান আল্লাহপাক মাতা-পিতার সে ভূমিকাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখার জন্য সন্তানকে নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিষয়টিকে সন্তানের কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উপস'াপন করা হয়েছে যে, আল্লাহর প্রতি শিরকমুক্ত ইবাদতের সাথে সাথেই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
কুরআনুল কারিমে মাতা-পিতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাদের সাথে উত্তম আচরণ করার যে নির্দেশ সন্তানকে দেয়া হয়েছে তাকে যদি কেউ গুরুত্বহীন মনে করে কিংবা হালকাভাবে গ্রহণ করে তাহলে ইসলামের সঠিক পথ থেকে সে ছিটকে পড়বে এবং আল্লাহর সন'ষ্টি অর্জনে ব্যর্থ হবে। এক ব্যক্তি একবার রাসূলে করিম সা:কে জিজ্ঞাসা করল, ‘সন্তানের ওপর পিতা-মাতার হক কী?' তিনি বললেন, ‘তারা উভয়ই তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম।' এ হাদিস দ্বারা পরোক্ষভাবে এ কথাই বলে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী পিতা-মাতার সাথে ব্যবহার করলে সন্তান জান্নাতে যাবে অন্যথায় তার জন্য জাহান্নামের শাস্তি অবধারিত। অন্য একটি হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে পিতা-মাতার আনুগত্য করে, তার জন্য জান্নাতের দু'টি দরজা খোলা থাকবে এবং যে ব্যক্তি তাদের অবাধ্য হবে, তার জন্য জাহান্নামের দু'টি দরজা খোলা থাকবে।'
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমাদের চার পাশে আমরা যে চিত্র দেখি তাতে এ কথা সহজেই বলা যায়, পিতা-মাতার সাথে সন্তানের যে শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক থাকা উচিত তার যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। আজকের সমাজে সন্তানকে যেভাবে আদর্শ শিক্ষা দিয়ে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা দরকার ছিল তা যেমন মাতা-পিতা করছেন না তেমনি সন্তানও বড় হয়ে মাতা-পিতার সাথে ইসলামের মানদণ্ড বজায় রেখে আচরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে মাতা-পিতা ও সন্তানের মধ্যকার যে মধুর সম্পর্ক থাকা দরকার ছিল তা আমলেই নেই এবং দিন দিন তা আরো খারাপ হচ্ছে। আর এর চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে তথাকথিত ‘ওল্ড হোম'। যেসব সন্তান তাদের পিতা-মাতাকে ‘ওল্ড হোমে' পাঠিয়ে দিয়ে নিজেদের ঝামেলামুক্ত(!) রাখতে ব্যস্ত, তারা কি জান্নাত না জাহান্নামের পথে ধাবমান, সে বিষয়টি উপলব্ধি করার অনুরোধ রইল।
লেখক : আবুল কালাম আজাদ

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

সমাজ কল্যাণে আল-কুরআনের ভূমিকা
ইসলাম এবং আধ্যাত্মিকতা
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ...
কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনা : একটি ...
কোরআনের দৃষ্টিতে মহান আল্লাহর ...
উলিল আমর
আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.) এর ...
মক্কায় দুর্ঘটনায় ৫ ইরানি নিহত; ...
রমজান: খোদা-প্রেমের অসীম সাগর (১২)
মহৎ গুণাবলির আকর হযরত যয়নাব (আ.)

 
user comment