বাঙ্গালী
Saturday 20th of April 2024
0
نفر 0

মুসলিম সমাজে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত ১০ম পর্ব

আপনার সংসারটা কি সত্যিই সোনালী নীড় ? এ প্রশ্নের যথার্থ উত্তর যদি মনে মনে ‘না' বা নেতিবাচক হয়, তাহলে এ আলোচনা আপনার জন্যে। আর প্রশ্নের জবাবটি যদি ‘হ্যাঁ' হয়, তাহলেও আলোচনা আপনার জন্য, কারণ এ আসর আপনাকে ব্যক্তিগত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এছাড়া যারা এখনো সংসার জীবনে প্রবেশ করেননি, তবে করতে যাচ্ছেন, এ আলোচনা তাদের জন্য-কারণ এ আসর আপনাকে পারিবারিক কাঠামোয় প্রবেশের প্রস্তুতি নিতে যথার্থ দিক-নির্দেশনা দেবে।
একটি হাদিস উদ্ধৃত করার মাধ্যমে আজকের আলোচনা শুরু করবো।
রাসূলে পাক (সাঃ) বলেছেন, "যে স্ত্রী তার স্বামীকে জিহবা দিয়ে তাড়না করে, তার প্রার্থনা আল্লাহ শোনেন না, যদিও সে প্রতিদিনই রোজা রাখে, প্রতি রাতেই নামাজের জন্যে জাগে, কোন দাস-দাসীকে মুক্ত করে দেয় এবং আল্লাহর পথে তার সম্পদ ব্যয় করে। মুখরা স্ত্রী যে তার স্বামীকে এভাবে কষ্ট দেয়, সে-ই দোযখে প্রথম প্রবেশ করবে।"
আসলে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্কটি এতো আন্তরিক ও ভালোবাসার যে, সেখানে সামান্যতম বিচ্যুতি দেখা দিলে পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস, ঘৃণা ও বিরাগ এসে ভর করে। আর এই বিচ্যুতির সূচনা ঘটে আচার-আচরণ ও কথা-বার্তার মাধুর্যহীনতা থেকে। সবারই উচিত সব সময় হাসিখুশী থাকা, আনন্দমুখর থাকা। নম্র, ভদ্রভাবে হাসিমুখে কথা বললে অনেক কঠিন পরিস্থিতিও খুব সহজেই মোকাবেলা করা সম্ভব। উচ্চাভিলাষী নারীদের মধ্যে অনেক সময় অতৃপ্তির অভিব্যক্তি লক্ষ্য করা যায়। এই অভিব্যক্তি তাদের স্বামীদের মনোপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্বামীরা সাধারণত স্ত্রীদের সন্তুষ্টি, সংসারের কল্যাণ এসবের জন্যে নিজেদের সকল শ্রম ও মেধা ব্যয় করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও পেশাভেদে উপার্জনগত তারতম্য থাকতেই পারে। এই তারতম্যের বিষয়টিকে যদি ইতিবাচক বা সমার্থক হিসাবে ধরে নিয়ে মেনে নেয়া যায়, তাহলে কিন্তু আর সমস্যা থাকে না। কিন্তু যখনি তা অন্যদের সাথে তুলনা করা হয়, তখনি দেখা দেয়া বিরুপতা। তাই স্বামী-সন্তান, পরিবার-সংসারের বৃহত্তর স্বার্থে সামর্থ অনুযায়ী বিবেচনা করাই উত্তম। স্বামীর ব্যাপারেও স্ত্রীদের সহানুভূতিশীল হওয়া প্রয়োজন। কর্মক্লান্তি নিয়ে তিনি যখন বাসায় ফেরেন, তখন তার সাথে আন্তরিক আচরণ করা উচিত। কোন অভাব-অভিযোগ বা নেতিবাচক বিষয় হুট করেই তার সামনে উপস্থাপন করা ঠিক নয়। স্বামী বাসায় ফেরার পর স্ত্রীদের উচিত এমন আচরণ করা, যাতে বোঝা যায় যে, তার আগমনে আপনি ভীষণ খুশী ও আনন্দিত হয়েছেন। কিংবা এমন বোঝা যায় যে, আপনি তার জন্যেই এতোক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন। ধীরে ধীরে অবস্থা বুঝে সংসার, সন্তান ও ব্যক্তিগত সকল বিষয়ে আলাপ করুন। সমস্যা সমাধানে পরস্পরকে সহযোগিতা করাই স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য।
ইমাম সাদিক (আঃ) বলেছেন, " আনন্দময় জীবনের চাইতে আর কোন জীবনই কাম্য নয়"। এই উক্তির সত্যতা ও যথার্থতা অনস্বীকার্য। দেখা গেছে, অনেক ধনী লোক তার সকল সম্পদ নিয়েও অশান্তিতে রয়েছেন। তার কারণ ধন-সম্পদের প্রতিযোগিতায় তারা যতো আন্তরিক, সুখ-শান্তির অন্বেষায় ততোটা নন। আবার তার বিপরীতে দেখা যায়, অভাব-অনুযোগ সত্ত্বেও বহু দম্পতি সুখে-শান্তিতে দিনাতিপাত করে যাচ্ছে। ফলে এ কথাটি বুঝতে হবে যে, সম্পদের প্রাচুর্যে শান্তি নেই, শান্তি হলো মনে। মনের প্রশান্তিই সাংসারিক ও দাম্পত্য জীবনের অন্যতম প্রাপ্তি। তাই সম্পদের প্রতিযোগিতায় অন্ধ হয়ে অন্যদের সাথে তুলনা করে পরশ্রীকাতরতায় না ভুগে যা আছে তাই নিয়ে আনন্দ উপভোগ করাই হবে যুক্তিযুক্ত। মনে রাখতে হবে যারা প্রাচুর্যের সন্ধানেরত, তাদের প্রত্যাশা সীমাহীন। কোনভাবেই এই প্রত্যাশা মিটবে না। আর সামান্যতম কম প্রাপ্তি বা অচরিতার্থতায় প্রাচুর্যকামীরা ভেঙ্গে পড়েন। এ থেকেই জন্ম নেয় হিংসা, রাগ, বদমেজাজসহ সমূহ চারিত্রিক অসৎ গুনাবলী। কোন কিছুতেই তখন আর মনের তৃপ্তি মেটেনা। মেজাজ সব সময় তিরিক্ষি হয়ে থাকে। রাসূলে কারীম (সাঃ) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, মানুষের বদমেজাজ ও মনোভাব স্থায়ী যন্ত্রণা ও ভোগান্তির সৃষ্টি করে।" অথচ সদ্ব্যবহার, সদাচরণ, সামর্থে-তুষ্টির মনোভাব মানুষকে সর্বাবস্থায়ই সন্তুষ্টিই রাখে। আর এই সন্তুষ্টিই হলো মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি। ইমাম সাদিক (আঃ) যথার্থই বলেছেন, " সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা সদ্ব্যবহারকারীদের জন্যে জিহাদের সমান পুরস্কার রেখেছেন। তার প্রতি দিনে ও রাতে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে।"
স্বামীদের উপর সংসারের একটা বিশাল চাপ ও দায়িত্ব থাকে। এ দায়িত্ব পালনে সবসময় হয়তো তিনি সফল না-ও হতে পারেন। তাই বলে তার ব্যর্থতার জন্য তাকে বকা-ঝকা করা কিন্তু ঠিক নয়। বরং তাকে সান্ত্বনা ও প্রবোধ দেয়া উচিত। কারণ জীবন নির্বাহের বোঝা বহন করার জন্য কিংবা বোঝা বহন করার পর, এমন একজন সহানুভূতিশীল বন্ধু প্রয়োজন যে তার প্রতি মনোযোগ হবে। তার কাজ-কর্মের ব্যাপারে ধন্যবাদ দেবে, উৎসাহ যোগাবে। এই কাজগুলো যার পক্ষে সবচেয়ে বেশী সম্ভব তিনি হলেন তার স্ত্রী। স্ত্রীর বন্ধুত্বসুলভ সান্নিধ্য ও ভালোবাসাই স্বামীর সকল ক্লান্তি, অবসাদ ও দুর্ভাবনা দূর করে দিতে পারে সহজেই।


source : http://bangla.irib.ir
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

ইমাম মাহদী (আ.)-এর জীবনের ...
এবার গরুর প্রতি নিষ্ঠুরতার দায়ে ...
ধৈর্য ও সহনশীলতা
শেইখ যাকযাকির মুক্তির দাবীতে ...
‘মার্কিন অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা ...
দৃষ্টিহীনদের জন্য স্মার্ট ...
সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে বাশার ...
হোসাইনি দালানে আয়াতুল্লাহ ...
তিউনিশিয়ার আন্তর্জাতিক ...
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ...

 
user comment