বাঙ্গালী
Tuesday 19th of March 2024
0
نفر 0

শান্তির তকমা লাগিয়ে রণে রত ওবামা

দৈনিক যুগান্তরের বরাত দিয়ে আবনার রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাড়ে তিন বছরের শাসনামল মূল্যায়ন করলে একজন যুদ্ধবাজ বিশ্বনেতা হিসেবে তার স্বকীয় পরিচয় পাওয়া যায়। একটু তাকিয়ে দেখলেই ওবামার এ পরিচয় পরিষ্কার হয়ে উঠবে। যুদ্ধ নয় বরং শান্তির তকমা লাগিয়ে প্রেসিডেন্টের আসনে অধিষ্ঠিত হলেও শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাতেই মেতে রয়েছেন তিনি। যদিও কোন প্রকার টেকসই নজির স্থাপন না করেই শুধু বিশ্ব শান্তির মহাপরিকল্পনাকারী হিসেবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার এক বছরের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এরপর থেকে বিশ্ববাসীর ধারণা আরও পোক্ত হয় যে, যুদ্ধ নামক বিধ্বংসী খেলা থেকে সরে আসবেন ওবামা। বিশ্বমানবতার ত্রাণকর্তা হিসেবেও তার প্রতিচ্ছবি প্রোথিত হয় মানুষের মধ্যে। কিন্তু কিভাবে একজন স্বেচ্ছা-বিশ্বহিতৈষীর ভূমিকা রাখবেন ওবামা তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে! ওবামা এরপর ঘোষণা করলেন, যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। আর নভেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে ওসামাকে হত্যার নির্দেশকারী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরছেন জনগণের সামনে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তিনি তেমন মনোনিবেশ করতে পারেননি একথা নিজেই স্বীকার করেছেন। কিন্তু সন্ত্রাস নির্মূলের যুদ্ধে তিনি সফল বলে দাবি করেছেন। তার মুখের কথা থেকেই প্রমাণিত হয় তিনি যুদ্ধকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু শান্তিকামী মার্কিনিরা কি তেমনটি চেয়েছিল? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আর একটু পেছনের ইতিহাসে যেতে হচ্ছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর মার্কিনিরা ভেবেছিল এবার হয়ত স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হবে। সামরিক বাহিনীর জন্য বরাদ্দ কমবে, যা উন্নয়ন খাতে ব্যয় করা হবে। কিন্তু পেন্টাগন সামরিক শক্তিকে সংকুচিত করেনি। যদিও জনগণ ধরে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বীর ভাঙন হয়েছে। সুতরাং শত্রু শেষ হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই দেখা গেল স্নায়ুযুদ্ধের পরিবর্তে শত্রুর স্থায়ী অস্তিত্বকে স্বীকার করে নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। তাদের মতে, শত্রু কখনও মরে না। তাই আমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। ফলে মার্কিন অর্থনীতি হয়ে দাঁড়াল যুদ্ধমুখী অর্থনীতি। যুদ্ধ অর্থনীতিতে যুদ্ধ অনিবার্য। কারণ যুদ্ধের মধ্য দিয়েই ফেরত আসে ব্যয়িত অর্থ। আর এ নীতি বাস্তবায়নে ও ওয়াশিংটনের পুঁজিবাদকে টিকিয়ে রাখতে পেন্টাগনের চরিত্র হয়ে দাঁড়ায় ছদ্মবেশী সমাজতান্ত্রিক। বিশ্বে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার ধুয়ো তুলে তাদের সামরাজ্যবাদী নীতিতে প্রতিষ্ঠিত করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। আর এরই মধ্যে ঘটে যায় ভয়াবহ টুইন টাওয়ার হামলা। ফলে শত্রু খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়নি তাদের। শুরু হয় সামরিক বাহিনীর বহির্বিশ্বে আক্রমণ। আল কায়দার বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় মার্কিন বাহিনী। ডিক চেনি এ যুদ্ধ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, না হলেও ৫০ বছর এ যুদ্ধ চলবে।। এরই মধ্যে এক দশক পার হলেও তাদের যুদ্ধের পরিষ্কার কোন লক্ষ্য নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা এক অর্থে মার্কিন প্রশাসনের হাতে চলে গেলেও তালেবান নির্মূলে তাদের অগ্রগতি কতটুকু তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তালেবানদের মৌলবাদ আখ্যা দিয়ে তাদের উৎখাতে মার্কিন সামরিক বাহিনী ও তার বন্ধু রাষ্ট্রের যৌথ অভিযান পরিচালিত হলেও ব্রিটেনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, আল কায়দা আদৌ একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ নয়। সিআইএ ও সৌদি আরবের মদদপুষ্ট আন্তর্জাতিক মুজাহিদ গোষ্ঠী ও চোরাকারবারিদের একটি শক্তিশালী তথ্য ভাণ্ডার। এদের কাজ হল সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণাধীন আফগানিস্তানে মার্কিন সমর্থকদের অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ করা। পরবর্তীতে আল কায়দার নেটওয়ার্কটি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে পাকিস্তান, ইয়েমেন, উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো ও সিরিয়ায়। আসলে আল কায়দার একক কোন সত্তা নেই। মার্কিন প্রশাসনের এই প্রচেষ্টাকে প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মাইকেল ব্রেনার একটি বাস্তবতাবর্জিত উদ্যোগ বলে অভিহিত করেছেন। যারা যুক্তরাষ্ট্রের এ মতকে প্রচার করছে সেসব মিডিয়া ও প্রতিষ্ঠানকে তিনি ভাঁওতাবাজ বলে চিহ্নিত করেছেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবাদর্শিক গণমাধ্যমগুলো ওসামা বিন লাদেনকে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তির উদাহরণে পরিণত করেছেন। ওসামাকে তারা একবিংশ শতাব্দীর হিটলার বলতেও ছাড়েনি।

ফলে ওসামা ও তার অনুসারীদের উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত যুদ্ধ জায়েজ বলে প্রমাণিত করার চেষ্টা দেখা যায়। আর সুযোগটি নির্বাচনের হাতিয়ার করেছেন বারাক ওবামা। জনগণের বিরুদ্ধে যেয়ে প্রতি বছর মার্কিন সামরিক খাতের তিন থেকে পাঁচ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়কে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। কারণ অযাচিত হামলা-আক্রমণ করে বিশ্বজুড়ে বিশৃংখলা টিকিয়ে রাখতে পারলেই কেবল সামরাজ্যবাদী স্বার্থ হাসিল করা সম্ভব। এ হল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে সামরিকায়ন এবং এ সামরিকায়নের লালিত সংস্কৃতি। আর সামরিক অর্থনীতির পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সব সময় প্রয়োজন শত্র“ শিবির। এ শত্র“ শিবিরের সন্ধান একবার পেলে তা চলতে থাকে অন্তহীন পথে। বারাক ওবামা সে পথের সফল রাষ্ট্রনায়ক। এমনটিই বিশ্বাস করেন বিশ্লেষকরা।

(তথ্য সূত্র : আল জাজিরা)

 

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

যুগে যুগে কোরবানি
সূরা আত তাওবা;(৪র্থ পর্ব)
ইসলামের পবিত্র চারটি মাস ও আমাদের ...
নবী ও রাসূলের প্রয়োজনীয়তা
ইসলামি ইতিহাসে গাদীর
ভুলে যাওয়া ইতিহাস : ঘটনা প্রবাহ ...
বেহেস্তি নেত্রি: ফাতিমা যাহরা সা.আ
ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাঈলের জন্ম ...
শিয়া মুসলমানরা কি দৈনিক তিন ...
মুসলিম বিশ্ব

 
user comment