বাঙ্গালী
Saturday 20th of April 2024
0
نفر 0

কোরআন ও বিজ্ঞানের আলোকে বৃষ্টিপাত

বৃষ্টির অনুপাত

বৃষ্টি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে প্রদত্ত তথ্যাবলীর মাঝে একটি হলো যে, পৃথিবীতে বৃষ্টি পরিমিত পরিমাণে পতিত বা বর্ষিত হয়ে থাকে। সূরা যুখরুফে এটি নিম্নরূপে উল্লেখ করা হয়েছে :

আর যিনি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন নির্দিষ্ট পরিমাণে। তারপর আমি সে পানির সাহায্যে মৃত জমিনকে সঞ্জীবিত করি। এরূপেই তোমাদেরকে বের করে আনা হবে। (কোরআন, ৪৩ : ১১)

আধুনিক গবেষণায় বৃষ্টির পরিমিত নির্দিষ্ট পরিমাণ আবারো একবার উদঘাটিত হয়েছে। আন্দাজ করা হয়েছে যে, প্রতি সেকেন্ডে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬ মিলিয়ন টন পানি বাষ্প হয়ে উবে যায়। আর বছরে এ পরিমাণটি দাড়ায় ৫১৩ ট্রিলিয়ন টনে। আর পানি বাষ্প হওয়ার পরিমাণ প্রতি বছরে ভূ পৃষ্ঠে পতিত বৃষ্টিধারার পরিমাণের সমান। এর মানে এই দাড়ায় যে, পানি অবিরতই একটি “নির্দিষ্ট পরিমাণে” একটি সুষম চক্রের মধ্যে প্রবাহমান। পৃথিবীর জীবজগৎ এই পানি চক্রের উপরেই নিভর্র শীল। এমনকি মানুষ দুনিয়ায় সমস্ত টেকনোলজী বা প্রযুক্তি ব্যবহার করেও পানির এই চক্রটি কৃত্রিমভাবে পুণরুৎপাদন করতে সমর্থ হবে না।

এই ভারসাম্যের মাঝে ন্যূনতম পরিবর্তনও পৃথিবীর পরিবেশে মারাত্মক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্ট হবে যার ফলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ত্বের অবসান হতে পারে অর্থাৎ তা পৃথিবীর জীব জগতের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু তা কখনও ঘটে না, কোরআনে যেমন করে বলা হয়েছে, ঠিক তেমন করেই বৃষ্টি প্রতি বছরে ঠিক একই নির্দিষ্ট পরিমানে বর্ষিত হতেই থাকে।

 

বৃষ্টির উৎপত্তি

বৃষ্টি কিভাবে হয় ? এ বিষয়টি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত একটি রহস্যময় ব্যাপার ছিল। কেবলি সেদিন যখন আবহাওয়া নির্ণয়ের জন্য রাডার আবিষ্কৃত হলো, তার পর পরই বৃষ্টি উৎপন্ন হওয়ার পর্যায়গুলো জানা গেল।

সে অনুসারে বৃষ্টি উৎপন্ন হয় তিনটি পর্যায়ে। প্রথমতঃ “বৃষ্টির কাঁচামাল” বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে উপরে বাতাসে উঠে আসে, এরপর মেঘমালা উৎপন্ন হয় আর অবশেষে বৃষ্টিকণা দেখা দেয়। কোরআনে প্রদত্ত বৃষ্টি উৎপাদনের বর্ণনাটি ঠিক এ পদ্ধতিরই উল্লেখ করেছে। একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা ব্যাপারটি এভাবে বর্ণনা করেছেন :

আল্লাহ এমন সত্তা যে, তিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর বায়ু মেঘরাশিকে সঞ্চালিত করে; তারপর তিনি মেঘরাশিকে যেমন ই‪ছা আসমানের শূণ্যমন্ডলের মধ্যে ইতস্ততঃ ছড়িয়ে দেন, এবং কখনও তা খণ্ড বিখণ্ড করে দেন; অতঃপর তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে বের হয়ে আসে বৃষ্টিধারা। তিনি যখন তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা তা পৌছিয়ে দেন, তখন তারা আনন্দ করতে থাকে। (কোরআন, ৩০ : ৪৮)

এবার চলুন আয়াতে বর্ণিত এই পর্যায়গুলো আরো প্রযুক্তিগতভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখি : প্রথম পর্যায় : “তিনি আল্লাহ এমন সত্ত্বা যিনি বায়ু প্রেরণ করেন ..............................” সমুদ্রের ফেনায় উৎপন্ন বায়ুর অগণিত বুদবুদ বিরামহীনভাবে ফেটে গিয়ে জলীয় কণাসমূহকে আকাশের দিকে উৎক্ষিপ্ত করে। এরপর লবণে পরিপূর্ণ এই কণাগুলো বাতাসে বাহিত হয়ে উর্ধ্বে বায়ুমন্ডলে উঠে যায়। এরোসল নামের এই কণাগুলো পানির ফাঁদ হিসেবে কাজ করে আর নিজেদের চারদিকে পানি বাষ্প জড়ো করে উৎপন্ন করে মেঘকণা।

দ্বিতীয় পর্যায় : “..........বায়ু মেঘরাশিকে সঞ্চালিত করে তারপর তিনি মেঘরাশিকে যেমন ইচ্ছা আসমানের শূণ্যমন্ডলের মাঝে ইতস্ততঃ ছড়িয়ে দেন............. ”

বাতাসে ভাসমান লবণ স্ফটিক কিংবা ধূলিকণার চারদিকের পানি কণিকা ঘনীভূত হয়ে উৎপন্ন হয় মেঘমালা। কেননা মেঘমালায় বিদ্যমান পানি কণাগুলো অত্যন্ত ক্ষুদ্র (.০১-.০২মিলি মিটার ব্যাস) হওয়ায় মেঘসমূহ বাতাসে ঝুলে থাকে আর আকাশে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই মেঘে পরিপূর্ণ হয়ে ঢেকে যায় আকাশ।

তৃতীয় পর্যায় : “ তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে বের হয়ে আসে বৃষ্টিধারা...................।” লবণ স্ফটিক কিংবা ধূলিকণার চতুর্দিকে ঘিরে বিদ্যমান পানিকণাগুলো ঘন ও ভারী হয়ে তৈরি করে বৃষ্টির কণা। এরপর বাতাসের চেয়ে ভারী বৃষ্টিকণাগুলো মেঘ থেকে সরে আসে এবং বৃষ্টিধারা হিসেবে মাটিতে নেমে আসতে শুরু করে।

আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি যে, বৃষ্টি উৎপাদনের প্রতিটি ধাপই কোরআনের আয়াতসমূহে বর্ণিত রয়েছে। অধিকন্তু‧একদম সঠিক অনুক্রমে বা একটার পর আরেকটি পর্ব অত্যন্ত সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠে বিদ্যমান অন্যান্য বিষয় বা বস্তুর ন্যায় এ বিষয়টির সবচেয়ে সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন মহান আল্লাহ তাআলা আর এভাবেই মানুষ বৃষ্টির পর্যায়গুলো উদঘাটন করার শত শত বছর পূর্বেই আল্লাহ্ তাআলা সে সম্বন্ধে মানুষকে অবগত করেন। অন্য একটি আয়াতে বৃষ্টির উৎপাদন সম্পর্কে নিম্নের তথ্যটি দেয়া হয়েছে :

তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন। তারপর মেঘগুলোকে একত্র করেন এবং পরে তা পুঞ্জীভতূ করেন স্তরে স্তরে; অতঃপর তুমি দেখতে পাও যে, সে মেঘের মধ্য থেকে নির্গত হয় বৃষ্টি। আর তিনি আসমানস্থিত পাহাড়সদৃশ মেঘমালা থেকে বর্ষণ করেন শিলা এবং তা দিয়ে তিনি যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার উপর থেকে তিনি ইচ্ছা করেন তা দূরে সরিয়ে দেন। সে মেঘের বিদ্যুতের চমক এমন, যেন মনে হয় দৃষ্টিশক্তি প্রায় কেড়ে নেয়। (সূরা নূর : ৪৩)

বিজ্ঞানীগণ মেঘমালার প্রকার পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে বৃষ্টির মেঘ উৎপত্তির এক বিস্ময়কর ফলাফলের মুখোমুখী হন। সুনির্দিষ্ট সিস্টেম ও পর্যায়সমূহের মধ্য দিয়ে তৈরী হয় ও আকার ধারণ করে বৃষ্টির মেঘমালা। পঞ্জু পুঞ্জ মেঘমালা এক ধরণের মেঘ যা নিম্নের পর্যায়গুলোতে ধাপে ধাপে তৈরী হয়।

১নং পর্যায় : মেঘমালাসমূহ সঞ্চালিত হয়ে থাকে বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে মেঘমালা বাহিত হয়ে থাকে।

২নং পর্যায় : সংযোগীকরণ, পুঞ্জীভূতকরণ এর পর বায়ুবাহিত ক্ষদ্র ক্ষুদ্র মেঘমালা একত্রিত হয়ে তৈরি করে বৃহত্তর মেঘ।

৩নং পর্যায় : স্তুপীকৃত হওয়া বা স্তুপে স্তুপে জমা হওয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মেঘমালা একত্রে সংযুক্ত হলে বৃহদাকার মেঘমালার মাঝে Updraft বেড়ে যায়। এই Updraft মেঘমালার প্রান্তভাগের চেয়ে কেন্দ্রভাগে বেশী জোরালো। এ প্রক্রিয়াতে মেঘগুলো খাড়াখাড়িভাবে বা লম্বালম্বিভাবে জমা হয়ে বাড়তে থাকে। এভাবেই মেঘমালাসমূহ স্তরে স্তরে সজ্জিত হয়। মেঘের এই খাড়া বৃদ্ধি মেঘকে বায়ুমন্ডলের শীতলতর স্থানের দিকে টেনে নিয়ে যায়, সেখানেই উৎপন্ন হয় পানিবিন্দু আর শিলা এগুলোই বৃহৎ থেকে বৃহত্তর হয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় আকাশে। যখন এই শিলা ও পানি বিন্দুগুলি বেশী ভারী হয়, যখন মেঘের এই Updraft আর বহন করতে পারে না তখন মেঘ থেকে এরা মাটিতে পতিত হতে থাকে বৃষ্টি, শিলা ইত্যাদিরূপে।

প্লেন, উপগ্রহ. কম্পিউটার এমনতর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আবহাওয়াবিদগণ কেবলি অতি সম্প্রতি মেঘ উৎপাদন, গঠন আর কার্যাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন-এ বিষয়টি আমাদের অবশ্যই স্মরণ রাখা উচিত। এটি স্পষ্ট যে, আল্লাহ এমন একটি তথ্য দিয়েছেন যা ১৪০০ বছর পূর্বে মানুষের জানা ছিল না।

 

প্রচুর উৎপাদনশীল বায়ু

বায়ুপ্রবাহের প্রচুর উৎপাদন ক্ষমতা কিংবা উর্বরা ক্ষমতা রয়েছে। এটি বায়ুর একটি বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যটি আর তারই ফলস্বরূপ বৃষ্টি উৎপাদনের কথা বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতে।

“আর আমিই প্রেরণ করি বায়ুরাশিকে যা বহন করে পানিপূর্ণ মেঘমালাগুলোকে; তারপর আমিই আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং তা তোমাদের পান করাই........।” (কোরআন, ১৫ : ২২) বৃষ্টিপাতের বা বৃষ্টি উৎপাদনের প্রথম পর্যায় যে বায়ুপ্রবাহ-আয়াতটিতে সে বিষয়েই মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে । বাতাস বা বায়ুপ্রবাহ মেঘমালাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়-বায়ুপ্রবাহ আর বৃষ্টির মধ্যকার এই একটি মাত্র সম্পর্কের কথাই জানা ছিল বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক পর্যন্ত। যাই হোক না কেন আধুনিক আবহাওয়া বিজ্ঞান থেকে প্রাপ্ত তথ্যাগুলো হাতে কলমে দেখিয়ে দিচ্ছে যে বৃষ্টি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাতসের উৎপাদনশীল বা উর্বরা ক্ষমতার ভূমিকা রয়েছে।

বায়ুর এই উর্বরা বা প্রচুর উৎপাদনশীলতার ক্ষমতা নিম্নরূপে কাজ করে :

পানির ফেনিল বা ফেনায়িত কার্যাবলীর জন্য মহাসমুদ্র আর সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরিপৃষ্ঠ থেকে অগণিত বায়ুর বুদবুদ তৈরী হয়। ঠিক যে মুহূর্তে বুদবুদ গুলি ফেটে যায় তখনই মাত্র ১০০ ভাগের এক ভাগ পরিধির হাজার হাজার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণিকা বের হয়ে এসে উপরে বাতাসে উত্থিত হয়। “এরোসোল” নামের এই কণিকাগুলো স্থলভাগ থেকে বায়ু বাহিত ধূলিকণার সঙ্গে মিশে ভূমি থেকে উপরে বায়ুমন্ডলের উপরের স্তরগুলোয় উঠে যায়। বাতাসের মাধ্যমে এই কণিকাগুলো আরো উচুঁতে উত্থিত হয়ে পানি বাষ্পের সংস্পর্শে আসে। পানিবাষ্প এই কণিকাগুলোর চারপার্শ্বে ঘনীভূত হয়ে পানিকণিকায় রূপ নেয়। প্রথমে এই পানিকণাগুলো এক সঙ্গে মিশে মেঘ উৎপন্ন করে আর বারিধারা হিসেবে নেমে আসে ধরাতলে।

দেখা গেল যে, সমুদ্র থেকে বয়ে নিয়ে আসা কণিকাগুলোসহ বাতাসে ভাসমান পানি বাষ্প প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয় এই বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে আর তারই ফলস্বরূপ বৃষ্টির মেঘ তৈরীতে সাহায্য করে এই বায়ুপ্রবাহ।

যদি বায়ুর এই বৈশিষ্ট্যটি না থাকতো তাহলে বায়ুমন্ডলের উপরের স্তরে কখনো পানি বিন্দু তৈরী হতো না, ফলে বৃষ্টি নামের এই পদার্থটি উৎপন্ন হতো না।

এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো শত শত বছর পূর্বে পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতে বায়ুমন্ডলের অতি প্রয়োজনীয় ভূমিকাটি বর্ণিত হয়েছিল তখনই, যখন মানুষ প্রাকৃতিক ব্যাপার স্যাপার খুবই কম জানতো ........।

 

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

এবার গরুর প্রতি নিষ্ঠুরতার দায়ে ...
ধৈর্য ও সহনশীলতা
শেইখ যাকযাকির মুক্তির দাবীতে ...
‘মার্কিন অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা ...
দৃষ্টিহীনদের জন্য স্মার্ট ...
সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে বাশার ...
হোসাইনি দালানে আয়াতুল্লাহ ...
তিউনিশিয়ার আন্তর্জাতিক ...
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ...
জাপানী ভাষায় অনুদিত হল পবিত্র ...

 
user comment