বাঙ্গালী
Friday 29th of March 2024
0
نفر 0

একটি আধ্যাত্মিক আহবান

একটি আধ্যাত্মিক আহবান

বিশ্ববাসীর প্রতি শীয়াদের বাণী শুধু এটাই যে, “আল্লাহকে জানুন ।” অর্থাৎ জীবনে যদি সৌভাগ্য ও মুক্তি কামনা করেন, তাহলে আল্লাহকে জানার পথ অবলম্বন করুন । আর এটা প্রকৃতপক্ষে প্রিয়নবী (সা.)-এর হাদীসের অনুরূপ । বিশ্বনবী (সা.) যখন ইসলামের আন্তর্জাতিক আহবানের কাজ শুরু করেন, তখন তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন : হে জনগণ! এক আল্লাহকে জানতে চেষ্টা কর এবং আল্লাহকে এক বলেই স্বীকার কর । কেননা এর মধ্যেই তোমাদের মুক্তি নিহিত রয়েছে । এই অমিয় বাণীর ব্যাখায় সংক্ষেপে এটাই বলব মানুষ হিসেবে আমরা স্বভাবগতভাবে জীবনের বিভিন্ন পার্থিব লক্ষ্য ও কামনা বাসনার পুজারী । যেমন : সুস্বাদু খাদ্য, পানীয়, সুন্দর পোষাক, আরামপ্রদ বাসস্থান, মনোরম দৃশ্য, সুন্দরী স্ত্রী, অন্তরঙ্গ বন্ধু, বিশাল ধনসম্পদ, প্রবল ক্ষমতা, উচ্চতর রাজনৈতিক পদমর্যাদা, সামাজিক প্রভাব প্রতিপত্তি, নেতৃত্ব ও প্রভুত্ব, আপন মনের সাধ, ইচ্ছা ও অনিচ্ছা বাস্তবায়ন ও বিরোধীদের বিনাশই আমাদের প্রবৃত্তির চির আকাংখা । কিন্তু এর পাশাপাশি মানুষের হৃদয়ে আল্লাহ প্রদত্ত বিবেক অনুযায়ী আমরা সবাই এটা উপলদ্ধি করতে পারি যে, এ বিশ্বজগতের উপভোগ্য সবকিছু মানুষের জন্যেই সৃষ্টি করা হয়েছে । মানুষকে ঐসবের জন্যে সৃষ্টি করা হয়নি । স্বাভাবতই ঐ সমস্ত কিছু মানুষের পিছনে ছুটে আসবে । তাই মানুষকে ঐসবের পিছনে ধাবিত হওয়া উচিত নয় । উদরপূর্তি এবং যৌনতৃপ্তি ভোগই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া তো গরু ছাগেলেরই বা পাশবিক জীবনাদর্শ । অন্যদের হত্যা করা, ছিন্ন-ভিন্ন করা এবং অসহায় করাতো বাঘ, নেকড়ে, বা শিয়ালেরই নীতি । আল্লাহ প্রদত্ত বুদ্ধিবৃত্তি ও বিবেকপ্রসূত স্বভাবই মানুষের জীবনাদর্শ । বুদ্ধিবৃত্তি ও প্রজ্ঞাজাত জীবন দর্শনের বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গী আমাদেরকে সত্যের পথে পরিচালিত করে । আমাদেরকে তা কখনোই কামরিপু চরিতার্থের পথে বা আত্মঅহমিকা অথবা স্বার্থ পরতার পথে পরিচালিত করে না । বিবেক ও প্রজ্ঞা প্রসূত জীবন দর্শন মানুষকে এ সৃষ্টি জগতেরই একটি অংশ বিশেষ হিসেবে বিবেচনা করে । ঐ জীবন দর্শনের দৃষ্টিতে মানুষ সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন ও সার্বভৌম কোন অস্তিত্বের অধিকারী নয় । অথচ মানুষ সাধারণতঃ ধারণা করে যে, সে এই প্রকৃতি জগতের নিয়ন্ত্রক । তার ধারণা অনুযায়ী সে-ই এই অবাধ্য ও উচ্ছৃংখল প্রকৃতিকে ইচ্ছেমত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তার কাছে নতজানু হতে বাধ্য করে । অথচ, প্রকৃতপক্ষে মানুষ তার নিজের অজান্তেই এই প্রকৃতির হাতের পুতুল এবং তার নির্দেশ পালনকারী আজ্ঞাবহ দাস মাত্র । প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিবৃত্তি প্রসূত জীবন দর্শন মানুষকে এই দ্রুত ধ্বংসশীল জগতের নিগুঢ় রহস্য উপলদ্ধির ব্যাপারে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন ও সূক্ষ পর্যবেক্ষণের আহবান জানায় । কেননা, এর ফলে মানুষের কাছে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এ সৃষ্টিজগতের কিছুই নিজ থেকে অস্তিত্বশীল হয়নি । বরং তা এক অসীম উৎস থেকেই উৎসরিত । ঐ জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গীর মাধ্যমে এটা মানুষের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, এ আকাশ ও পৃথিবীর সব সুন্দর ও অসুন্দর অস্তিত্ব বাহ্যিক দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ স্বাধীন বলে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা অন্য একটি বাস্তবতারই প্রতিফলন মাত্র । এটা ঐ মূল অস্তিত্বেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র, যার বহিঃপ্রকাশ কখনও নিজ থেকে নয় । অতীতের সকল ঘটনা, শক্তি ও মহিমা সবই আজ রূপকথার গল্প বৈ আর কিছুই নয় । তেমনি আজকের ঘটনাপ্রবাহও আগামীকালের রূপকথা বৈ কিছু নয় । অর্থাৎ সবকিছুই তার নিজের কাছে রূপকথারই নামান্তর বটে । এ বিশ্বজগতে একমাত্র মহান আল্লাহ বাস্তব অস্তিত্বের অধিকারী । তাঁর অস্তিত্বই অমর । বিশ্বের সবকিছু তাঁরই আশ্রয়ে অস্তিত্বের রং ধারণ করে । তারই সত্তার জ্যোতিতে সবকিছু অস্তিত্বের জ্যোতি লাভ করে । মানুষ যখন এধরণের উপলদ্ধির অধিকারী হয়, তখন তার অন্তরচক্ষু উম্মোচিত হয় । তখন সে তার ঐ অন্তরচক্ষু দিয়ে এ বিশ্বজগতের অস্তিত্বগত সীমাবদ্ধতা অবলোকন করতে সক্ষম হয় । তখন সে উপলদ্ধি করে যে, সমগ্র বিশ্ব জগত এক অপরিসীম আয়ু, শক্তি ও জ্ঞানের অস্তিত্বের উপরই নির্ভরশীল । এ জগতের প্রতিটি অস্তিত্বই অনন্ত জগতের এক একটি জানালা স্বরূপ, যার ভিতর সেই অনন্ত অসীম জগতের দৃশ্যাবলীর কিয়দংশ পরিদৃষ্ট হয় । মানুষের উপলদ্ধি যখন এমনই এক স্তরে উন্নীত হবে, তখন সে তার মৌলিকত্ব ও সার্বভৌমত্বকে তার প্রকৃত সত্তার অধিকারীর কাছেই প্রত্যর্পণ করবে । তখন সে আপন হৃদয়কে সকল অস্তিত্বের বাধন থেকে মুক্ত করে শুধুমাত্র এক আল্লাহর সত্তার সাথে হৃদয়কে গেথে নেবে । একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া আর অন্য কোন শক্তির সামনে সে মাথা ঝোকাবে না । এ পর্যায়ে পৌছানোর পরই সে মহান আল্লাহর পবিত্র তত্ত্বাবধান ও কৃতকর্মের অধীন হয় । তখন প্রতিটি অস্তিত্বকেই সে আল্লাহর মাধ্যমেই চেনে এবং সৎকাজ ও সচ্চরিত্র অর্জনের মাধ্যমে সরাসরি আল্লাহর দ্বারাই সে পরিচালিত হয় । আর এটাই হচ্ছে মানুষের জন্যে শ্রেষ্ঠত্বের সর্বোচ্চ স্তর । ইমামগণ মহান আল্লাহর অনুগ্রহও তত্ত্বাবধানেই শ্রেষ্ঠত্বের ঐ বিশেষ মানবীয় স্তরে উন্নীত হন । আর যে ব্যক্তি তার স্বীয় প্রচেষ্টা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে এই পর্যায়ে উন্নীত হন, তিনিই ইমামের প্রকৃত অনুসারী হিসেবে আল্লাহর কাছে বিবেচিত হন । এটাই তার সাথে ইমামের পদমর্যাদাগত পার্থক্য । তাই এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর পরিচিতি এবং ইমাম পরিচিতির বিষয় পরস্পর বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয় । একইভাবে আল্লাহ পরিচিতি ও আত্মপরিচিতির বিষয়ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয় । কেননা, যে তার আপন সত্তাকে চিনতে সক্ষম হল, নিঃসন্দেহে ঐ ব্যক্তিই সর্বস্রষ্টা আল্লাহর সত্তাকেও অনুধাবন করতে সক্ষম হল ।

 

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

বিভিন্ন ফিকাহর দৃষ্টিতে যাকাত
আল-কুরআনের মু’জিযা: একটি ...
সালাতে তারাবী না তাহাজ্জুদ ?
অর্থসহ মাহে রমজানের ৩০ রোজার দোয়া
ইসলাম ধর্ম, চিত্ত বিনোদন ও আনন্দ
জান্নাতুল বাকিতে ওয়াহাবি ...
কোরআনে কারিম তেলাওয়াতের আদব
মহানবীর ওফাত দিবস এবং ইমাম হাসান ...
পবিত্র কোরআনের আলোকে কিয়ামত
ইমাম হাসান (আ.)-এর জন্মদিন

 
user comment