বাঙ্গালী
Saturday 20th of April 2024
0
نفر 0

জাপানি নও-মুসলিম মাসায়ো ইয়ামাগুচি

জাপানি নও-মুসলিম মাসায়ো ইয়ামাগুচি

জাপানি নও-মুসলিম মাসায়ো ইয়ামাগুচি পড়াশুনা করেছেন টোকিওর বহির্বিশ্ব স্টাডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফার্সি সাহিত্যের ওপর পড়াশুনা বদলে দিয়েছে তার জীবন। জাপানের মত একটি দেশে আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় ঝোঁক-প্রবণতাকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হয় না। কিন্তু এমন একটি দেশেও কেউ কেউ আছেন যারা নিজ অন্তরে মানবীয় মূল্যবোধের প্রতি দরদ অনুভব করেন এবং ব্যাপক গবেষণার পর ইসলামকে ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করেছেন। মাসায়ো ইয়ামাগুচির বর্তমান নাম ফাতিমা। তার মতে ইসলাম মানুষকে অর্থহীনতা ও বিভ্রান্তি থেকে রক্ষার একমাত্র পথ।
 
ফার্সি ভাষা ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতির বাহন হিসেবে আরবী ভাষার পরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী ভাষা।  অত্যন্ত মিষ্টি এই ভাষা শেখা অন্য অনেক ভাষা শেখার চেয়ে অনেক সহজ। এই ফার্সি ভাষা শিখতে গিয়ে ইসলাম ধর্মের সঙ্গে পরিচিত হন নওমুসলিম মাসায়ো ইয়ামাগুচি। ফার্সি ভাষাভাষী দেশগুলো, বিশেষ করে ইরানের প্রতি ছোটবেলা থেকেই তার ছিল বিশেষ আকর্ষণ।
 
নওমুসলিম মাসায়ো ইয়ামাগুচি বলেছেন,
" যখন হাইস্কুলে পড়তাম তখন মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে বিশেষ আগ্রহ অনুভব করতাম।  বইয়ে মধ্যপ্রাচ্যের যেসব ছবি দেখতাম সেগুলো আমার এই আগ্রহকে দ্বিগুণ করত। বিশেষ করে টাইলসের অপূর্ব কারুকাজ করা ও মনোহর স্থাপত্য রীতির মসজিদগুলোর ছবি আমাকে আকৃষ্ট করতো দারুণভাবে। এভাবে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে গবেষণা করার ও জানার আগ্রহ সৃষ্টির পরিবেশ গড়ে উঠেছিল। মুসলমানদের ধর্মীয় স্থাপনাগুলোকে কাছ থেকে দেখতে পারাটা ছিল আমার কাছে সুন্দর স্বপ্নের মত একটা বিষয়। কখনও কল্পনাও করতে পারিনি যে একদিন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। হাইস্কুল-জীবনের শেষের দিকে আমার একজন শিক্ষকের পরামর্শে ফার্সি সাহিত্যকে বেছে নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভের বিষয় হিসেবে। ফলে বিষয় নির্বাচনের ঝামেলা থেকে বেঁচে যাওয়ার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কেও জানার আগ্রহ বেড়ে যায় আমার মধ্যে।  টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ফার্সি ভাষা ও ইরানোলজি বিভাগে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে আমার বহু দিনের পুরনো স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার সুযোগ ঘটে। সেই থেকে মহান আল্লাহ আমার জন্য হেদায়াতের পথ বা ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পথ খুলে দিয়েছেন। আর এ জন্য আমি মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। "
 
নওমুসলিম মাসায়ো ইয়ামাগুচি যতই ফার্সি শিখছিলেন ততই এ ভাষা শেখার প্রতি তার আগ্রহ বাড়তেই থাকে।  ইরানের ভিজিটিং প্রফেসররা তাকে এ ব্যাপারে বেশ সহায়তা করেন। মাসায়ো চাইতেন ইরান সম্পর্কে যা তিনি পড়ছেন ও শুনছেন তা যেন সরাসরি কাছ থেকে দেখতে পারেন। একজন ফার্সিভাষী মুসলমানের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটার পর মাসায়ো ধর্ম ও জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্বের ব্যাপারে সচেতন হন।  বিষয়টি ছিল তার কাছে খুবই নতুন। কারণ, জাপানিরা সাধারণত ধর্ম ও বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। এভাবে মাসায়োর মধ্যে জাগতে থাকে অনেক প্রশ্ন। আর এসবের উত্তর জানার জন্য তাকে ব্যাপক পড়াশুনা করতে হয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ হওয়ার আগেই নানা বই-পুস্তক পড়তে গিয়ে ইসলামসহ অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে বাছ-বিচার করার ও সেগুলোর লক্ষ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পান  এই জাপানি নারী।
 
সব ধর্ম সম্পর্কে তুলনামূলক পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে মাসায়োর কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে আদর্শ জীবনের পথ কেবল ইসলামেই  স্পষ্টভাবে দেখা যায়। ফলে তিনি মুক্তির ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই গ্রহণ করেন ইসলাম ধর্ম। তার বাবা এ বিষয়টিকে সুনজরে না দেখলেও জাপানের জনগণ অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে সাধারণত হস্তক্ষেপ করে না বলে মাসায়ো ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তেমন কোনো সমস্যার শিকার হননি।   
 
ইরান সফরে আসার পর নওমুসলিম মাসায়ো বা বর্তমান ফাতিমা  দেশটির জনগণ এবং ইসলামী সরকার সম্পর্কে পশ্চিমা প্রচারণার অসারতা বা মিথ্যাচার বুঝতে সক্ষম হন।  তিনি ইরানি ও জাপানি জনগণের সংস্কৃতির মধ্যে বিরাজমান কিছু অভিন্নতাও লক্ষ করেন। বিশেষ করে পরিবার ব্যবস্থার রক্ষার ওপর এই উভয় দেশের সংস্কৃতির গুরুত্ব  আরোপের অভিন্নতা ফাতিমাকে মুগ্ধ করেছে।
 
অবশ্য দুঃখজনকভাবে পাশ্চাত্যের ও বিশেষ করে আমেরিকান অপসংস্কৃতির দ্রুততম আগ্রাসন ও অপপ্রচার জাপানেও আঘাত হেনেছে।  পশ্চিমা গণমাধ্যম, বিশেষ করে উপগ্রহ টিভি চ্যানেলগুলোর প্রচারণা এ ক্ষেত্রে বিষময় প্রভাব রেখেছে। জাপানি যুব সমাজের মধ্যে পরিবার-ব্যবস্থা এখন ধসের মুখে। মাসায়ো আশা করছেন ইসলাম জাপানি যুব সমাজকে রক্ষা করবে এবং তাদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ আবারও ফিরে আসবে।
 
ইরান ইসলামী সভ্যতার অন্যতম প্রধান লালনভূমি। এখানে যুগে যুগে জন্ম নিয়েছে অনেক মনীষী। মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) ইরানের ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয় আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তাঁর অস্তিত্বই যেন অলৌকিকতা, খোদায়ী অনুগ্রহ ও মহত্ত্বের এক বিরল প্রকাশ বা নিদর্শন।
 
 জাপানি নওমুসলিম মাসায়ো বা বর্তমান ফাতিমা ইরানে আসার সুবাদে ইমাম খোমেনী (র.)'র মহত ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এই মহান ইমামের প্রতি রয়েছে তার বিশেষ শ্রদ্ধা। ইরানের অনেক স্মরণীয় স্মৃতির মধ্যে ইমাম খোমেনী (র.)'র অতি উচ্চ মানের ব্যক্তিত্ব কখনো ভুলতে পারবেন না মাসায়ো। তার মতে ইমাম খোমেনী (র.) বিশ্ব মানবতার জন্যই এক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব; যদিও ইরানে থাকাকালে এই মহান ইমামের লেখনী ও তাঁর লেখা বইগুলোর মাধ্যমে তাঁকে ভালভাবে তখনও চিনতে পারেননি বলে স্বীকার করেছেন এই জাপানি নও-মুসলিম নারী।
 
বর্তমানে ফাতিমা অন্যদের কাছেও ইসলাম প্রচারের চেষ্টা করছেন। মাসায়ো বলেছেন, "আমি এখন মুসলমান হওয়ায় নিজ জীবনে ইসলামের বিধি-বিধান বাস্তবায়ন করা এবং এ কাজে অন্যদের উতসাহ দেয়াও আমার দায়িত্ব। জাপানিরা জীবনের প্রথম থেকেই ইসলাম ধর্মের প্রকৃত অর্থ কখনও জানত না এবং এখনও জানে না।  তাই এই কঠিন মিশনে ও আত্মগঠনে তিনি মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করছেন এবং  দয়াময় আল্লাহর  সাহায্য পাবেন বলে আশাবাদী।(সূত্র: ইন্টারনেট)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব
অবিকৃত গ্রন্থ আল-কোরআন
ইমাম রেজা (আ.)'র কয়েকটি অলৌকিক ঘটনা
কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনা : একটি ...
Protest einer Antikriegsgruppe gegen Luftangriff Amerikas auf ein Krankenhaus
খলিফা নির্বাচনের পদ্ধতি
‘বাতিলের মুকাবিলায় ঐক্যই ...
অর্থসহ মাহে রমজানের ৩০ রোজার দোয়া
কোরআন ও চিকিৎসা বিজ্ঞান
শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস (পর্ব-১)

 
user comment