বাঙ্গালী
Thursday 28th of March 2024
0
نفر 0

সূরা ইউনুস;(১৬তম পর্ব)



সূরা ইউনুস; আয়াত ৭৯-৮৬

 সূরা ইউনুসের ৭৯ ও ৮০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

  وَقَالَ فِرْعَوْنُ ائْتُونِي بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ (79) فَلَمَّا جَاءَ السَّحَرَةُ قَالَ لَهُمْ مُوسَى أَلْقُوا مَا أَنْتُمْ مُلْقُونَ (80(

"ফেরাউন বলল, তোমরা আমার কাছে সুদক্ষ জাদুকরদের নিয়ে এসো।” (১০:৭৯)

“অতঃপর যখন জাদুকররা এল তখন মুসা ওদের বললেন, তোমাদের (জাদুমন্ত্রের) যা নিক্ষেপ করার তা নিক্ষেপ কর।"(১০:৮০)

হযরত মুসা (আ.) তার রেসালতের সূচনা লগ্নেই ফেরাউনের মত নিষ্ঠুর নৃপতির কাছে একত্ববাদের বাণী পৌঁছে দেয়ার এবং বনি ইসরাইল সম্প্রদায়কে তার কবল থেকে উদ্ধার করার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন।

আগের পর্বে এ বিষয়ে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। সূরা ইউনূসের ৭৯ ও ৮০ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে, ফেরাউন হযরত মুসা (আ.)-এর সাথে যুক্তিতর্কে টিকতে না পেরে আল্লাহর বাণী সম্পর্কে নানা বিরূপ মন্তব্য করতে থাকে। সে হযরত মুসা (আ.)-এর মুজেযার জবাব দেয়ার জন্য দেশের বড় বড় জাদুকরদের ডেকে পাঠায়। ঈমান ও আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হযরত মুসা (আ.) ফেরাউনের বাগাড়ম্বরের মুখেও সম্পূর্ণ অবিচল থাকেন, তিনি পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন এবং জাদুকরদেরকে জনগণের সামনে তাদের ক্ষমতা প্রদর্শনের আহ্বান জানান।

এই সূরার ৮১ ও ৮২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন-

فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَى مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ (81) وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ (82(

"যখন তারা (তাদের জাদুমন্ত্র) নিক্ষেপ করলো তখন মুসা বললেন, তোমরা যা করেছো তাতো জাদু, আল্লাহ এসব অসার করে দেবেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ অশান্তি সৃষ্টিকারীদের কাজ সফল করেন না।” (১০:৮১)

“অপরাধীরা অপ্রীতিকর মনে করলেও আল্লাহ তার বাণী অনুযায়ী সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবেন।" (১০:৮২

জাদুর ঘটনাটি পবিত্র কুরআনের সূরা শুয়ারায়ও বর্ণিত হয়েছে। জাদুকররা হাত থেকে দড়ি ও লাঠি মাঠিতে ছেড়ে দেয় এবং জনগণের সামনে তা সাপের মত করে প্রদর্শন করে। তারা ফেরাউনের শপথ করে বলতে থাকে, আমাদের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। হযরত মুসা তখন বললেন, আমি যা প্রদর্শন করেছি তা জাদু নয়, বরং তোমরা যা প্রদর্শন করেছো তা শুধুই জাদু, যার কোনো বাস্তবতা নেই। আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের জাদু ব্যর্থ করে দেবেন, এরপর মুসা (আ.)-এর মুজেযা বা অলৌকিক কাজে সব জাদুকর বিস্মিত হয়ে যায় এবং তারা বুঝতে পারে ঐশী শক্তির সামনে জাদুর কোনো প্রভাবই থাকতে পারে না।

মিথ্যা বা অসত্য যতই চমকপ্রদ হোক না কেন, এর অসারতা প্রমাণিত হবে- এতে কোন সন্দেহ নেই। অপরদিকে সত্যের বিজয় অবধারিত। এ ব্যাপারে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

সূরা ইউনূসের ৮৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

 فَمَا آَمَنَ لِمُوسَى إِلَّا ذُرِّيَّةٌ مِنْ قَوْمِهِ عَلَى خَوْفٍ مِنْ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِمْ أَنْ يَفْتِنَهُمْ وَإِنَّ فِرْعَوْنَ لَعَالٍ فِي الْأَرْضِ وَإِنَّهُ لَمِنَ الْمُسْرِفِينَ (83(

"ফেরাউন ও তার পরিষদবর্গ নির্যাতন করবে এ আশংকায় (প্রথম দিকে) নিজ সম্প্রদায়ের কিছু যুবক ছাড়া মুসার প্রতি আর কেউ বিশ্বাস স্থাপন করেনি। নিশ্চয়ই ফেরাউন দেশে পরাক্রমশালী ও ন্যায় লংঘনকারী ছিল।"(১০:৮৩)

হযরত মুসা (আ.) রেসালতের দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথমে ফেরাউনের কাছে গিয়ে সত্যের বাণী তুলে ধরেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি ফেরাউনের পক্ষ থেকে নিযুক্ত জাদুকরদের বিরুদ্ধে অবতীর্ণ এবং বিজয়ী হন।

তৃতীয় পর্যায়ে তিনি বনি ইসরাইল সম্প্রদায়কে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্ত করার অভিযান শুরু করেন। প্রথম প্রথম বনি ইসরাইলের কিছু সংখ্যক তরুণ ও যুবক মুসা (আ.)-এর কথা বিশ্বাস করে তার আনুগত্য স্বীকার করে নেয়। তবে ফেরাউন সমর্থকরা মুসা (আ.)-এর অনুসারীদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন চালাতো। তাদের চাপ এবং বিভ্রান্তিকর প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে অনেককে মুসা (আ.) এর সান্নিধ্য ত্যাগ করতেও দেখা যেত।

বনি ইসরাইলের মধ্যে যারা প্রথম হযরত মুসা (আ.) এর কথা বিশ্বাস করে তার আনুগত্য স্বীকার করেছিল, তাদের সকলেই ছিল তরুণ ও যুবক। এসব তরুণ ও যুবক ফেরাউন ও তার অনুসারীদের হুমকী উপেক্ষা করে সত্যের বাণী গ্রহণ করেছিল। সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (দ.)-এর ক্ষেত্রেও আমরা এই চিত্র দেখতে পাই প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে তরুণ ও যুবকরাই ছিল অগ্রগামী।

এই সূরার ৮৪, ৮৫ ও ৮৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَقَالَ مُوسَى يَا قَوْمِ إِنْ كُنْتُمْ آَمَنْتُمْ بِاللَّهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوا إِنْ كُنْتُمْ مُسْلِمِينَ (84) فَقَالُوا عَلَى اللَّهِ تَوَكَّلْنَا رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ (85) وَنَجِّنَا بِرَحْمَتِكَ مِنَ الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ (86(

"মুসা বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায় যদি তোমরা আল্লাহতে বিশ্বাস করে থাকো, যদি তোমরা আত্মসমর্পনকারী হও তবে তোমরা তারই ওপর নির্ভর কর।” (১০:৮৪)

 

“অতঃপর তারা বলল, আমরা আল্লাহর ওপর নির্ভর করলাম। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জালিম সম্প্রদায়ের উতপীড়নের পাত্র কর না।” (১০:৮৫)

“এবং আমাদেরকে তোমার অনুগ্রহে অবিশ্বাসী সম্প্রদায় হতে রক্ষা কর।" (১০:৮৬)

মুসা (আ.)এর অনুসারীদের ওপর ফেরাউনের অত্যাচার ও উতপীড়ন এক সময় সীমা ছাড়িয়ে যায়। এসময় মুসা (আ.) তার অনুসারীদেরকে আল্লাহর ওপর নির্ভর করার পরামর্শ দেন। তিনি সত্যপন্থীদের এ বলে সান্ত্বনা দেন যে, এ মুহূর্তে একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভরতাই হচ্ছে ঈমানের দাবি। ঈমানদারদের জবাব ছিল, আমরা আল্লাহর ওপর নির্ভর করেছি, তিনিই আমাদের একমাত্র আশ্রয়। আমরা বিশ্বাস করি তিনিই আমাদেরকে এই অত্যাচারী জনপদ থেকে উদ্ধার করবেন।

কঠিন ও দুঃসময়ে ঈমানদারদের একমাত্র আশ্রয় হচ্ছে মহান প্রতিপালক আল্লাহ। যারা আল্লাহর ওপর নির্ভর করে, আল্লাহও তাদের কথার জবাব দেন। এজন্য ঈমানদার মুসলমানরা কোন বিপদে বিচলিত না হয়ে আল্লাহর ওপর নির্ভর করে কাজ করেন এবং তারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

মিথ্যা কথা বলা
শিয়া-সূন্নীর মধ্যে পার্থক্য কি?
কুরআনে প্রযুক্তি [পর্ব-০2] :: ...
দরিদ্রতার চেয়ে মৃত্যু ভাল
ইফতার ও সেহরীর সময়সীমা
রহমত মাগফেরাত আর নাজাতের মাস : ...
ধর্ম ও রাজনীতি
শিয়া মুসলমানরা কত ওয়াক্ত নামাজ ...
হিজাব সমাজকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন ...
ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে হিংসার ...

 
user comment