আবনা ডেস্কঃ লন্ডনের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাময়িক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে স্থানীয় একটি ক্রীড়াকেন্দ্রে। সেখানে এলাকাবাসীর দেওয়া খাদ্য, পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের ত্রাণসামগ্রী রাখা হয়েছে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ গতকাল সেখানে গেলে তাঁকে এসব দেখান কেনসিংটন অ্যান্ড চেলসি কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক স্যু হ্যারিস l এএফপি
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের ২৪ তলা ভবনে আগুন লাগার ঘটনায় গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৩০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়ার কারণে নিহত ব্যক্তিদের সবার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের কমান্ডার স্টুয়ার্ট কান্ডি হতাহত ব্যক্তিদের হালনাগাদ তথ্য দিতে গিয়ে গতকাল এসব আশঙ্কার কথা শোনান।
এদিকে হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ করেছেন কিছু লোক। তাঁরা কেনসিংটন ও চেলসি টাউন হলে ঢুকে পড়েন। এ সময় পুলিশ তাঁদের আটকানোর চেষ্টা করলে দুই পক্ষে ধস্তাধস্তিও হয়।
এর আগে নর্থ কেনসিংটনের পুড়ে যাওয়া গ্রেনফেল টাওয়ারের কাছে ক্লেমন্ট জেমস সেন্টারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য জরুরি সহায়তা হিসেবে ৫০ লাখ পাউন্ডের তহবিলের ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রীর ওই বৈঠকের পর বাইরে জড়ো হওয়া লোকজন তাঁর সঙ্গে কথা বলার দাবি জানান। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করায় ক্ষুব্ধ লোকজন সেখানে ঢুকে পড়েন বলে বিক্ষোভকারীদের একজন জানান।
এক বিক্ষোভকারী বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। তাদের এক্ষুনি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা দরকার। কিন্তু কেউ জানে না কর্তৃপক্ষ আসলে কী ব্যবস্থা করছে।
গত মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর লন্ডনের নর্থ কেনসিংটন এলাকার গ্রেনফেল টাওয়ারে আগুন লাগে। ভবনটির ১২০টি ফ্ল্যাটে ছয় শর বেশি লোক বাস করত বলে ধারণা।
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের কমান্ডার স্টুয়ার্ট কান্ডি গণমাধ্যমকে জানান, গতকাল পর্যন্ত ৩০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে ৭০ জনের বেশি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২৪ জন, যাঁদের মধ্যে অন্তত ১২ জনের অবস্থা গুরুতর। তিনি বলেন, ভবনটিতে আর কারও জীবিত থাকার আশা নেই। ফলে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যাবে বলে তাঁর আশঙ্কা।
স্টুয়ার্ট কান্ডি আরও বলেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় বেশ সাবধানে উদ্ধারকাজ চালাতে হচ্ছে, যা শেষ হতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ গতকাল নাতি প্রিন্স উইলিয়ামকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের কথা শোনেন এবং একটি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখেন।
এই ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনায় যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন। তিনি ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করেননি। গতকাল ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির পার্লামেন্টারি প্রধান অ্যান্ড্রিয়া লিডসম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হন। চাপে পড়া থেরেসা মে গতকাল হাসপাতালে গিয়ে আহত ব্যক্তিদের দেখে আসেন।
হালে জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়া লেবার পার্টির নেতা রাজনীতিক জেরেমি করবিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের কথা শোনেন, বুকে জড়িয়ে সান্ত্বনা দেন।