বাঙ্গালী
Thursday 28th of March 2024
0
نفر 0

বিস্ময়কর গ্রন্থ আল-কুরআন



কুরআন যে কেবল এর প্রতি অনুরক্ত মুসলিমদের দ্বারা একটি ‘বিস্ময়কর গ্রন্থ’ বলে আখ্যায়িত হয়েছে তা নয়;বরং অমুসলিমদের দ্বারাও তা ‘বিস্ময়কর’ বলেই আখ্যায়িত হয়েছে। এমনকি যারা ইসলামকে চরমভাবে ঘৃণা করে তারাও একে বিস্ময়কর গ্রন্থ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

যেসকল অমুসলিম কুরআন নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা চালিয়েছেন তাঁদেরকে যে বিষয়টি আশ্চর্যান্বিত করে তা হল তাঁরা যা চিন্তা করেছিলেন কুরআনকে সেভাবে তাঁদের নিকট প্রকাশিত হয়নি। তাঁরা যা মনে করেছিলেন তা হল তাঁদের কাছে চৌদ্দশ’ বছর পূর্বের আরব মরুভূমির একটি প্রাচীন গ্রন্থ রয়েছে এবং তাঁরা আশা করেছিলেন যে,বইটি তেমনই হবে-মরুভূমির একটি প্রাচীন বই যেমনটি হওয়ার কথা। অতঃপর তাঁরা দেখেছেন যে,তাঁরা যেমনটি ভেবেছিলেন বইটি মোটেই তেমন নয়।

অধিকন্তু অনেক মানুষই প্রথমে মনে করে যে,যেহেতু এটি মরু অঞ্চলের একটি গ্রন্থ তাই এটি মরুভূমির কথাই বলবে। কিন্তু কুরআন শুধু মরুভূমি সম্পর্কেই কথা বলে না-মরুভূমি সম্পর্কে এতে কিছু বর্ণনা রয়েছে বটে;কিন্তু এটি সাগর সম্পর্কেও কথা বলে,যেমন সাগরে ঝড়ের কবলে পড়লে মানুষের কেমন অনুভূতি হয়।

কয়েক বছর পূর্বে টরোন্টোতে এক ব্যক্তি সম্পর্কে আমি একটি ঘটনা জানতে পারি। এই ব্যক্তি একজন নৌবণিক ছিলেন এবং সাগরেই জীবন যাপন করতেন। একজন মুসলিম তাঁকে কুরআনের একটি অনুবাদ পড়তে দেন। সেই বণিক ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানতেন না,কিন্তু তিনি কুরআন পড়তে আগ্রহী ছিলেন। পড়া শেষ হলে তিনি কুরআন ঐ মুসলিমকে ফিরিয়ে দেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন,‘এই মুহাম্মাদ (সা.) কি একজন নাবিক ছিলেন?’ যেভাবে কুরআন সাগরে ওঠা একটি ঝড়ের নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছে,তাতে তিনি অভিভূত হয়ে পড়েন। তাঁকে বলা হল,‘না,আসলে মুহাম্মাদ (সা.) মরুভূমিতে বসবাস করতেন।’ কেবল এটুকুই তাঁর জন্য যথেষ্ট ছিল। তিনি তৎক্ষণাৎ ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি কুরআনের বর্ণনা দ্বারা এ কারণেই এতটা প্রভাবিত হয়েছিলেন যে,তিনি সাগরে ঝড়ের কবলে পড়েছিলেন এবং তিনি জানতেন যে,যিনি এমন অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন তিনিও সাগরে ঝড়ের কবলে পড়েছিলেন। ‘ঢেউয়ের ওপর ঢেউ,তার ওপর মেঘ’-এ বর্ণনা এমন কোন ব্যক্তির লেখা নয় যে সাগরে ওঠা ঝড় সম্পর্কে কল্পনা করছে;বরং এটি এমন কোন ব্যক্তির লেখা যে জানে যে,সাগরের বুকে ঝড় কেমন হয়! কুরআন যে একটি নির্দিষ্ট স্থান ও সময়ের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়-এটি তার একটি নমুনা মাত্র। নিশ্চিতভাবেই এতে বর্ণনাকৃত বৈজ্ঞানিক ধারণাগুলোও চৌদ্দশ’ বছর পূর্বে মরুভূমি থেকে উদ্ভূত বলে মনে হয় না।

মুহাম্মাদ (সা.)-এর নবুওয়াতেরও অনেক শতাব্দী পূর্বে পরমাণু সম্পর্কে গ্রীক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস উপস্থাপিত একটি প্রসিদ্ধ তত্ত্ব ছিল। তিনি এবং তাঁর পরবর্তীকালের জনগণ মনে করতেন বস্তুর সবচেয়ে ক্ষুদ,অবিনশ্বর ও অবিভাজ্য কণা হল পরমাণু। আরবরাও একই তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিল;বস্তুত আরবি ‘যাররা’ শব্দটি সাধারণভাবে মানুষের নিকট ক্ষুদ্রতম কণা হিসাবে পরিচিত ছিল।

বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে,বস্তুর এ ক্ষুদ্র একক (যথা পরমাণু-যার মৌলিক পদার্থের মতো একই রকম সকল উপাদান রয়েছে),এর উপাদানগত অংশে বিভক্ত হতে পারে। এটি একটি নতুন ধারণা-গত শতাব্দীর ধারণার অগ্রগতি। আর মজার বিষয় হল,কুরআনে এ তথ্য লিপিবদ্ধ ছিল,যেখানে বলা হয়েছে :

‘তিনি (আল্লাহ) বেহেশতে ও পৃথিবীতে একটি পরমাণুর ওজন সম্পর্কে জ্ঞাত এবং যা কিছু এর চেয়েও ক্ষুদ্র….

নিঃসন্দেহে চৌদ্দশ’ বছর আগে এমন বক্তব্য অস্বাভাবিক বলে মনে হয়,এমনকি একজন আরবের কাছেও। তখন তার কাছে ‘যাররা’ ছিল সবচেয়ে ক্ষুদ্র কণা। তাই এটিই নিশ্চিত প্রমাণ যে,কুরআন বিগত দিনের নিছক কোন গ্রন্থ নয়।

অন্য একটি উদাহরণ হল,কেউ হয়তো একটি পুরাতন গ্রন্থে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় বা আরোগ্যদানকারী ওষুধ সম্পর্কিত বিষয় খুঁজে পাবে যা পরিত্যক্ত হয়েছে। অনেক ঐতিহাসিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে,মহানবী (সা.) স্বাস্থ্য ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে কতিপয় উপদেশ দিয়েছিলেন যার অধিকাংশই কুরআনে বর্ণিত হয়নি। অমুসলিমদের নিকট প্রথম দৃষ্টিতে এটাকে নিতান্তই অমনোযোগিতাজনিত অবহেলা বলে মনে হতে পারে। তারা বুঝতে পারে না,কেন আল্লাহ এমন উপকারী তথ্য কুরআনের অন্তর্ভুক্ত করেননি। কতিপয় মুসলমান এগুলোর অনুপস্থিতিকে এ যুক্তিতে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন যে,যদিও মহানবী (সা.)-এর উপদেশ তিনি যে যুগে বসবাস করতেন সে যুগের উপযোগী ও সঠিক ছিল,কিন্তু আল্লাহ তাঁর অসীম জ্ঞানের কারণে জানতেন যে,পরবর্তীকালে চিকিৎসাশাস্ত্র ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি হবে যা মহানবীর উপদেশকে বাতিল করে দেবে। যখন পরবর্তী আবিষ্কারের ঘটনা ঘটবে তখন মানুষ বলতে পারে যে,এমন তথ্য মহানবীর দেয়া উপদেশের সাথে সাংঘর্ষিক। যেহেতু আল্লাহ কখনই কোন অমুসলিমকে এ সুযোগ দেবেন না যে,তারা দাবি করতে পারে কুরআনের মধ্যে ভিন্নতা বা দ্বন্দ্ব রয়েছে অথবা কুরআনে রাসূলের শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক বিষয় রয়েছে,সেহেতু তিনি কুরআনে কেবল সেসব তথ্য ও উদাহরণ অন্তভক্ত করেছেন যা কালোত্তীর্ণ হতে পারে।

যা হোক,যখন কেউ ঐশী প্রত্যাদেশ হিসাবে কুরআনের বাস্তবতা যাচাই করে,তখন এর পেছনের মূল বিষয়টি তার নিকট প্রতিভাত হয় এবং এমন যুক্তির ভ্রান্তিও স্পষ্ট ও বোধগম্য হয়ে যায়। এটি অবশ্যই বুঝতে হবে যে,কুরআন একটি ঐশী প্রত্যাদেশ এবং এর সকল তথ্য ঐশী সূত্রে প্রাপ্ত। আল্লাহ নিজেই কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। এটি হল আল্লাহর কথা যা সৃষ্টির পূর্বেই ছিল এবং অতঃপর তাতে কিছুই যুক্ত,বিযুক্ত অথবা পরিবর্তিত হতে পারে না। বস্তুত কুরআন মহানবী (সা.)-এর জন্মের পূর্বেই অস্তিত্বমান ও সম্পূর্ণ ছিল। তাই মহানবীর নিজের কোন কথা বা উপদেশ এতে থাকা সম্ভব ছিল না। এমন তথ্যের অন্তর্ভূক্তি,কুরআনের অস্তিত্ব যে উদ্দেশ্যে তার সাথে সুস্পষ্টভাবে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়বে এবং ঐশী প্রত্যাদেশ হিসাবে এর অকাট্য হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করবে।

ফলে কুরআনে কোন বিষয় নেই যা বাতিল বলে দাবি করা যেতে পারে;আর না এটি মানুষের কোন দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে যে,মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কোনটি উপকারী,কোন খাবার উৎকৃষ্ট অথবা কোনটি কোন রোগের নিরাময় করবে। বাস্তবে কুরআন চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি বিষয় বর্ণনা করেছে এবং এটি নিয়ে কেউ বিতর্ক করেনি। কুরআন বলছে যে,মধুর মধ্যে রোগের নিরাময় রয়েছে এবং নিশ্চিতভাবেই আমি মনে করি না যে,কেউ এটি নিয়ে বিতর্ক করবে।

যদি কেউ ধারণা করে যে,কুরআন একজন মানুষের চিন্তার ফসল,তাহলে কেউ হয়তো এ আশা করবে যে,যে ব্যক্তি তা রচনা করেছে তার মনে যা উদয় হয় তার প্রতিফলন এখানে ঘটবে। কতিপয় এনসাইক্লোপিডিয়া এবং নানা বইয়ে দাবি করা হয়েছে যে,কুরআন হল মুহাম্মাদ (সা.)-এর হেলুসিনেশনের (মতিভ্রমের) ফসল। যদি এ দাবি সত্য হয়,যদি তা মুহাম্মাদ (সা.)-এর মানসিক সমস্যা থেকে উৎপত্তি লাভ করে থাকে,তাহলে কুরআনে তার প্রমাণ স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হবে। সেখানে কি এমন কোন প্রমাণ আছে? এটি নির্ধারণের জন্য একজনকে প্রথমে বিভিন্ন সময়ে তাঁর মনে কোন কোন বিষয়ের উদ্ভব হয়েছিল তা চিহ্নিত করতে হবে এবং তারপর কুরআনে এসব চিন্তার প্রতিফলন হয়েছিল কি না তা গবেষণা করে বের করতে হবে।

এটি সবার জানা আছে যে,মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবন খুব কঠিন ছিল। একজন কন্যা (হযরত ফাতিমা) ছাড়া তাঁর অন্য সকল সন্তান তাঁর চোখের সামনে মৃত্যুবরণ করে এবং তাঁর একজন স্ত্রী (হযরত খাদীজা)-যিনি তাঁর কাছে খুবই প্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ মহিলা ছিলেন এবং যাঁর সাথে তিনি দীর্ঘ পঁচিশ বছর পরম সুখে সংসার জীবন অতিবাহিত করেছেন তিনিও মারা যান তাঁর জীবনের কঠিন সময়ে। প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন পরিপূর্ণ নারী ছিলেন। কারণ,যখন মহানবীর ওপর প্রথম ওহী অবতীর্ণ হয় তখন তিনি দ্রুত তাঁর স্ত্রীকে এ তথ্য অবগত করার জন্য বাড়িতে চলে আসেন। এমনকি আজও কঠিন অবস্থার মধ্যে পতিত কোন আরবকে পাওয়া যাবে না-যে বলবে,‘আমি প্রকম্পিত হয়েছিলাম এবং দ্রুত বাড়িতে আমার স্ত্রীর সান্নিধ্যে চলে গিয়েছিলাম।’ তারা কখনও এমন করে না। অথচ মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর স্ত্রীর কাছে সেই প্রশান্তি অনুভব করতেন বলেই তা করতে পেরেছিলেন। তিনি এমনই প্রভাব বিস্তারকারী ও মানসিক শক্তির অধিকারিণী ছিলেন। যদিও এগুলো মুহাম্মাদ (সা.)-এর মনে উদয় হওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে স্বল্প,কিন্তু আমার যুক্তি প্রমাণের জন্য এ ঘটনাগুলোর সুগভীর তাই যথেষ্ট। পবিত্র কুরআন এসব ঘটনার কোনটিই উল্লেখ করেনি-না তাঁর সন্তানদের মৃত্য,না তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যু,না প্রথম ওহী নাযিলের সময় তাঁর অবস্থা যা তিনি তাঁর স্ত্রীর সাথে চমৎকারভাবে ভাগ করে নিয়েছিলেন-কোনটিই;যদিও এ বিষয়গুলো তাঁকে চিন্তিত করত এবং ব্যথিত ও দুঃখিত করত। কিন্তু এসব বিষয় অথবা আরও অনেক বিষয় ব্যাপকভাবে অথবা ন্যূনপক্ষে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি।

কুরআনের একটি সত্যিকার বিজ্ঞানসম্মত উপস্থাপনা সম্ভব। কারণ,কুরআন এমন কিছু বিষয় প্রস্তাব করে যা অন্য কোন ধর্মগ্রন্থ করেনি। আর বিজ্ঞানীরা এটিই দাবি করেন। বর্তমান বিশ্বে অনেক লোকই আছে যাদের কাছে বিশ্বজগৎ কীভাবে কাজ করে তার ধারণা বা তত্ত্ব আছে। এসব লোক সব জায়গায়ই রয়েছে,কিন্তু বিজ্ঞানীরা এমনকি তাদের কোন কথা শুনতেও আগ্রহী নন। এটি এজন্য যে,গত শতকে বিজ্ঞানীরা কোন তত্ত্বের সত্যতা প্রমাণের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার দাবি করেছেন। তাঁরা বলেছেন,‘যদি তুমি কোন তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাও,এটি নিয়ে আমাদের বিরক্ত কর না যতক্ষণ না সেই তত্ত্বের সাথে আমাদের জন্য একটি পদ্ধতি উপস্থাপন কর যার মাধ্যমে তুমি ভুল কি না তা প্রমাণ করা যায়।’

বিংশ শতাব্দীর শুরুতে আইনস্টাইনের প্রতি বিজ্ঞানীরা এজন্যই কর্ণপাত করেছিলেন। তিনি একটি নতুন তত্ত্ব দিয়ে বলেছিলেন : ‘আমি বিশ্বাস করি,বিশ্বজগৎ এভাবে কাজ করে এবং এ তত্ত্বের ভ্রান্তি প্রমাণের জন্য তিনটি পদ্ধতি রয়েছে।’ সুতরাং বিজ্ঞানীরা একে পরীক্ষার বিষয় হিসাবে গ্রহণ করেন এবং ছয় বছরের মধ্যেই তিনটি পরীক্ষায়ই বিষয়টি উত্তীর্ণ হয়। আর এটিই প্রমাণ করে যে,তাঁর কথায় কর্ণপাত করতেই হত। কারণ,তিনি বলেছিলেন : ‘এটি আমার তত্ত্ব;আর যদি তোমরা আমাকে ভুল প্রমাণ করতে চাও,তবে এটি কর অথবা ঐটি কর।’ আর কুরআনে ঠিক এ বিষয়টিই রয়েছে-সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের পরীক্ষা। কিছু সংখ্যক বিষয় পুরাতন (যেগুলো এর মধ্যেই সত্য প্রমাণিত হয়েছে) এবং কিছু সংখ্যক এখনও চলমান। প্রকৃতপক্ষে কুরআন বলে,‘যদি এ গ্রন্থ যা দাবি করে তা সঠিক না হয়,তবে তোমরা একে মিথ্যা প্রমাণের জন্য এটি কর অথবা ঐটি কর।’ নিঃসন্দেহে চৌদ্দশ’ বছরে কেউই এটি বা ঐটি করতে সক্ষম হয়নি;আর তাই আজও এটি সত্য ও নির্ভরযোগ্য বলে পরিগণিত। আমি আপনাকে পরামর্শ দেই যে,আপনি যদি ইসলাম সম্পর্কে কারও সাথে বিতর্কে লিপ্ত হন এবং সে দাবি করে যে,তার কাছে সত্য রয়েছে,আর আপনি অন্ধকারে রয়েছেন,তবে অন্য সকল যুক্তি পরিত্যাগ করে তাকে কেবল এটি জিজ্ঞাসা করেন যে,আপনার ধর্মে কি সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের কোন ব্যবস্থা রয়েছে? আপনার ধর্মে কি এমন কোন পদ্ধতি রয়েছে যার মাধ্যমে আমি চাইলে আপনার ধর্মকে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারব?’ এখন আমি আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে,সেই ব্যক্তির কোন কিছুই নেই-না যাচাই-বাছাই,না প্রমাণ,কিছুই না। এটি এ কারণে যে,তারা এমন ধারণা পোষণ করে না যে,তারা কেবল তাদের বিশ্বাসই উপস্থাপন করবে না;বরং তারা অন্যদের নিকট তারা যে ভ্রান্ত তা প্রমাণ করার সুযোগও দেবে। অন্যদিকে ইসলাম এ কাজটিই করে। ইসলাম কীভাবে একজন মানুষকে এর নির্ভরযোগ্যতা যাচাই ও একে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য সুযোগ দেয় তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ সূরা নিসায় দেয়া হয়েছে। আর সত্যি বলতে কী,যখন আমি এ চ্যালেঞ্জ প্রথম দেখি তখন খুবই অবাক হয়েছিলাম। এটি বলছে :

‘তারা কি কুরআন নিয়ে চিন্তা করে না? যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও পক্ষ হতে হত,তারা নিশ্চয়ই এতে অনেক অসংগতি দেখতে পেত।’

এ আহ্বান অমুসলিমদের প্রতি একটি সুস্পষ্ট চ্যালেঞ্জ। প্রকৃতপক্ষে কুরআন তাকে ভুল বের করার জন্য আহ্বান জানায়। আসলে একদিকে এ চ্যালেঞ্জের দৃঢ়তা এবং কাঠিন্যের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জের এমন যথার্থ উপস্থাপনা মানব-প্রকৃতির মধ্যে নেই এবং মানুষের ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রেও তা সামঞ্জস্যশীল নয়। কেউ স্কুলে কোন পরীক্ষা দেয়ার পর পরীক্ষকের নিকট এমন নোট লেখে না যে,‘এ পরীক্ষা নির্ভুল। এর মধ্যে কোন ভুল-ভ্রান্তি নেই। যদি পারেন তবে ভুল বের করেন।’ কেউ এমন করে না। তাহলে শিক্ষকও ভুল না বের করে ঘুমোতে যাবেন না। আর কুরআন মানুষের কাছে এভাবেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।

কুরআনের আরেকটি চমৎকার বৈশিষ্ট্য হল এটি বারবার এর পাঠকের প্রতি উপদেশ দ্বারা কাজ করেছে। কুরআন পাঠককে বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে এবং এরপর উপদেশ দিয়েছে : ‘যদি তুমি এটি বা ঐটি সম্পর্কে আরও জানতে চাও অথবা বর্ণিত বিষয়ে সন্দেহ কর,তবে যারা জানে তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর।’ এ বিষয়টিও একটি আশ্চর্যজনক বৈশিষ্ট্য। এটি কখনও স্বাভাবিক নয় যে,ভূগোল,উদ্ভিদবিদ্যা,জীববিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ে যার প্রশিক্ষণ নেই এমন একজন মানুষ একটি গ্রন্থে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে এবং পাঠককে বলেছে যে,যদি সে কোন বিষয়ে সন্দেহ-সংশয়ে পতিত হয় তবে যেন জ্ঞানী ব্যক্তিদের তা জিজ্ঞাসা করে।

এখন পর্যন্ত প্রতি যুগে মুসলমানরা কুরআনের উপদেশ অনুসরণ করেছে এবং আশ্চর্যজনক বস্তু বা জিনিস আবিষ্কার করেছে। যদি কেউ অনেক শতাব্দী পূর্বে মুসলিম বিজ্ঞানীদের রচনাবলীর প্রতি লক্ষ্য করে,তাহলে দেখতে পাবে যে,সেগুলো কুরআনের উক্তিতে পূর্ণ। এসব রচনা প্রমাণ করে যে,তাঁরা কোন কিছু অনুসন্ধানের জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে গবেষণাকর্ম চালিয়েছিলেন। আর তাঁরা নিশ্চিত করেছেন যে,তাঁরা সেসব ক্ষেত্রে অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন যেসব ক্ষেত্রে কুরআনই তাঁদেরকে গবেষণা করতে বলেছিল। উদাহরণস্বরূপ,কুরআন মানুষের উৎপত্তি সম্পর্কে উল্লেখ করেছে এবং তারপর পাঠককে বলেছে,এ বিষয়ে গবেষণা কর। এটি পাঠককে কোথায় অনুসন্ধান করতে হবে তার একটি ইঙ্গিত দিয়েছে এবং তারপর বলেছে যে,একজনকে এ সম্পর্কে আরও জানা উচিত।

এটি এমন বিষয় যা বর্তমানে মুসলমানরা ব্যাপকভাবে তত্ত্বাবধান করছে-কিন্তু সবসময় নয়,নিচের উদাহরণে তা বর্ণনা করা হল। কয়েক বছর আগে সৌদি আরবের রিয়াদের একদল লোক এমব্রিয়লজি (ভ্রুণতত্ত্ব) বা মাতৃগর্ভে ভ্রুণের বিকাশ নিয়ে কুরআনের সকল আয়াত একত্র করেন। তাঁরা বলেন : ‘কুরআন এ সম্পর্কে যা বলে তা হল এই। এটি কি সত্য?’ এক্ষেত্রে তাঁরা কুরআনের নির্দেশনা গ্রহণ করেন : ‘যারা জানে তাদের জিজ্ঞাসা কর।’ তাঁরা এ বিষয়ের জন্য টরন্টো ইউনিভার্সিটির ভ্রুণতত্ত্বের অমুসলিম প্রফেসর ড. কিথ মুরকে নির্বাচন করেন। ড. কিথ মুর ভ্রুণতত্ত্বের পাঠ্যপুস্তকের লেখক এবং একজন বিশ্বমানের পণ্ডিত ব্যক্তি। তাঁরা তাঁকে রিয়াদে আমন্ত্রণ জানান এবং বলেন : ‘আপনার বিষয়ে কুরআন এ কথাগুলোই বলে। এগুলো কি সত্য? এ বিষয়ে আপনি আমাদের কী বলতে পারেন?’ তাঁর রিয়াদে থাকাকালীন সেসব আয়াতের অনুবাদ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে তিনি যেসব সহযোগিতা চেয়েছিলেন তার সবই তাঁরা তাঁকে দেন। ড. মুর সেগুলোর মধ্য থেকে যা কিছু খুঁজে পান তাতে এত বেশি আশ্চর্যান্বিত হন যে,তিনি তাঁর পাঠ্যপুস্তকগুলোকে পরিবর্তন করেন। বস্তুত ভ্রুণতত্ত্বের ইতিহাস সম্পর্কিত তাঁর ‘আমাদের জন্মের পূর্বে’ গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণে তিনি এমন কিছু বিষয় সংযোজন করেন যেগুলো প্রথম সংস্করণে ছিল না এবং এগুলো তিনি কুরআনে পেয়েছিলেন। আর এটিই প্রমাণ করে যে,কুরআন তার সময়ের চেয়ে অগ্রগামী ছিল এবং যাঁরা কুরআনে বিশ্বাস করেন তাঁরা যা জানেন তা অন্যরা জানে না।

একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানের জন্য ড. কিথ মুরের সাক্ষাৎকার নেয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল এবং আমরা এ বিষয়ে অনেক আলোচনা করেছিলাম। এগুলো স্লাইড এবং অন্যান্য মাধ্যমে দেখানো হয়েছিল। তিনি উল্লেখ করেন যে,মানুষের বিকাশের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় কুরআন বর্ণনা করেছে যেগুলো ত্রিশ বছর পূর্বেও মানুষ জানত না। বস্তুত তিনি বলেন,বিশেষ করে,কুরআনে ভ্রুণ বিকাশের একটি পর্যায় ‘আলাকা’ (জোঁকের মতো জমাট রক্তবিন্দু) সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা তাঁর কাছে ছিল একদম নতুন;কিন্তু যখন তিনি তা পরীক্ষা করলেন তখন দেখলেন যে,তা সত্য এবং তিনি তাঁর গ্রন্থে এ বিষয়টি সংযোজন করেন। তিনি বলেন,‘আমি এ সম্পর্কে পূর্বে কখনই চিন্তা করিনি।’ এবং তিনি প্রাণীবিদ্যা বিভাগে গেলেন এবং জোঁকের ছবি চাইলেন। যখন তিনি দেখলেন যে,এটি দেখতে মানবভ্রুণের মতো,তখন তিনি এ দু’টি ছবিই তাঁর পাঠ্যপুস্তকে সন্নিবেশিত করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ড. মুর ক্লিনিক্যাল এমব্রিয়লজির ওপর একটি গ্রন্থও রচনা করেন এবং যখন তিনি এ তথ্য টরন্টোতে উপস্থাপন করেন,তখন সমগ্র কানাডাজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। কানাডার কয়েকটি পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় তা ছাপা হয় এবং কয়েকটি পত্রিকার শিরোনাম ছিল মজার। যেমন একটি পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে : ‘প্রাচীন গ্রন্থে আশ্চর্যজনক বিষয় প্রাপ্তি’।

এ উদাহরণ থেকে মনে হয় যে,মানুষ পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারেনি যে,বিষয়টি কী। একটি পত্রিকার রিপোর্টার প্রফেসর মুরকে প্রশ্ন করেন : ‘আপনি কি মনে করেন যে,আরবরা হয়তো এসব বিষয় সম্পর্কে জানত-ভ্রুণ,এর অবস্থা এবং এটি কীভাবে পরিবর্তিত হয় ও বেড়ে ওঠে? হয়তো সেখানে কোন বিজ্ঞানী ছিলেন না,কিন্তু তারা কোনভাবে এ বিষয়টির ব্যবচ্ছেদ করে-মানুষকে ব্যবচ্ছেদ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়।’ ১৯

প্রফেসর মুর তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে বলেন যে,তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে গেছেন। ভ্রুণ সংক্রান্ত সকল স্লাইড এবং ফিল্মে যা প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে তার সকল ছবিই মাইক্রোসকোপ দিয়ে তোলা হয়েছে। তিনি বলেন,‘চৌদ্দশ’ বছর পূর্বে কেউ ভ্রুণতত্ত্ব আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন কি না এটা কোন বিষয়ই নয়,কেননা,তারা তা দেখতে পেতেন না।’ ভ্রুণের আকৃতি-প্রকৃতি সম্পর্কে কুরআনে যেসব বর্ণনা এসেছে সেগুলো খালি চোখে দেখার মতো বিষয় নয়;এগুলোর জন্য মাইক্রোসকোপের প্রয়োজন। অথচ এ ধরনের যন্ত্র মাত্র দু’শ’ বছরের কিছু পূর্বে আবিষ্কৃত হয়েছে।’ ড. মুর ব্যঙ্গ করে বলেন,‘হয়তো চৌদ্দশ’ বছর পূর্বে কারও কাছে গোপন মাইক্রোসকোপ ছিল;সে এই গবেষণা করেছে এবং কোন স্থানেই ভুল করেনি। তারপর সে তা যে কোনভাবে মুহাম্মাদ (সা.)-কে শিক্ষা দিয়েছে এবং তাঁকে এ তথ্যটি তাঁর বইয়ে সন্নিবেশিত করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে। তারপর সে তার সকল উপকরণ ধ্বংস করে ফেলেছে এবং বিষয়টিকে চিরদিনের জন্য গোপন করেছে। আপনি কি তা বিশ্বাস করেন? আপনার অবশ্যই তা করা উচিত নয় যতক্ষণ না আপনি এর সপক্ষে কোন প্রমাণ উপস্থাপন করছেন। কারণ,এটি একটি হাস্যকর তত্ত্ব।’ বস্তুত যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল : ‘কুরআনে বর্ণিত এসব তথ্যকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?’ ড. মুরের উত্তর ছিল : ‘এটি একমাত্র ঐশী প্রত্যাদেশের মাধ্যমেই হতে পারে।’

যদিও কুরআনে বর্ণিত তথ্য নিয়ে মানুষের গবেষণার উপরোল্লিখিত উদাহরণ একজন অমুসলিমের সাথে সম্পর্কিত,তবুও তা নিশ্চিতভাবেই গ্রহণযোগ্য;কারণ,তিনি গবেষণা সংশ্লিষ্ট এ বিষয়ে জ্ঞানীদেরই অন্যতম। যদি কোন আনাড়ি ব্যক্তি দাবি করত যে,ভ্রুণ সম্পর্কে কুরআনে যা বর্ণিত হয়েছে তা সত্য তবে অন্য কারও এটি মেনে নেয়ার কোন প্রয়োজন হত না। যা হোক,মানুষ জ্ঞানী ও মনীষীদের প্রতি যে উচ্চ মর্যাদা,সম্মান এবং শ্রদ্ধা দেখায়,তাতে একজন স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করে যে,যদি তাঁরা কোন বিষয়ে গবেষণা করেন এবং ঐ গবেষণার ভিত্তিতে কোন ফলাফলে পৌঁছান,তাহলে তা গ্রহণযোগ্য। প্রফেসর মুরের একজন সহকর্মী মার্শাল জনসন টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে ব্যাপকভাবে গবেষণা করেন। ভ্রুণের বিকাশের ব্যাপারে কুরআনের বর্ণনার সত্যতা জানতে পেরে তিনি খুবই আগ্রহান্বিত হয়ে পড়েন এবং তিনি মুসলমানদেরকে তাঁর বিষয় নিয়ে কুরআনে যেসব বর্ণনা আছে তা একত্র করে তাঁকে দেয়ার জন্য আহ্বান জানান। আবারও মানুষ অনেক বিষয়ে আশ্চর্যান্বিত হয়।

কুরআনে অনেক বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এবং প্রতিটি বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য প্রচুর সময়ের প্রয়োজন। আমাদের আলোচনার জন্য এটিই যথেষ্ট যে,কুরআন খুব স্পষ্টভাবে এবং সংক্ষেপে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বর্ণনা করেছে এবং উপর্যুপরি তার পাঠককে এসব বর্ণনার নির্ভরযোগ্যতা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের গবেষণার ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করতে উপদেশ দিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের একটি স্বকীয় বৈশিষ্ট্য যা অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। এটি আশ্চর্যের বিষয় যে,যখনই কুরআন কোন তথ্য দিয়েছে তখনই এর পাঠককে বলেছে : ‘তোমরা এগুলো পূর্বে জানতে না।’ নিশ্চিতভাবেই এমন কোন ধর্মগ্রন্থ নেই যেখানে এমন দাবি করা হয়েছে। মানুষের কাছে অন্য যে সব প্রাচীন গ্রন্থ ও ধর্মগ্রন্থ রয়েছে সেসব মানুষকে প্রচুর তথ্য দিয়েছে,তবে সেগুলো সবসময় এসব তথ্যের উৎস উল্লেখ করেছে।

যেমন যখন বাইবেল প্রাচীন কোন ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করে,তখন এটা বলে যে,এই বাদশা এখানে বসবাস করত,এই ব্যক্তি অমুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল,এক ব্যক্তির এতজন সন্তান ছিল ইত্যাদি। একই সাথে এগুলো বলে যে,যদি তুমি এ সম্পর্কে আরও জানতে চাও তবে অমুক বই দেখতে পার যেহেতু এগুলো সেখান থেকে নেয়া হয়েছে। এর বিপরীতে কুরআন তার পাঠককে কোন তথ্য দিয়ে বলে যে,‘এ তথ্যটি নতুন।’ আর সেখানে সবসময় তথ্যগুলো নিয়ে গবেষণা করার কথা ও সত্যতা যাচাইয়ের উপদেশ দেয়া হয়। এটা আশ্চর্যের বিষয় যে,চৌদ্দশ’ বছর পূর্বে এমন মতবাদ অমুসলিম কর্তৃক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়নি। নিশ্চয় মক্কার অধিবাসীরা যারা মুসলমানদের ঘৃণা করত এবং বারবার তারা শুনত যে,এমন ঐশী প্রত্যাদেশ নতুন তথ্য দেয়ার দাবি করছে,তারপরও তারা বলেনি যে,‘এটি নতুন নয়। আমরা জানি,মুহাম্মাদ কোথা থেকে এ তথ্য পেয়েছে। আমরা এটি স্কুলে শিখেছি।’

তারা কখনই এর নির্ভরযোগ্যতাকে চ্যালেঞ্জ করেনি। কারণ,আসলেই তা নতুন ছিল। কুরআনে তথ্য সম্পর্কে গবেষণা করার উপদেশ থাকায় হযরত উমর তাঁর খেলাফতকালে একটি দলকে যুল কারনাইনের দেয়াল খুঁজে বের করার জন্য প্রেরণ করেন। কুরআনের প্রত্যাদেশের পূর্বে আরবরা এমন দেয়ালের কথা কখনও শোনেনি,কিন্তু যেহেতু কুরআন এটা বর্ণনা করেছে,তাই তারা এটি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়। প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে এর অবস্থান হল (সাবেক) সোভিয়েত ইউনিয়নের দারবান্দ (কাস্পিয়ান সাগরের নিকট দাগেস্তানের ককেশাস পর্বতের একটি অংশে)। এখানে অবশ্যই জোর দেয়া প্রয়োজন যে,কুরআন অনেক অনেক বিষয়ে নির্ভুল,কিন্তু নির্ভুলতার মানেই এ নয় যে,সেই গ্রন্থটি ঐশী। বস্তুত নির্ভুলতা ঐশী প্রত্যাদেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

উদাহরণস্বরূপ,টেলিফোন বই নির্ভুল,কিন্তু এর মানে এ নয় যে,সেটি ঐশী প্রত্যাদেশ। সত্যিকার সমস্যা এখানে লুকিয়ে আছে যে,একজনকে অবশ্যই কুরআনের তথ্যের উৎস সম্পর্কে কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। জোর দেয়া হয়েছে পাঠকের ওপর। কুরআনের নির্ভরযোগ্যতাকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। যদি নিশ্চিতভাবেই কেউ কোন ত্রুটি খুজে পায় তবে তার এটি প্রত্যাখ্যান করারঁ অধিকার আছে। আর কুরআন এই বিষয়টিকেই উৎসাহিত করে। একদা দক্ষিণ আফ্রিকায় আমার এক বক্তৃতার পর এক ব্যক্তি আমার কাছে এগিয়ে এল। আমি যা বলেছি সে বিষয়ে সে ভীষণ ক্রুদ্ধ এবং সে দাবি করল : ‘আজ রাতে আমি বাড়ি যাব এবং কুরআনের একটি ভুল খুঁজে বের করব।’ ‘অবশ্যই’,আমি বললাম,‘স্বাগতম। তুমি সবচেয়ে বিচক্ষণ কথা বলেছ।’

নিশ্চিতভাবেই যারা কুরআনের নির্ভরযোগ্যতার বিষয়ে সন্দেহ করে তাদের সাথে মুসলমানদের এভাবেই কথা বলা প্রয়োজন। কারণ,কুরআন নিজেই এই চ্যালেঞ্জ আহ্বান করছে। এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার পর যখন তারা একে সত্য বলে আবিষ্কার করবে তখন এসব লোক একে বিশ্বাস করবে। কারণ,তারা একে বাতিল প্রতিপন্ন করতে পারবে না। ফলে কুরআন তাদের কাছে মর্যাদা পাবে। কারণ,তারা নিজেরাই এর নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করেছে।

(চলবে)

 

সূত্র:প্রত্যাশা,২য় বর্ষ,২য় সংখ্যা।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

মুসলিম-দর্শনে অনাদিত্ব বিষয়ক ...
লম্বা স্কার্ট পরায় স্কুল ছাত্রী ...
যদি আল-মাজেদ জীবিত থাকতেন...
রোহিঙ্গা ফেরত নেয়া নিয়ে ইরানি ...
সূরা হুদ;(১৭তম পর্ব)
আয়াতুল্লাহ জাকজাকি বেঁচে আছেন ...
সালাতে তারাবী না তাহাজ্জুদ ?
ইরানের কয়লা খনিতে বিস্ফোরণ: ৩৫ ...
মুসলিম সমাজে স্বামী-স্ত্রীর ...
সূরা আত তাওবা; (১৭তম পর্ব)

 
user comment