বাঙ্গালী
Friday 19th of April 2024
0
نفر 0

ইরানের ইসলামি বিপ্লবে ধর্মভিত্তিক শাসনের প্রবণতা



ইরানের ইসলামী বিপ্লব বদলে দিয়েছে বিশ্ব রাজনীতির সমীকরণ। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের কথিত পরাশক্তির আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে এ বিপ্লব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসলামকে তুলে ধরেছে সমসাময়িক যুগের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও চ্যালেঞ্জিং শক্তি হিসেবে।

বিশেষ করে মরহুম ইমাম খোমেনী ও তার সুযোগ্য উত্তরসূরি আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর নেতৃত্বে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতি ইরানি জাতির প্রবল চপেটাঘাত বিশ্ব-সাম্রাজ্যবাদী শক্তি-বলয় তথা ইবলিসি শক্তিগুলোর একাধিপত্যকে নড়বড়ে করে দিয়েছে। বিগত হাজার বছরের ইতিহাসে ইসলামী শক্তির এমন প্রবল উত্থান এবং ইসলামের গৌরবময় পতাকার এত উচ্চতর অবস্থান আর কখনও ঘটেনি। এ বিপ্লবের বিস্ময়কর সাফল্যগুলোর শীর্ষে রয়েছে আধুনিক যুগে একটি সফল ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা যা গণভিত্তিক ইসলামী শাসন-ব্যবস্থাকে ক্রমেই বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তুলছে বলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো আতঙ্কিত।

ইমাম খোমেনী (রহ.)-র দৃষ্টিতে এ পৃথিবীর সব কিছুই কেবল ততক্ষণ পর্যন্তই গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান, যতক্ষণ পর্যন্ত তা আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও ঐশী কল্যাণের মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগে। ‘নেতৃত্ব’ কেবল তখনি গুরুত্বপূর্ণ যখন তা আল্লাহর সৃষ্টির সেবা করার দায়িত্ব হিসেবে গণ্য হয়। ইমাম খোমেনী (রহ.) বিশ্বাস করতেন- শাসন-কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর। এ কারণে তিনি বহুবার বলেছেন, আমাকে সেবক বলবেন। সর্বোচ্চ নেতা বলার চেয়ে এটা বলাই ভালো। তিনি মানুষকে অত্যন্ত পবিত্র ও সম্মানজনক সত্ত্বা বলে মনে করতেন। তার মতে, প্রতিটি মানুষের ভেতরে সত্য পথকে উপলব্ধি করার এবং সেই পথে চলার ক্ষমতা রয়েছে। এ কারণে তিনি মানুষকে সজাগ ও সচেতন করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ইরানি জাতিকে সঠিকভাবে চিনতে পেরেছিলেন হযরত ইমাম খোমেনী (রহ.)।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনী (র) বলতেন, ইসলামী বিপ্লব আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ। তিনি ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ে অহংকারী না হতে জনগণকে সব সময় পরামর্শ দিতেন এবং এ জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন। ইমাম খোমেনী (রহ.) দেশের জনগণের স্বার্থ ও কল্যাণকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন এবং তাদের কল্যাণের জন্য সব সময় চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। দেশের নেতা-কর্মীদের যখন পরামর্শ দিতেন, তখন জনগণের সেবা করার গুরুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন। তারই নেতৃত্বের পথ ধরে আজ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান এগিয়ে গেছে বহু দূর। ইমাম খোমেনী (রহ.)  আজও ইরানের সব নেতার আদর্শ।

ইরানই বিশ্বের একমাত্র ইসলামী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেখানে প্রতি বছর কোনও না কোনও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ইরানের সংবিধান অনুযায়ী দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ বা ইসলাম বিরোধী কোনও দল গঠন নিষিদ্ধ। ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও এর স্থপতি মরহুম ইমাম খোমেনী দেশটির শাসন ব্যবস্থা ইসলামী প্রজাতন্ত্র-ভিত্তিক হবে কিনা এবং নতুন সংবিধানের প্রতি জনগণের সমর্থন আছে কিনা তা গণভোটের মাধ্যমে যাচাই করে নিয়েছিলেন। ইরানের ভোটারদের ৯৮ শতাংশই ইসলামী রাষ্ট্র-ব্যবস্থা ও সংবিধানের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।  এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে প্রকৃত ইসলামী ব্যবস্থা বা ইসলামী শাসনও জোর করে চাপিয়ে দেয়া যায় না জনগণের ওপর।

তাই এটা স্পষ্ট গণমুখিতা ইরানের ইসলামী বিপ্লবের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ বিপ্লব ছিল জনগণের বিপ্লব। তাই দেশ গড়া ও পরিচালনাসহ প্রতিটি বিষয়ে জনগণের মতামত নেয়াকে গুরুত্ব দেয় ইরানের ইসলামী রাষ্ট্রের সংবিধান। ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর প্রায় প্রতি বছরই গড়ে একটি করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এমনকি যুদ্ধের সময়ও নির্বাচন পেছানো হয়নি। দেশটির প্রেসিডেন্ট, সংসদ সদস্য ও বিশেষজ্ঞ পরিষদের সদস্যরা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। আর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচিত হন বিশেষজ্ঞ পরিষদের মাধ্যমে। ইরানের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক ভোটারের অংশগ্রহণও এ বিপ্লবের অন্যতম বড় সাফল্য। এ সাফল্য ইরানি জাতির রাজনৈতিক পরিপক্কতাকেই তুলে ধরে।

বিশ্বের অন্যতম প্রধান ক্ষমতাধর দেশের শক্তিশালী নেতা হওয়া সত্ত্বেও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা, প্রেসিডেন্ট এবং শীর্ষস্থানীয় নেতারা সবচেয়ে বিনয়ী ও জন-দরদি। ইরানের সংসদ ও সরকারের রয়েছে জনগণের কাছে জবাবদিহিতার কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র প্রকাশ্যেই প্রেসিডেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে তার নানা কার্যক্রমের সমালোচনা করতে পারেন।

ইসলামী ইরানের জনগণের প্রতি ইসলামী সরকারের অশেষ শ্রদ্ধাবোধের কারণে জনগণও এই বিপ্লবকে টিকিয়ে রাখার জন্য সব ধরনের ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করেছে।  এই দেশটিতে নানা রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও ধারা বা উপধারা থাকলেও সব ধারার অনুসারী জনগণ ইসলামী শাসন-ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার সমর্থক। আর তারই প্রমাণ পাওয়া যায় প্রতি বছর ইসলামী বিপ্লবের বিজয়-বার্ষিকীতে গণ-শোভাযাত্রায় সারা দেশের সব শ্রেণীর মানুষের অংশগ্রহণ থেকে। এমনকি ইরানের অমুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরাও এই শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে থাকেন।

ইমাম খোমেনী (রহ.) প্রধান দু’টি লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইসলামী বিপ্লব সফল করেন এবং দেশে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। এর একটি হলো- ইসলাম-ভিত্তিক আদর্শ সমাজ গঠন। আর অপরটি হলো- আল্লাহ-তায়ালা মানুষকে পৃথিবীতে নিজের প্রতিনিধি বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেই মর্যাদায় উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা। ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব না হলে এ দু’টি লক্ষ্য সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। ইসলাম ধর্মমতে, একজন নেতা হবেন ধর্ম-বিশেষজ্ঞ ও দূরদর্শী। যে কোন সমাজের জন্যই সব কিছুর আগে একজন সুযোগ্য নেতা জরুরি। ইমাম খোমেনী (রহ.) ছিলেন তেমনি একজন নেতা, যিনি কেবল আল্লাহর ওপর নির্ভর করতেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই ছিল তার সব কাজের প্রধান উদ্দেশ্য। তিনি ছিলেন ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে। দুনিয়া, আখিরাত, মানুষ এবং সৃষ্টির লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের বিষয়ে ঐশী দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী ছিলেন এই মহান নেতা। তিনি মানুষকে আল্লাহর প্রতিনিধি হওয়ার  উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছে দিতে চেয়েছেন।

ইরানের ইসলামী বিপ্লব গণ-ভিত্তিক ও গণমুখী। তাহলে প্রশ্ন হল, পশ্চিমা গণতন্ত্র আর ইসলামী গণতন্ত্রের মধ্যে মৌলিক পার্থক্যটি কোথায়? এর উত্তর হল, এ দুয়ের পার্থক্যটা হল ন্যায় চিন্তার মধ্যে। ধর্ম ভিত্তিক জনগণের শাসন ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার একটি মৌলিক ও কেন্দ্রীয় বিষয়। কারণ ইসলামে কোনোরকম বৈষম্য গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলাম সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।

পার্সটুডে/মু. আ. হুসাইন/আশরাফুর রহমান/১১

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

ধৈর্য ও সহনশীলতা
শেইখ যাকযাকির মুক্তির দাবীতে ...
‘মার্কিন অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা ...
দৃষ্টিহীনদের জন্য স্মার্ট ...
সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে বাশার ...
হোসাইনি দালানে আয়াতুল্লাহ ...
তিউনিশিয়ার আন্তর্জাতিক ...
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ...
জাপানী ভাষায় অনুদিত হল পবিত্র ...
মদপানে শীর্ষে সৌদি আরব, ধূমপানে ...

 
user comment