বাঙ্গালী
Saturday 20th of April 2024
0
نفر 0

সূরা আল আনফাল;(১ম পর্ব)

সূরা আল আনফাল; আয়াত ১-৪ পবিত্র কুরআনের অষ্টম সূরা আল আনফাল। এই সূরাটি মদীনা শরীফে নাজিল হয়েছে। এতে ৭৫টি আয়াত রয়েছে। এই সূরার প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন- يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَنْفَالِ قُلِ الْأَنْفَالُ لِلَّهِ وَالرَّسُولِ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَصْلِحُوا ذَاتَ بَيْنِكُمْ وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنْ كُنْتُمْ مُ

সূরা আল আনফাল; আয়াত ১-৪

পবিত্র কুরআনের অষ্টম সূরা আল আনফাল। এই সূরাটি মদীনা শরীফে নাজিল হয়েছে। এতে ৭৫টি আয়াত রয়েছে। এই সূরার প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

 يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَنْفَالِ قُلِ الْأَنْفَالُ لِلَّهِ وَالرَّسُولِ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَصْلِحُوا ذَاتَ بَيْنِكُمْ وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ

"লোকে তোমাকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে, বলে দাও- যুদ্ধলব্ধ সম্পদ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন কর। যদি তোমরা ঈমানদার বা বিশ্বাসী হও তবে আল্লাহ ও তার রাসূলের অনুগত্য কর।" (৮:১)

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের দ্বিতীয় বছরেই বদর প্রান্তরে মক্কার অবিশ্বাসী কাফের এবং মুসলমানদের মধ্যে এক অসম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। বদর যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর চেয়ে প্রতিপক্ষের সংখ্যা দুই গুণের চেয়ে বেশি হওয়া সত্ত্বেও ওই যুদ্ধে কাফের বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। ফলে যুদ্ধলব্ধ প্রচুর গণিমতের মাল মুসলমানদের হাতে আসে।

বিপুল পরিমাণ গণিমতের মাল কিভাবে বন্টন করা হবে, কারা বেশি পাবে, কারা কম পাবে এ নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে কথা বলাবলি হতে থাকে। অনেকেই আবার আল্লাহর রাসূলের কাছে এ নিয়ে প্রশ্ন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই এই আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং এতে ঘোষণা করা হয়, যুদ্ধলব্ধ গণিমতের মাল হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। ফলে পয়গম্বর (দ.) নিজেই তা বণ্টন করবেন। এই আয়াত নাজিল হওয়ার পর রাসূলে খোদা নিজেই গণিমতের মাল মুসলমানদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেন। এ ক্ষেত্রে তিনি ইসলামপূর্ব যুগের বৈষম্যের রীতি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে দেন।

তবে, মুফাসসিরগণ মনে করেন, 'আনফাল' শব্দ দিয়ে গণিমতের মাল ছাড়াও বনাঞ্চল, পরিত্যক্ত জমি ও প্রাকৃতিক সম্পদকেও বুঝানো হয়ছে এবং এসবের মালিকানা ও কর্তৃত্ব আল্লাহর রাসূল বা তাঁর প্রতিনিধিদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। কাজেই আয়াতটির শেষভাগে মোমিন মুসলমানদেরকে উপদেশ দেয়া হয়েছে তারা যেন পয়গম্বর (দ.)এর নির্দেশ মেনে নেন। সরাসরি বলা হয়েছে, তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাকো তাহলে আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর।

এরপর নিজেদেরকে সংশোধনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, মোমিনদেরকে খেয়াল রাখতে হবে সম্পদের মোহ এবং বৈষয়িক স্বার্থ যেন নিজেদের মধ্যে কোন অশান্তি সৃষ্টি করতে না পারে, হিংসা ও বিদ্বেষের আগুন যেন মুসলমানদের মধ্যে দেখা না দেয়। কাজেই আল্লাহকে ভয় করতে বলা হয়েছে, শয়তান ও কুপ্রবৃত্তির ব্যাপারে সচেতন থাকতে উপদেশ দেয়া হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব বজায় রাখার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

এই আয়াত থেকে অবশ্য এ বিষয়টিও ফুটে উঠে যে, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ইসলাম মানবজাতির জন্য সুস্পষ্ট সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিধান ও নীতিমালা ঘোষণা করেছে, প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এই ঐশি নীতিমালাকে অনুসরণ করা। এ ছাড়া ঈমান বা মুসলমান হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে, আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যকে বাস্তবে মেনে নেয়া। কে কতখানি আল্লাহ ও তার রাসূলকে মান্য করে তা কর্ম-ক্ষেত্রে বা বাস্তবতার মুখোমুখী হলে স্পষ্ট হয়ে যায়।

সূরা আনফালের ২ ও ৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

 إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آَيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ (2) الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ

"বিশ্বাসী মোমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহকে স্মরণ করার সময় কম্পিত হয় এবং যখন তার আয়াত তাদের নিকট পাঠ করা হয় তখন তা তাদের বিশ্বাস বৃদ্ধি করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে।" (৮:২)

"তারা যথাযথভাবে নামাজ পড়ে এবং আমি যা দিয়েছি তা থেকে দান করে।" (৮:৩)

আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এই দুই আয়াতে ঈমান বা বিশ্বাসের শর্ত এবং প্রকৃত মোমিন মুসলমানের কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রকৃত মোমিন যখন আল্লাহর নাম স্মরণ করে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করে তখন তার হৃদয়ে বিশেষ এক স্পন্দন অনুভব করে। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর মহত্ব ও অসীম শক্তির কথা ভাবতেই তাদের মস্তক বিনয়ে অবনত হয়ে আসে। ফলে তাদের বিশ্বাস বা ঈমান আরো মজবুত হয়। এর পাশাপাশি মোমিনরা কখনো কোন পাপ বা ভুল করে ফেললে আল্লাহর অসন্তুষ্টির ভয়ে তাদের মন কেঁপে ওঠে। তখনি তারা অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর দয়া ও করুণা লাভের আশায় সচেষ্ট হয়ে উঠেন। এটা হচ্ছে, মোমিনদের মনে সুপ্ত অনুভূতি যা বাহ্যিক কাজ কর্মেও তার প্রতিফলন ঘটে। তারা নামাজ আদায় করেন, যাকাত দেন এবং দান-খয়রাত করেন। নামাজ তাদের মনে আল্লাহর যিকির বা আল্লাহর স্মরণকে মজবুত করে। আর দান-খয়রাত বা যাকাত আদায় করার ফলে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে গড়ে ওঠে সম্পর্কের বিশেষ বন্ধন। এই আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি ঈমান হচ্ছে মনের বিশ্বাস এবং অনুভূতি যা মানুষের বাহ্যিক কাজ-কর্ম ও আচরণেও প্রতিফলিত হয়। এ ছাড়া ঈমানের বিভিন্ন স্তর আছে যা কখনো শক্তিশালী হয়, কখনো দুর্বল হয়। আল্লাহর স্মরণ এবং কুরআন শরিফ তেলাওয়াতের ফলে ঈমান শক্তিশালী হয়। এ দুই আয়াত থেকে এটাও বোঝা যায় দান-খয়রাত করা ঈমান অর্জনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য্য এবং কৃপণতা আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথে বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে।

এই সূরার চার নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

 أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ

"তারাই হলেন সেই প্রকৃত মোমিন যাদের জন্যে মহান প্রতিপালকের কাছে রয়েছে উচ্চ মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা।" (৮:৪)

এ পবিত্র আয়াতে বিশ্বাসী মোমিনদের প্রতিদান বা পুরস্কারের কথা বর্ণিত হয়েছে। আগেই বলা হয়েছে ঈমান মুখে দাবি করা বা শ্লোগান দিয়ে বলে বেড়ানোর মত বিষয় নয়। ঈমান হচ্ছে বিশ্বাস বা অনুভূতি যা মনের গভীরে গ্রথিত হয় এবং বাহ্যিক চাল-চলন, কথা-বার্তা ও আচরণে তার প্রকাশ পায়। যারা এই ধরনের প্রকৃত ঈমানের অধিকারী হয় তাদের সম্পর্কেই বলা হয়েছে, যে তারা মহান আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ স্থান লাভ করবেন, বিশেষ ক্ষমা লাভের সুযোগ পাবেন এবং মহান পরওয়ারদেগার তাদের জন্য সম্মানজনক জীবিকার ব্যবস্থা করবেন।

প্রকৃত মোমিনগণ পরকালে তো বিশষ পুরস্কার পাবেনই। এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, ঈমানদারগণ ইহকালেও উল্লেখিত প্রতিদান লাভের সৌভাগ্য অর্জন করবেন।


source : alhassanain
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

অবিকৃত গ্রন্থ আল-কোরআন
ইমাম রেজা (আ.)'র কয়েকটি অলৌকিক ঘটনা
কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনা : একটি ...
Protest einer Antikriegsgruppe gegen Luftangriff Amerikas auf ein Krankenhaus
খলিফা নির্বাচনের পদ্ধতি
‘বাতিলের মুকাবিলায় ঐক্যই ...
অর্থসহ মাহে রমজানের ৩০ রোজার দোয়া
কোরআন ও চিকিৎসা বিজ্ঞান
শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস (পর্ব-১)
সূরা ইউনুস;(১৭তম পর্ব)

 
user comment