বাঙ্গালী
Thursday 28th of March 2024
0
نفر 0

প্রকৃত রোজা ও সংযমের কিছু বিস্ময়কর কাহিনী

পবিত্র রমজানের দিনগুলো অতিক্রম করছি আমরা। খোদাপ্রেমের অভিসারগুলোর ডাক আর আধ্যাত্মিক আনন্দের অপার উতস ঈদুল ফিতর যেন হাতছানি দিয়ে আমাদের ডাকছে।
রমজানের রোজা আমাদের কী শিক্ষা দেয়, আর রমজানের দর্শনই বা কী?
মহান আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যে মানুষ, ফেরেশতা ও পশুর মধ্যে মানুষই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ। কারণ, মানুষকে বলা হয় আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব। এর কারণ, মানুষ হচ্ছে সৃষ্টিকুলের মধ্যে আল্লাহর প্রতিনিধি।
আমরা যদি মানুষ, ফেরেশতা ও পশুর মধ্যে তুলনা করি তাহলে দেখতে পাব যে ফেরেশতার মধ্যে রয়েছে কেবলই আকল বা বিবেক এবং জ্ঞান। ফেরেশতারা জ্ঞান ও বিবেক বিরোধী কোনো কাজ করে না। বিবেক-বিরোধী কোনো কাজ করার ক্ষমতাই তাদের নেই। অর্থাত তাদের মধ্যে নেই পাশবিক প্রবৃত্তি বা কুপ্রবৃত্তি। কাম, ক্রোধ, লোভ-লালসা, হিংসা এবং কুপ্রবৃত্তির অন্যান্য দিকগুলো তাদের মধ্যে নেই। তাই ফেরেশতাদের পক্ষে কেবল ভাল কাজ করাই সম্ভব। আল্লাহর ইবাদত বা সতকর্ম করার জন্য তাকে অসত প্রবৃত্তির সঙ্গে লড়াই করতে হয় না।
কিন্তু মানুষকে দেয়া হয়েছে পাশবিক নানা প্রবৃত্তি এবং এর পাশাপাশি দেয়া হয়েছে আকল বা বিবেক ও জ্ঞান। মানুষ যদি পাশবিক প্রবৃত্তিগুলোকে আকলের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে তাহলেই সে হয় সৃষ্টির সেরা জীব বা পৃথিবীর বুকে আল্লাহর প্রতিনিধি। অর্থাত এ অবস্থায় মানুষের মর্যাদা ফেরেশতার চেয়েও বেশি।
আবার অন্যদিকে, মানুষের বিবেক যদি কুপ্রবৃত্তির কাছে পরাজিত হয় তাহলে তাহলে সে হয়ে পড়ে পশুর চেয়েও অধম। কারণ, পশুকে জ্ঞান ও বিবেক দেয়া হয়নি। তাই বলা যায় বিবেকহীন মানুষ পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট।
এই পবিত্র রমজান মাস হল পশু প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য অনুশীলন করার মাস। সংযমের মাধ্যমে আত্ম-সংশোধন ও আত্ম-উন্নয়নের মাস হল এই পবিত্র রমজান। আরবি রমজান শব্দটি এসেছে ‘রমজ' থেকে। রমজ শব্দের অর্থ হল জ্বালিয়ে দেয়া। এই মাসে হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, পেটুকতা বা ভোজন-বিলাস, কাম, ক্রোধ, খেয়ালিপনা ইত্যাদি বহু মানবীয় দোষ-ত্রুটিকে জ্বালিয়ে দেয়া যায় সংযম বা আত্মনিয়ন্ত্রণের আগুনে। অন্য কথায় এই মাস হল শ্রেষ্ঠ জিহাদের মাস। কারণ, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, নফস বা প্রবৃত্তির (লাগামহীন) চাহিদার সঙ্গে যুদ্ধ করাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিহাদ বা ধর্মযুদ্ধ।
রমজানে কীভাবে আত্ম-সংশোধন ও আত্ম-উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব? কারণ, ইসলামী বর্ণনা অনুযায়ী রমজান মাসে সব শয়তানকে বন্দী রাখা হয়। তাই এই মাসে সংযম চর্চা শয়তানের কুমন্ত্রণার মাধ্যমে বাধাগ্রস্ত হবে না। রোজার দিনে মন চায় একটু ঠাণ্ডা বা শীতল পানীয় পান করে প্রাণটা জুড়াব। কিন্তু বিবেক বলে সংযত হও। ইফতার পর্যন্ত অপেক্ষা কর। তাই বলে ইফতারের সময় হলেই মজার মজার খাবারের ওপর হামলা শুরু করা যাবে না। খেতে হবে পরিমিত মাত্রায়। রমজান মাসে শয়তান বন্দী থাকা সত্ত্বেও আমাদের নামাজে একাগ্রতা থাকে না, থাকে না প্রবৃত্তির লাগামহীন চাহিদাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ। এর কারণ, শয়তান আমাদের মধ্যে যেসব খারাপ স্বভাব বদ্ধমূল করে দিয়েছে তার ধারাবাহিকতা শয়তানের অনুপস্থিতিতেও চলতে থাকে। কঠোর সংকল্প, ধৈর্য, একাগ্রতা, নিষ্ঠা, অধ্যবসায় এবং আল্লাহর সহায়তা ছাড়া এইসব খারাপ স্বভাব থেকে মুক্ত হওয়া সহজ নয়।
মিথ্যা বলা, গীবত করা, পরচর্চা, অন্যকে উপহাস করা, অশালীন কৌতুক বা অশোভনীয় ঠাট্টা-মশকরা করা, অপ্রয়োজনীয় কথা বলা বা অর্থহীন কথা বলা ইত্যাদি মন্দ কাজ রোজাকে বরবাদ করে দেয়। রমজানের পরও যদি কেউ এসব দোষ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে না পারে তাহলে তার এক মাসের রোজা বা সিয়াম সাধনা ব্যর্থ হয়েছে বলেই মনে করতে হবে। বেশিরভাগ মানুষ রোজার নামে আসলে কেবলই শারীরিক ক্ষুধা-তৃষ্ণা সহ্য করে মাত্র।
এর কারণ, আমরা আমাদের দোষগুলোর মূল কারণের চিকিতসা করি না। যেমন, আমরা অনেকেই চিন্তা করি যে আর গীবত করবো না। কিন্তু এই প্রতিজ্ঞা বেশিক্ষণ টেকে না, পরশ্রীকাতরতা ও হিংসাকে মন থেকে দূর না করার কারণে। অন্যের আর্থিক উন্নতি, পদন্নোতি বা সম্মানে আমাদের অনেকেই মনে আহত হই। এই রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য প্রথমেই আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে। দ্বিতীয়ত: বিজ্ঞ আলেমরা কিভাবে এইসব মানসিক রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন তা জানার চেষ্টা করতে হবে। কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিজ্ঞ আলেমরা এইসব রোগের চিকিতসার পথও বাতলে দিয়েছেন। যেমন, যার উন্নতি আমাদের আহত করে এবং যেসব মন্দ ধারণা মনে জেগে ওঠে, আমাদেরকে তার ঠিক বিপরীত আচরণ করতে হবে। মনে মনে বলতে হবে, হে আল্লাহ, তুমি তাকে আরো সম্পদ ও সম্মান দান কর। সে একটা দামী জিনিস বা দামী গাড়ী কিনেছে- হে আল্লাহ, তার এই গাড়ী বা জিনিসকে তুমি দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা কর।
মানুষ যখন (ব্যক্তিগত ক্ষোভের কারণে) অতি ক্রুদ্ধ হয় তখন বিবেক লোপ পায়। তখন তার মুখ দিয়ে অত্যন্ত অশালীন কথা বের হতে পারে। যখন ক্রোধ কমে যায় সে নিজেও তখন অবাক হয় যে কিভাবে এত খারাপ শব্দ উচ্চারণ করা তার পক্ষে সম্ভব হল! আসলে ক্রোধকে জ্ঞান বা বিবেকের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে ওই মুহূর্তে জ্ঞান ও বিবেক কাজ করতে পারেনি। ফলে ক্রোধ হয় বিজয়ী, বিবেক, ক্ষমাশীলতা ও উদারতা হয় পরাজিত।
অপ্রয়োজনীয় কথা এবং অশালীন হাসি-ঠাট্টাও মানুষের কম বুদ্ধি বা জিহ্বার লাগামহীনতার ওপর বিবেকের নিয়ন্ত্রণহীনতার প্রমাণ। চিন্তা-ভাবনাহীন বক্তব্য পাগলের প্রলাপের সমতুল্য। আর এ জন্যই দেখা যায় বুদ্ধিমান এবং জ্ঞানী লোকেরা মেপে মেপে কথা বলেন বা কম কথা বলেন এবং বেফাঁস কোনো মন্তব্য করে বসেন না। যথাসময়ে উচিত কথাটি না বলাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
আমরা যদি রমজান মাসে মনের অসংযত ইচ্ছা ও খেয়ালিপনার লাগামগুলো টেনে ধরে সেগুলোর ওপর বিবেক ও প্রজ্ঞাকে বিজয়ী করতে সক্ষম হই তাহলেই আমাদের রোজা রাখা হবে সার্থক। আমরা যদি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে আল্লাহর সাহায্য কামনা করে নিয়মিত অনুশীলন ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে মন্দ দোষগুলো থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারি তাহলেই পরিণত হব প্রকৃত মানুষে। মানুষের প্রকৃত ফিতরাত বা স্বভাবগুলো এভাবেই অর্জিত হতে পারে। অর্থাত নিজের কামনা-বাসনাগুলোর ওপর বিবেকের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই আমরা ফিরে পেতে পারি আল্লাহর প্রকৃতি প্রতিনিধির মর্যাদা। এ জন্যই রমজান শেষে যে ঈদ আসে তাকে বলা হয় ঈদুল ফিতর বা মানুষের প্রকৃতি তথা ফিতরাতকে ফিরে পাওয়ার উতসব। এই ঈদের আনন্দ কেবল তার জন্যই প্রযোজ্য যে নিজেকে সংশোধন করতে পেরেছে ঠিক যেমন ইফতার করা কেবল রোজাদারের জন্যই শোভনীয়।
মহাপুরুষেরা মহাপুরুষ হতে পেরেছেন সময়মত আকল বা বিবেক ও দূরদৃষ্টির প্রয়োগের মাধ্যমে পশু-প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন বলেই। হযরত ইউসুফ (আ.) যদি বিবেক ও জ্ঞানকে কামনা বাসনার দাসে পরিণত করে জোলায়খার অসত আহবানে সাড়া দিতেন ও সংযমী হতে ব্যর্থ হতেন তাহলে মিশরের জনগণের মুক্তিদাতা হওয়ার গৌরব এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সৌভাগ্য তাঁর জুটত না।
হযরত হোর (র.) অতি উচ্চ মর্যাদা ও শাহাদতের পথ বেছে নিয়ে অমর হয়ে আছেন। তাঁর বিবেক মুহূর্তের মধ্যে এটা বুঝতে পেরেছিল যে ইয়াজিদ বাহিনীর বড় কর্মকর্তার পদে বহাল থেকে পদ-প্রতিপত্তি ও সম্পদের অধিকারী হওয়ার চেয়ে সত্যের পথে ইমাম হুসাইন (আ.)'র সহযোগী হওয়া এবং শহীদ হওয়ার মধ্যেই রয়েছে চিরন্তন সৌভাগ্য আর অতুল সম্মান। তাই ইয়াজিদের দল ত্যাগ করে ইমাম হুসাইন (আ.)'র শিবিরে যোগ দিতে বিলম্ব করেননি তিনি। কিন্তু একই ধরনের প্রলোভনের মুখে পরাজিত হয়েছিল ইবনে জিয়াদ, শিমার এবং ওমর সাদের বিবেক।
একজন ছাত্র তখনই মীরদমাদ তথা "শ্রেষ্ঠ জামাই" উপাধি পেয়েছিলেন যখন তিনি সাফাভি সম্রাটের মেয়েকে রাতের বেলায় একাকী নিজ কক্ষে পেয়েও সংযম রক্ষা করেছিলেন। রাগ করে ঘর থেকে পালিয়ে আসা সেই যুবতীকে আশ্রয় দেয়ার পর মীর দমাদ মোমবাতির আগুনে সারা রাত নিজের আঙ্গুলগুলো রেখে সেগুলো পুড়ে ফেলেছিলেন, আর নিজের প্রবৃত্তিকে বলছিলেন, দেখো, এই সাধারণ আগুন সহ্য করার ক্ষমতাই যখন তোমার নেই তখন দোযখের সেই তীব্র আগুন কিভাবে সহ্য করবে যে আগুনে পাথর গলে যায়?
পরের দিন যখন রাজার প্রহরীরা রাজকন্যাকে মীরদমাদের কক্ষ (মাদ্রাসার হোস্টেল) থেকে উদ্ধার করে মীরদমাদকেও ধরে নিয়ে গেল রাজার কাছে তখন সাফাভি সম্রাট ক্রোধে প্রায় আত্মহারা হয়ে মীরদমাদকে মেরে ফেলেন আর কি! মীরদমাদ বললেন, আপনি নিশ্চিত থাকুন, আপনার মেয়ের কোনো ক্ষতি আমি করিনি।
সম্রাট বললেন, তার প্রমাণ?
বললেন, আমার হাতের এই পুড়ে যাওয়া আঙ্গুলগুলোই তার প্রমাণ।
ঘটনা শুনে রাজা খুশি হলেন এবং সেই মাদ্রাসার ছাত্রটির কাছেই ওই রাজকন্যাকে বিয়ে দিলেন। মীরদমাদ একজন বড় আলেম ও দার্শনিক হিসেবে ইতিহাসে খ্যাতি অর্জন করেছেন আত্মসংযমের মাধ্যমে খোদায়ী অনুগ্রহ লাভের সুবাদেই।
একজন ‘অহানগার' তথা সামান্য কামারও মুহূর্তের মধ্যেই সংযম চর্চা করে আল্লাহর ওলি হওয়ার মর্যাদা অর্জন করেছিলেন। একজন নারীকে অসহায় অবস্থায় বা বাগে পেয়ে কুমতলব হাসিল করতে চেয়েছিল এই কামার। কিন্তু তিনি যখন দেখলেন যে সেই নারী ভয়ে কাঁপছে থর থর করে তখন তাকে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, কেন কাঁপছ? ওই নারী বলেছিল, আল্লাহ তো আমাদের দেখছেন, তাই ভয়ে কাঁপছি। ওই নারীর বিবেক ও জ্ঞানের আলো হঠাত করেই কামারের হৃদয়েও খোদাভীতি এবং বিবেকের আলো জাগিয়ে তুলল। ফলে কামার সেই খোদাভীরু নারীকে নিষ্কৃতি দিলেন। সেই নারী ছিল সাইয়্যেদ বংশের তথা নবী(দ.) বংশের মেয়ে। কামার স্বপ্নে দেখলেন, হযরত মা ফাতিমা (সা.)-কে। তিনি কামারকে বলছেন, তুমি যেহেতু আমার বংশের মেয়ের ইজ্জত রক্ষা করলে তাই তোমার জন্য দোযখের আগুনকে হারাম করা হল। এরপর কামার দেখলেন, তিনি জ্বলন্ত লোহা বা কয়লা কিংবা আগুন ধরলেও বিন্দুমাত্র তাপ অনুভব করেন না। অর্থাত এই দুনিয়াতেই আগুন তার বশীভূত হল। এ ছাড়াও আরো কিছু মহত ও অসাধারণ গুণের অধিকারী হয়েছিলেন তিনি মহান আল্লাহর অনুগ্রহে।
রজব আলী নামের একজন দর্জিও আধ্যাত্মিক উচ্চ মর্যাদা হাসিল করেছিলেন একই ধরনের সংযমের গুণে। এই দর্জি অদৃশ্যের অনেক খবর বা রহস্য দেখতে পেতেন। আয়াতুল্লাহ বাহজাত (র.) খোদাভীতি ও আত্মসংযমের চর্চার কারণেই মানুষের প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করতেন। আর এ জন্যই তিনি চলতে ফিরতে মানুষের দিকে কম তাকাতেন। দৃষ্টিকে সংযত রাখতে দেখা গেছে ইসলামী বিপ্লবের মহান রূপকার ইমাম খোমেনী (র.)-কেও।
নিজেকে তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র মনে করাও অহংকারকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম বা বিনয়ের লক্ষণ। মহাপুরুষরা তাদের অসাধারণ এবং অজস্র অবদানকেও অতি তুচ্ছ মনে করতেন। কারণ, তারা জানতেন বিন্দুমাত্র অহঙ্কারও তাদের সব অর্জনকে বরবাদ করে দিতে পারে। তাই সুখে-দুঃখে সব অবস্থাতেই তারা ছিলেন মহান আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট এবং রাজার ব্যাপক অনুগ্রহ লাভে ধন্য ভিক্ষুকের মতই সদা-কৃতজ্ঞচিত্ত।
হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) এবং তাঁর মহান সঙ্গীদের আত্মত্যাগ মানবজাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন ও সাফল্য। অথচ নবী-নাতনি ও ইমামের বোন হযরত জয়নাব (সালামুল্লাহ আলাইহা) কারবালার সেইসব অকল্পনীয় আত্মত্যাগের ঘটনার পর বিনম্র চিত্তে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে বলেছিলেন: হে আল্লাহ! আমাদের এই ক্ষুদ্র কুরবানি তুমি গ্রহণ কর।
রমজানের রোজার উদ্দেশ্য হল তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন। খোদাভীতি মানুষকে প্রকৃত মানুষে পরিণত করে। বাস্তব জীবনে খোদাভীতির অনেক দৃষ্টান্ত দেয়া যায়। ইরানের উত্তরাঞ্চলে একটি ছোট শহরের এক রূপসীর রূপের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল আশপাশের অনেক অঞ্চলে। এক যুবক সেই রূপসীকে বিয়ে করে। এরপর যুবক হজ্বে যাওয়ার মনস্থির করে। স্ত্রীকে কার জিম্মায় রেখে যাবেন তা নিয়ে দুর্ভাবনায় পড়ে যায় ওই যুবক। অনেকেই নিন্দার ভয়ে বা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে না পারার ভয়ে ওই মহিলাকে আশ্রয়ে রাখতে রাজী হননি। অবশেষে একজন মধ্যবয়সী ধার্মিক ব্যক্তি কিছুটা ভেবে চিন্তে যুবককে বললেন, আমার বাড়ীতে রেখে যেতে পার তোমার স্ত্রীকে। যুবক চলে গেলেন মক্কার দিকে। সে সময় মটরগাড়ির প্রচলন ছিল না। যুবক মাস ছয়েক পরে হজ্ব থেকে ফিরলেন। এসে স্ত্রীকে ফেরত আনতে গেলেন। কিন্তু ওই বাড়ীর মহিলারা যুবকের কাছে তার স্ত্রীকে ফেরত দিতে অস্বীকার করে। যুবক কারণ জানতে চাইলে তারা বলে যার জিম্মায় স্ত্রীকে দিয়ে গেছেন তার নির্দেশ ছাড়া স্ত্রী ফেরত দেয়া যাবে না। যুবক জানতে চাইল বাড়ীর কর্তা এখন কোথায়। তারা বলল, তিনি অনেক দূরে এক ভিন্ন শহরে (তাব্রিজে) রয়েছেন। যুবক সেখানে গিয়ে ওই ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করে তার অনুমতি নিয়ে নিজের স্ত্রীকে ফেরত আনতে সক্ষম হয়। যুবক জানতে চেয়েছিল কেন ওই বাড়ীর মালিক নিজ শহর ছেড়ে অন্য শহরে অবস্থান করছিলেন। ভদ্রলোক জানান যে, তোমার স্ত্রীকে আমার বাড়ীর মহিলাদের কাছে হস্তান্তর করেই ভাবলাম আমার মধ্যে কখনও এমন চিন্তা আসতে পারে যে সবাই যার রূপের তারিফ করে এমন সুন্দরী দেখতে না জানি কেমন, তাই একবার তাকে দেখার ইচ্ছে জাগতে পারে। আর এই ইচ্ছেটাই অবৈধ এবং আমানতের খিয়ানত, তাই সিদ্ধান্ত নিলাম দূরের কোনো শহরে চলে যাব।
শ্রোতা ভাইবোনেরা, আসুন আমরা মহান আল্লাহর অপার রহমত, বরকত ও মাগফিরাতে পরিপূর্ণ পবিত্র রমজান মাসে আমাদের সব অপূর্ণতা, দোষ-ত্রুটি ও পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। আল্লাহ তো জানেন আমরা কেউই ফেরেশতা ও মাসুম নই। কিন্তু আমরা প্রকৃত মানুষের স্বভাব বা ফিতরাতের দিকে ফিরে যেতে চাই যতটা আমাদের পক্ষে সম্ভব।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে প্রকৃত মানুষ হবার সৌভাগ্য দান করুন। আমরা যেন রমজান মাসে সার্বিকভাবে পবিত্র হয়ে ঈদুল ফিতরের সত্যিকারের আনন্দ উপভোগের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারি আপনার মহাকরুণার ওসিলায় সেই সৌভাগ্য আমাদের দান করুন। আমিন। #

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

হাজিদের উদ্দেশ্যে ইরানের ...
গীবত ও চুগলখোরীর ভয়াবহ পরিণাম
মদীনা সনদ
পারিবারিক আচরণ
বায়তুল্লাহ জিয়ারত ও হজ
পবিত্র হেরেম শরিফের মর্যাদা
প্রকৃত রোজা ও সংযমের কিছু ...
মিরাজুন্নবীর (সা.) তাৎপর্য ও ...
হজ্বঃ মানব সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ ...
একমাত্র অবিকৃত ঐশী গ্রন্থ : আল ...

 
user comment